আয়েশা সিদ্দিকা পিপিএম
প্রশ্ন ১: জামিন কি ও কিভাবে জামিন করানো হয়?
উওর : দেশের কারাগারগুলোয় ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দি আটক আছে। তার মাঝে সাজাপ্রাপ্ত আসামির পাশাপাশি বেশির ভাগই আছেন বিচারাধীন মামলার আসামি হিসাবে। আবার মাঝে মধ্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে বিশেষ গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করে প্রচুর পরিমাণ লোক আটক করা হয়। আটককৃত এসব বন্দি এবং তাদের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে সবারই জানতে চাওয়া এরূপ মামলায় জামিন কখন পাওয়া যায়।
সাধারণত জামিন হলো একজন গ্রেপ্তারকৃত বা কারাগারে আটক কোনো ব্যক্তিকে মামলার ধার্য তারিখে বা আদালতের আদেশ মোতাবেক হাজির থাকার শর্তে কোনো জামিনদারের মুচলেকায় ছেড়ে দেয়াকে জামিন বলা হয়।
মামলার যে কোনো পর্যায়ে জামিন চাওয়া যায় এবং আইনজীবী যদি আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারেন তাহলে আদালত অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর করতে পারে।
কারণ অপরাধ সাব্যস্ত বা প্রমাণিত হওয়ার আগে কাউকে অহেতুক আটকে রাখা হচ্ছে ন্যায়বিচারের পরিপন্থি। নির্দোষ কোনো ব্যক্তি আটক থাকলে তার সামাজিক, পারিবারিক, শারীরিক, মানসিক ও নানাবিধ সমস্যা যেমন হতে পারে তেমনি অভিযুক্তের মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে পারে। আবার বিচারের সময় অভিযুক্তকে আদালতে উপস্থিত থাকতে হয়। এসব বিষয় বিবেচনায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬, ৪৯৬, ৪৯৭, ৪৯৮, ৪৯৯, ৫০২ এবং ৫১৪ ধারায় মূলত জামিনের বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছে।
প্রশ্ন ২ : কোন কোন মামলায় আটক হওয়ার সাথে সাথেই জামিন পাওয়া যায়?
উওর : বাংলাদেশে দন্ডবিধি আইনে যেসব আইনি বিধি-বিধান বিদ্যমান আছে তার মধ্যে বেশিরভাগ আইনের ধারার অপরাধ জামিনযোগ্য। সাধারণত জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন পাওয়া আসামির অধিকার। জামিন চাওয়ামাত্র আদালত তাকে জামিন দিতে বাধ্য।
যদি কেউ এরূপ জামিনযোগ্য ধারার অপরাধে গ্রেফতার হয় তবে তবে তার জন্য জামিন অধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়। এমতাবস্থায় তার পক্ষে যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী জামিনের আবেদন করিলেই সে জামিন পাবে।
আবার বেশকিছু আইনের ধারা আছে যা জামিন অযোগ্য। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত বা আসামি জামিন চাইলেই পাওয়ার গ্যারান্টি নাই। জামিন অযোগ্য মামলায় জামিন পাওয়া আদালতের বিবেচনার ওপর নিভর্রশীল।
যখন একটি মামলায় একাধিক ধারায় অভিযোগ আনা হয় যার মধ্যে কিছু ধারা জামিনযোগ্য আর কিছু জামিন অযোগ্য, তখন ওই মামলায় একাধিক আসামি থাকলে যাদের অপরাধ জামিনযোগ্য ধারায়, তারা জামিন চাইলে জামিন পাবেন।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৬ ধারা অনুযায়ী, জামিন যোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে তাহলে সে যদি আদালতের কার্যক্রমের কোনো পর্যায়ে জামানত দিতে প্রস্তুত থাকে তবে সে জামিন পাবে।
তবে শর্ত থাকে যে, আদালত উপযুক্ত মনে করলে তার কাছ থেকে জামানত গ্রহণের পরিবর্তে মুচলেকা সম্পাদন করে মুক্তি দিতে পারে।
প্রশ্ন ৩ : কি কি কারণে আসামী জামিন পেতে পারে এবং বিচারক জামিন দিতে পারেন?
উওর : ফৌজদারী কর্যবিধি ১৮৯৮ এর বিভিন্ন ধারায় আসামীর জামিন পাওয়ার এবং বিচারকের জামিন প্রদান করার বিধান বর্ণিত হয়েছে-
১. ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৬ ধারায় জামিনযোগ্য অপরাধের মামলায় আসামী জামিন পাওয়ার হকদার এবং বিচারকও জামিন বিবেচনা করে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করে থাকেন।
২. ফৌজদারী কর্যবিধির ৪৯৭ ধারামতে জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রেও আসামী বৃদ্ধ, অসুস্থ, মহিলা কিংবা নাবালক হলে জামিন পাওয়ার হকদার এবং বিচারক জামিনের আবেদন বিবেচনা করতে পারেন।
৩. অত্র আইনের ৪৯৮ ধারামতে আসামী আগাম জামিন বা pre-arrest bail/ad-interim bail পেতে পারে।
৪. ১২০ কর্যদিবসের মধ্যে মামলার তদন্ত কাজ সমাপ্ত না হলে ফৌজদারী কর্যবিধি আইনের ১৬৭(৫) ধারা মতে ম্যাজিস্ট্রেট এবং যাবতজীবন ও মৃত্যুদন্ডের মত দন্ডের মামলায় দায়রা জজ আসামীকে জামিন দিতে পারেন।
৫. ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৮০ কার্যদিবসে এবং দায়রা জজ আদালতে ৩৬০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচারকার্য সমাপ্ত না হলে আসামী ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৩৯ (গ) ধারামতে জামিন পেতে পারে।
৬. আপীল মামলা পেন্ডিং থাকা অবস্থায় ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৪২৬ ধারামতে আসামী জামিন পেতে পারে।
৭. সহ আসামী জামিনে মুক্ত থাকলে same footing এর co-accused 7BLT (AD) Page 286, 21 BLD (AD) Page 91
এবং 35 DLR (AD) Page 279 এর সিদ্ধান্ত মতে, আসামী জামিন পেতে পারে এবং আদালত জামিন বিবেচনা করতে পারে।
৮. সর্বোপরি আদালত discretionary ক্ষমতা বলে যেকোন মামলায় আসামীর জামিন মঞ্জুর করার ক্ষমতা রাখেন।
(সংগৃহীত চলবে)
প্রতিবেদক : এআইজি ক্রাইম (ইষ্ট),
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকা।
0 Comments