ই-পেপার

নিউজ স্ক্রল

সোহরাব পাশা

মা, আমি জানি, আমার এ লেখা কখনো

তোমার চোখে পড়বে না ,তবুও

লিখছি তোমাকেই বিনিদ্র এই রাতে

তুমি ছাড়া কেউ তো আর নেই আমার,

বান্দরবানের নির্জন ডেরায় জেগে আছি একা

পাখির মতো মৃত্যু এখানে তুচ্ছ উৎকণ্ঠাহীন

বড়ো দুর্ধর্ষ-ভয়ঙ্কর মাদক পাচারকারীরা

জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে মৃত্যুর জুয়াখেলা,

ওরা অন্যায় করে মৃত্যুকে ভয় পায় না-অর্থের

বিনাশী নেশায় খুন করে -হাসিতে আগুন জ্বলে

বদ্ধমাতাল শুয়োরের মতো বড়ো বিশ্রী স্বভাব;

মা, তোমার ছেলে তো দৃপ্ত শপথ নিয়েছে

দেশ-আর মানুষকে জীবন দিয়ে ভালোবাসার

মা গো, তুমিই বলো সব অরক্ষিত রেখে মৃত্যু ভয়ে

আমি কী ঘুমিয়ে থাকতে পারি?

রাত তিনটা থেকে চারটার মধ্যেই শুরু হবে

এক ভয়ঙ্কর অপারেশন -মৃতখেলা

কালো খৈয়ের মতো ফুটবে গোলাগুলি

গূঢ় গহন আধাঁরে,

এমনও হতে পারে স্নিগ্ধ ভোরের রোদ্দুর

পড়বে আমার রক্তাক্ত মৃত দেহের ওপর

তখন তোমার মেহেদীকে নাম ধরে

ডাকবে না কেউ, প্রিয় বন্ধুরাও বলবে-লাশ।

খুব ভালোবাসা আর মর্যাদায় লাশের দাফন-

কাফন হবে বাঁশঝাড়ের পাশে পারিবারিক গোরস্থানে।

দাফনের আগে তোমার সাহসী ছেলেকে নিয়ে বক্তৃতা হবে,

সাংবাদিক আসবে অনেক ক্যামেরায় ছবি তুলবে।

তবে পত্রিকায় ছাপা হবে না। লাশের ছবি ছাপা হয় না।

অনুসন্ধানী কোনো সাংবাদিক হয়তো তোমার

সাক্ষাৎকার নিতে আসবে, আমার সম্পর্কে প্রশ্ন

করবে, তুমি কী বলবে মা?

পাঁজর ভাঙা দুঃসহ বেদনার কোনো ভাষা কী

খুঁজে পাবে তখন-প্রায় বাকরুদ্ধ তোমার আগুন

বুকে? নাকি শুধু কাঁদবে অবুঝের মতো!

মা, আমি তো জানি, একমাত্র তুমি ছাড়া

সবাই আমকে -লাশ নামেই ডাকবে

কেবল তুমিই বলবে-আমার একমাত্র বুকের ধন

কলিজার টুকরা, সোনার ছেলে মেহেদী বাপ

আমার –কে আমারে মা বলে জড়িয়ে ধরে

হাসবে। দু’দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি এসে

পরদিনই বলবে-মা আজই যেতে হবে;

পুলিশের চাকরি আর থাকার উপায় নেই।

কদিন পরে সবাই ভুলে যাবে শুধু

ভুলবে না তুমি। আগের মতো আর খোঁজ

নেবে না কেউ;

জানবে না কেউ মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে কীভাবে

একজন পুলিশ মেহেদী নিজের জীবন বিপন্ন

করে কতো মানুষের ধন-সম্পদ রক্ষা করেছে

কীভাবে কতো মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে,

এর সবটাই কী চাকরির দায়? মানবতা-

মানবিক মূল্যবোধ কী ছিলো না?

ছিলো-গভীরভাবেই ছিলো দেশ আর মানুষের

জন্যে প্রবল ভালোবাসা।

আমি জানি –

জাম গাছের ছায়ার নিচে ছোট্ট টিনের ঘরের বেড়ায়

পুলিশের গর্বিত পোশাক পরা ছবি হয়ে

থাকবো। মাঝে মাঝে মা যে আঁচল দিয়ে ধুলো

মুছবে আর সেই আঁচল দিয়েই চোখ মুছবে।

ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন :)