সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
সারাবিশ্বে আতঙ্ক আর ধ্বংস ছড়িয়ে করোনাজীবাণু যে দুর্যোগ সৃষ্টি করেছে, তার তুলনীয় কিছু আমাদের জীবনকালে আমরা দেখিনি। পশ্চিমের অনেক সমাজ বিশেষজ্ঞ বলছেন, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের বিপর্যয়ও এমন সর্বগ্রাসী ছিল না। এর আগে ১৯১৮-২০ সালের স্প্যানিশ ফ্লু মহামারীর সাথে আজকের মহামারীর তুলনা চলে। ওই মহামারিতে ভারতের লক্ষ লক্ষ লোকও মারা গিয়েছিল, কিন্তু বাংলাদেশে এর প্রভাব কি পড়েছিল, সে সম্পর্কে আমাদের জানার তেমন কোন উপায় নেই। হয়তো স্প্যানিশ ফ্লু বাংলাদেশে ঢোকেনি। আজকের মতো সক্রিয় ইলেট্রনিক মিডিয়া থাকলে নিশ্চিয় জানা যেত। কিন্তু ইলেট্রনিক মিডিয়া দূরের কথা, টেলিগ্রাফ বাহিত সংবাদও তখন দুষ্প্রাপ্য।
করোনা বা কোভিড মহামারী পশ্চিমের অনেক শক্তিশালী দেশকে কাবু করছে। প্রতিষ্ঠিত বড় বড় কোম্পানিকে দেউলিয়া করে দিয়েছে এবং ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশেও এর অভিশাপ ব্যাপকভাবে পড়েছে। বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিচ্ছে আমাদের জিডিপি দুই শতাংশের নিচে নামবে, যদিও সরকার বলছে সাতের উপরে থাকবে। কিন্তু এ কথা তো সত্য যে, গরীব মানুষ আরো গরীব হবে, অসংখ্য মানুষ চাকরি হারাবে। যে সংকটটা চলছে, তা অনেক কিছুর পরে, মৌলিক ভাবেই মানবিক। এ সংকট থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতেই হবে।
সংকট মোকাবেলার অনেকগুলির পথ একসঙ্গে সক্রিয় হয়েছে, যদিও প্রত্যাশা মতো নয়। এই সংকট মোকাবেলাটা একটা যুদ্ধ এবং সকল যুদ্ধের মতো সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার প্রশ্নটা আছে। দেখা গেছে এই যুদ্ধে সম্মুখসারির যোদ্ধাদের সঙ্গে –তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বা ইতালিতে হোক অথবা বাংলাদেশেই হোক –আছেন ডাক্তার ও নার্স, অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী, জরুরি সেবাদানকারী, মিডিয়া কর্মী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং অবশ্যই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এদের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশবাহিনীর কথাটা আজ একটু আলাদা করে বলবো। তবে তার আগে বলে নেয়া ভাল, যারাই মহামারি মোকাবেলায় লড়ছেন, তাদের সকলেই আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র, তাদের জন্য আমাদের শুভেচ্ছা ও ভালবাসা সবসময়ই থাকবে। আর যারা এই মহামারিতে গরীব মানুষের জীবন জটিল করছেন, এই দুঃসময়ে মেডিকেল সামগ্রী নিয়ে, ত্রাণ বিতরণ নিয়ে দুর্নীতি করছেন, খাদ্য এবং ঔষুধে ভেজাল দিচ্ছেন, তাদের জন্য জমা থাকবে আমাদের ঘৃণা।
বাংলাদেশ পুলিশ মহামারির শুরু থেকেই মাঠে নেমেছে। এবং শুধু যে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজটি তারা করছে, তা না, অনেক অতিরিক্ত, আমাদের অভিজ্ঞতায় নতুন এবং পুলিশের কর্মপরিধির বাইরের বিষয়েও নজর দিতে হচ্ছে। এমনিতে সাধারণত পুলিশকে যে কাজ করতে হয়, যাদের আমরা বলতে পারি রুটিন ওর্য়াক যেমন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ থেকে নিয়ে অপরাধীর বিচার নিশ্চিত করা, সেসব তো তাদের করতে হচ্ছেই, কিন্তু এর বাইরেও, যেমনটা উপরে বললাম, অনেক কাজে তাদের নেমে পড়তে হচ্ছে। একটা ছোটখাটো তালিকা দিলে ব্যাপারটা বুঝা যাবে– করোনা মহামারি শুরুর পর কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াটা একটি বিশাল সমস্যা হয়ে দেখা দেয়, বিশেষ করে লকডাউন শুরু হওয়ার পর। অত্যন্ত দুঃখজনক কিন্তু সত্য একটি ব্যাপারও এই যে, কোন কোন পরিবার এই দায়িত্ব নিতে রাজি হয়নি। এই কাজটি পুলিশের করতে হয়। একইভাবে করোনা আক্রান্ত কোন রোগীর মৃত্যু হলে তার লাশ দাফন নিয়েও জটিলতার সৃষ্টি হয়। নিকট আত্মীয় অনেকেও লাশ বহন করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। এই কাজটিও পুলিশকে করতে হয়। লকডাউনের সময় তৈরী পোশাকসহ অন্যান্য কিছু খাতে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেয়া, ছাঁটাই হওয়া ইত্যাদি অনেক বিষয় নিয়ে অসন্তোষ তৈরী হলে শ্রমিকেরা রাস্তায় নেমেছে, তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে রাস্তা থেকে বাড়িতে পাঠিয়েছেন পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। এই শ্রমিকদের অসন্তোষের বিষয়টি তারা সহৃদয়তার সাথে দেখেছেন। লকডাউন উপেক্ষা করে মানুষ ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে পড়েছে, অনেকে পেটের দায়ে, অনেকে কোন কারণ ছাড়াই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সকল কান্ডজ্ঞানহীন মানুষদের প্রতি কঠোর হওয়ার জন্য পুলিশকে আহবান জানানো হয়েছে। তারপরেও দেখেছি, পুলিশ সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে ঘরবাড়িতে ফেরত পাঠিয়েছে। যারা খাদ্য পায়নি তাদের খাদ্য পাঠিয়েছে। যাদের খাদ্য কেনার পয়সা নেই তাদের বিনামূল্যে তা যোগান দিয়েছে। জেলায় জেলায় দুস্থ মানুষকে পুলিশের তরফ থেকে খাদ্যদ্রব্য ও অন্যান্য সামগ্রী ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। যেসব পরিবারের খাদ্য কেনার সামর্থ্য আছে অথচ লকডাউনের কারণে তা সংগ্রহ করতে সমস্যা হচ্ছে, তারাও পুলিশের সাহায়্য চাইলে খাদ্য সামগ্রী তাদের বাড়ীতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। উদ্বিগ্ন নাগরিকদের টেলিমেডিসিন সেবাও দিচ্ছে পুলিশ, কোভিড আক্রান্ত কাউকে ভাড়া বাসা থেকে বের করে দিলে বাড়িওয়ালাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ভাড়াটিয়াকে তার বাড়িতে তুলে দিয়েছে পুলিশ। অর্থাৎ মানুষ এখন অনেক বিষয়েই পুলিশকে ভরসা মানছে।
দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশে যাওয়ার আমার সুযোগ হয়েছে কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা আমাদের দেশের মানুষের মধ্যেই সবচেয়ে কম দেখেছি। কলম্বো শহরের রাস্তার মোড়ে মাঝে মধ্যে পুলিশ দেখা যায়, কিন্তু যানবাহন চলে নিয়ম মেনে, মানুষ নিয়ম অনুসরণ করে রাস্তা পার হয়। কাঠমুন্ডুতে একজন মহিলা ট্রাফিক পুলিশও পুরো একটা রাস্তার দায়িত্বে থাকলে মানুষ তার নির্দেশ মেনে চলে। আমাদের দেশে আইন ভাঙ্গাটাই যেন নিয়ম। এরকম ক্ষেত্রে পুলিশের জন্য পরিশ্রমটা হয় দ্বিগুণ। কোন কোন সময় তিনগুণ হয়ে যায়। মহামারির সময় পরিশ্রমটা বেড়েছে তারও বেশি। আমাদের পুলিশের সংখ্যা দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে এমনিতেই কম। তার ওপর যখন এই চাপটা পড়ে তখন তাদের পরিশ্রম বাড়ে, ঝুঁকিও বাড়ে।
ঝুঁকিটা কি পরিমান, তা একটু দেখা যাক। ২২ জুন, ২০২০ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী কোভিড ভাইরাসে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যর সংখ্যা ৯১১৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩১ জন পুলিশ সদস্যর। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ডিএমপিতে যারা কাজ করছেন, তারা — ২১২০ জন। সঙ্গীনিরোধে বা কোয়ারান্টিনে আছেন ৯৩৭৫ জন এবং আইসোলেশনে আছেন ৩৪৫০ জন। ভয়াবহ পরিসংখ্যান। তবে অন্ধকারেও একটুখানি আলোর রেখা হচ্ছে সুস্থ হয়ে যাওয়া আক্রান্তদের সংখ্যা — প্রায় ৫৪৩৫ জন। তারপরও এই পরিসংখ্যান গ্রহণ করতে আমাদের কষ্ট হয়। সাধারণত যখন কোন কর্মীবাহিনী, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের ব্যাপক সংখ্যক কর্মী এভাবে আক্রান্ত হন, তখন অন্যদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। তারা আতঙ্কে থাকেন। কিন্তু পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সাহসের সাথে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। তারা ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন না, বা দায়িত্বে অবহেলাও করছেন না। বরং অনেক সহকর্মীর (প্রায় ২০ হাজারের মতো) অনুপস্থিতিতে তাদের কাজগুলো করে যাচ্ছেন।
পুলিশ বাহিনী নিয়ে সাধারণ সময়ে ভালমন্দ অনেক কথা বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সমালোচনা হয়। যখন ছাত্র জনতার সামনে পুলিশ দাড়ায়, নানা কারণে, তখন তাদের সমালোচনা হয় বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমি চার দশকের বেশি সময় শিক্ষকতা করেছি। অনেকবার ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ দেখেছি। আশির দশকে যখন গণতন্ত্রের দাবীতে শিক্ষকরা মিছিল করেছেন, তাতেও পুলিশের হামলা হয়েছে এবং এর সমালোচনা হয়েছে। তাছাড়া পুলিশের কিছু সদস্যর দুর্নীতি এবং অসদাচরণের জন্য পুরো পুলিশ বাহিনীকেই এর দায় নিতে হয়েছে। সব পেশাতেই ভালো মানুষ, মন্দ মানুষ আছে। কিন্তু পুলিশের কাছে যেহেতু মানুষের প্রত্যাশা বেশি, যেরকম প্রত্যাশা আদালতের অথবা শিক্ষকদের কাছেও, সেহেতু কোথাও কোন ত্রুটি হলে সমালোচনা হবে, এটি ধরে নেয়া যায়। এবং আমি মনে করি, যে কোন সংগঠন ও কর্মীদলের জন্য সমালোচনা উপকারি। এতে আরো ভালো করার পথ খুঁেজ পাওয়া যায়। গত এক দশক থেকে এই সমালোচনার একটা বড় প্রকাশ মাধ্যম হচ্ছে সামজিক যোগাযোগ মঞ্চগুলি, বিশেষ করে ফেসবুক। কিন্তু গত তিন মাসে এই ফেসবুকেই আমি অসংখ্যবার পুলিশের প্রশংসা দেখেছি। এই প্রশংসার একটি সারমর্ম হচ্ছে: পুলিশের মানবিকতা। করোনাকালে পুলিশ মানবিকতার প্রচুর দৃষ্টান্ত রেখেছে এবং রেখেই চলছে।
আমি মানুষের সমালোচনার চাইতে প্রশংসা করতে বেশি তৈরি থাকি। একজন শিক্ষক হিসাবে আমি জানি, একজন শিক্ষার্থীর খারাপ ফল করার পেছনে অনেক কারণ থাকে। সব না জেনে সমালোচনা করলে তার প্রতি অন্যায় করা হয়। অথচ, তাকেই যদি যতটুকু সে দিতে পেরেছে তার জন্য একটু প্রশংসা করি তাহলে পরের বার সে ভাল করবেই। পুলিশ বাহিনী আজ যে প্রশংসা পাচ্ছে, তার কারণ মানুষ তাদেরকে কাছে থেকে দেখছে, আপদে বিপদে কাছে পাচ্ছে এবং তাদের কষ্টগুলো, সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারছে। একজন কনস্টেবল যে বেতন পান তা দিয়ে তিনি কি খুব উন্নত জীবন যাপন করতে পারেন? যে পুলিশ সদস্য এই মহামারির সময়েও টানা আট ঘন্টা রাস্তায়, বাজারে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি কি তার সংসারের সব দাবী মেটাতে পারেন? মহামারি যেহেতু আমাদের অসহায় করে ফেলেছে, যারাই আমাদের সহায়তা দিচ্ছেন, তারাই আমাদের কাছে প্রিয় হচ্ছেন। পুলিশ বাহিনী আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এখন মানবিকতার বিচারে আমরা তাদের যেভাবে প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখছি, যদি এই বোঝাবুঝিটা ভবিষ্যতে, মহামারি চলে গেলেও থাকে, তাহলে পুলিশ প্রকৃত সেবাধর্মী একটি বাহিনীতে পরিণত হতে পারবে।
আমার অভিজ্ঞতার একটি ঘটনা এখানে হয়তো প্রাসঙ্গিক হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার কোন এক উপলক্ষে দুই পরষ্পর বিরোধী বড় ছাত্র সংগঠন মিছিল বের করলে একপর্যায়ে তাদের মুখোমুখি সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়। দুটি মিছিল বিপরীত দিক থেকে কলাভবনের দিকে আসছিল। আমি লাইব্রেরি যাওয়ার জন্য বেরিয়ে ছিলাম। দেখতে পেলাম ৫-৬ জন নারী পুলিশ সদস্য দুই দলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেলেন, নেতাদের কাছে অনুরোধ জানালেন সংঘাতে না জড়াতে। “আপনাদের কারো ক্ষতি হলে কে কাঁদবে জানেন?” এক পুলিশ সদস্য ছাত্র নেতাদের জিজ্ঞেস করলেন এবং নিজেই উত্তর দিলেন “কাঁদবে আপনার মা আর বোন। তাদের কাঁদাতে চাইলে মারামারি করতে পারেন। কিন্তু কেন কাঁদাবেন বলুন?”
তারা আরো কিছু বললেন, বোঝালেন এবং অবাক কান্ড, একসময় দুটি মিছিল দুদিকে চলে গেলো। নারী পুলিশ দলটির পাশে আমি ও আরো দুই শিক্ষক ছিলাম। আমি নিশ্চিত আমরা তিন শিক্ষক মিলে এ কাজটা করতে পারতাম না, উপরন্তু, হামলার মাঝখানেই পড়ে যেতে পারতাম। এই ঘটনাটা আমাকে শিখিয়েছিল, ব্যক্তিগত পর্যায়ে একটা আবেদন রাখতে পারলে মানুষ মানুষকে বিশ্বাস করে। সমাজের সেবা মানে ব্যক্তির সেবা। পুলিশ নিজের স্বাস্থ্যের ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমাজের মানুষের সেবা করেছেন এবং করছেন।
২. মহামারি উত্তর বাংলাদেশ নিয়ে আমার উদ্বেগ বাড়ছে। দারিদ্র বাড়লে অনেক সন্তান স্কুল থেকে ঝড়ে পড়বে। তরুণদের মধ্যে হতাশা বাড়বে। মাদকের ব্যবহার বাড়তে পারে, সহিংসতা বাড়তে পারে। তেমনি বাড়বে সামাজিক অনাচার, দুর্নীতি, অনৈতিক কর্মকান্ড। মধ্যবিত্তরা হয়তো বেঁচে থাকবেন, কিন্তু আমার ভয় দরিদ্র মানুষকে নিয়ে। মহামারির সময় যেমন মহামারির পরেও তাদের ভরসার একটা জায়গা হবে পুলিশ। করোনাকালে পুলিশ যে মানবিকতা দেখিয়ে যাচ্ছে তা ধরে রাখলে দরিদ্র মানুষ আবার টিকে থাকার সহায় এবং সাহস পাবে। মাদক ব্যবসায়ী হয় শাস্তি পেয়ে সমাজ থেকে দূরে যাবে অথবা অন্য ব্যবসায় যাবে। শক্তিমানেরা গরীবের উপর অত্যাচার করার সাহস হারাবে। এটি যে রাতারাতি হবে তা নয়, তবে পুলিশ তার বর্তমানের কর্মপদ্ধতি ধরে রাখলে, তাদের ওপর মানুষের আস্থা অটুট থাকলে, তা মোটেও অসম্ভব হবে না। অর্থ্যাৎ মহামারি উত্তর বাংলাদেশকে মানবিক করতে পুলিশের একটি বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। যা মানুষ প্রত্যাশা করে।
৩. কিন্তু এ জন্য পুলিশের প্রতি আমাদেরও দায়িত্ব থাকবে। যে সব পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ সাহায্য দেয়া, যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারগুলোর দায়িত্ব নেয়া হবে রাষ্ট্রের একটা কর্তব্য। এখনই পুলিশ সদস্যদের জন্য ঝুঁকি ভাতা প্রচলন করা হোক। যদি তা হয়ে গিয়ে থাকে তার পরিমাণ বাড়ানো হোক। পুলিশের জনবল বাড়িয়ে বাহিনীর সদস্যদের উপর পড়া দায়িত্বের চাপ কমানো হোক। উপনিবেশী আমলে করা ১৮৬১ সালের একটি আইন অনুযায়ী পুলিশ বাহিনী চলছে। বছর দশেক আগে এটি যুগোপযোগি করার একটি উদ্যোগ নেয়া হয় এবং পরিবর্তনটা কিভাবে করা যায় তা নির্ধারণের জন্য অনেকের সঙ্গে আমার মতামতও চাওয়া হয়। একটি ভাল নতুন আইনের খসড়াও প্রস্তুত হয়, যেটি আইন হিসেবে বৈধতা পেলে পুলিশ একটি সেবামূলক বাহিনীতে পরিণত হবে। তবে মহামারির সময়ে মানুষ দেখেছে কিভাবে পুলিশ বাহিনী মানুষের সেবা দিয়েছে। এখন কাঠামোগত কিছু পরিবর্তন, কিছু নতুন চিন্তার সংযোজন হলে এই সেবার বিষয়টি প্রত্যেক নাগরিকের কাছে অর্থপূর্ণ করে গড়ে তোলা যাবে।
যে সব পুলিশ সদস্য মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, যারা আক্রান্ত হয়েছেন, যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা।
লেখক : সাবেক অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।