মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন
করোনা ভাইরাসের কারণে আগামী মার্চ পর্যন্ত চীন থেকে কাঁচামালের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আর চীন থেকে কাঁচামাল প্রাপ্তি বিঘ্ন হলে এ খাতে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ) এর তথ্য মতো চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার। তাই এ ভাইরাসের প্রভাব আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপরও পড়বে। গত অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী, চীন থেকে বাংলাদেশ ১৩ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা মোট আমদানির ২৬ দশমিক ১ শতাংশ। অন্যদিকে গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ ও প্যাকেজিং প্রডাক্টসের বড় অংশ কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি করা হয়। সুতরাং চীন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা নিরাপদ থাকলেও প্রায় এক মাসের অধিক করোনাভাইরাসে চীন আক্রান্ত হওয়ার কারণে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এমন মত প্রকাশ করে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক করোনাভাইরাসের কারণে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও বাণিজ্যের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ না করার জন্য পরামর্শ প্রদান করেছেন। তারপরও করোনাভাইরাসের প্রভাবে এরই মধ্যে চীন থেকে আমদানি নির্ভর বাংলাদেশের সব রপ্তানি খাতের ওপর প্রভাব পড়েছে।
বিজিএপিএমইএর বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৭৪৪টি সদস্য প্রতিষ্ঠান আছে, ৩৫ টি প্রতিষ্ঠান পণ্য উৎপাদন করে এবং ৯৫ শতাংশ দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে থাকে। এ খাতের উৎপাদিত পণ্য অভ্যন্তরীণ রপ্তানিসহ সরাসরি বিদেশেও রপ্তানি হয়। বিগত অর্থবছরে এ খাতের মোট রপ্তানি ছিল ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো, যার মধ্যে সরাসরি রপ্তানি ছিল ১ বিলিয়নের কাছাকাছি। এ খাতের উৎপাদিত পণ্যে শতাধিক কাঁচামালের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মধ্যে সুতা, কেমিক্যালস, কার্টুন শিল্পের কাঁচামাল, থার্মোপ্লাস্টিক মোল্ডিং কম্পাউন্ড (টিপিএমসি) ইত্যাদিসহ এ শিল্পে ব্যবহূত অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানির জন্য আমরা অনেকাংশেই চীনের ওপর নির্ভরশীল।
পেপার ডকুমেন্টস পেতে দেরি হলে কিংবা কোনো কারণে সমস্যা হলে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দ্রুত পণ্য খালাসের ব্যবস্থা গ্রহণসহ কাঁচামাল সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং রপ্তানিকারকরা যথাসময়ে শিপমেন্ট করতে না পারলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। করোনা ভাইরাসের প্রভাব দীর্ঘায়িত হলে কিংবা আরো ছড়িয়ে পড়লে শিল্পসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে এবং সেখানে প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তা প্রদান করতে হবে। চীনের বর্তমান করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত উদ্ভূত সমস্যা নিরসন হওয়ার পর পরই চীন থেকে আমদানি করা কাঁচামাল খালাসে শুল্ক কর্তৃপক্ষকে অধিক তৎপরতায় কাজ করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
জানা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে মার্চ পর্যন্ত চীন থেকে কাঁচামালের প্রাপ্তি বিঘ্ন বা সংকুচিত হতে পারে। যার প্রভাবে এ খাতের ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ খাতের সম্ভাব্য ক্ষতি পূরণের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ বা শূন্য শতাংশ সুদে ঋণসহায়তা প্রদানের বিষয়ে আগাম চিন্তাভাবনার অনুরোধও করেছেন এ খাতের সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিবেদক : পুলিশ সুপার (অপস্ এন্ড ইন্টেলিজেন্স-২) ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স।
0 Comments