ডা. মেহেদী হাসান
কবে পাওয়া যাবে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকা? এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কোনো টিকা বা প্রতিষেধক নেই। গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা প্রাণঘাতী এই রোগের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে টিকা আবিষ্কারের জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বেশ কিছু টিকা পর্যায়ক্রমে তৈরির পর্যায়েও রয়েছে; তবে সেগুলোর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে দুটি। করোনাভাইরাসের টিকা তৈরিতে বিজ্ঞানীরা তাদের সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ইবোলা ও সার্স ভাইরাসের টিকা তৈরির অভিজ্ঞতা তারা মাথায় রাখছেন। যদি তারা এতে সফল হন, তবে এটাই হবে ইতিহাসে প্রথম দ্রততম সময়ে কোনো ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার ও পরীক্ষার ঘটনা। গবেষকরা অবশ্য মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার গতি কমিয়ে আনা এবং এর ফলে রোগীর যে মারাত্মক শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তা প্রশমণে কার্যকর ওষুধের সন্ধান করছেন। কিন্তু নতুন এই রোগের চিকিৎসায় মানবদেহে কোন ওষুধ প্রয়োগের আগে তার কার্যকারিতা ও রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি বিশ্বব্যাপী ভীতিকর ও অনিশ্চিত এক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। অনেক অভিভাবক জানতে চাইছেন, কবে আসবে কোভিড-১৯ এর টিকা? এই মহামারির সময়ে সন্তানের নিয়মিত টিকা নেওয়ারই বা কি হবে? এখানে আমরা এই সাধারণ প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে চেষ্টা করেছি।
কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও কি আমার সন্তানকে নিয়মিত টিকা দেওয়া উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে কোভিড-১৯ আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপন ব্যাহত করলেও, এই প্রশ্নের এক কথায় উত্তর হলোÑ হ্যাঁ। যেখানে সেবাটি মিলছে সেখান থেকে আপনার সন্তানকে টিকা দেওয়ার চেষ্টা করুন। শিশু ও নবজাতককে সঠিক সময়ে তাদের টিকাগুলো দিয়ে ফেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, ওইসব টিকা তাদের জটিল রোগ থেকে রক্ষা করে। এর অর্থ হলো, আপনার সন্তান যখন অন্য শিশুদের সঙ্গে মেলামেশা করতে যাবে, তখন কিছু রোগের সংক্রমণ থেকে তারা সুরক্ষিত থাকবে।
কোথা থেকে টিকা নেবেন আপনি যদি তা না জানেন অথবা টিকাদান কার্যক্রম যদি চালু না থাকে, তবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর স্মরণাপন্ন হোন। কারণ, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি প্রতিদিন পরিবর্তন হচ্ছে এবং আপনি দেখবেন, আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সেবা প্রদান পদ্ধতিও বদলে ফেলছেন। আপনার শিশুর নির্ধারিত পরবর্তী টিকা নিতে আপনি যদি ক্লিনিকে যেতে না পারেন; তবে এই সেবা চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার চেষ্টা করার জন্য কোথাও একটি নোট লিখে রাখুন।
করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি? অন্যান্য রোগ ও টিকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে এটি আমাদের কী শিক্ষা দিতে পারে?
টিকা কতটা মূল্যবান তা এই করোনাভাইরাসের মহামারি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। মহামারির এই মহামারি পরিস্থিতি আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে, যখন কোনো রোগের টিকা থাকে তখন অবশ্যই শিশু ও আমাদের নিজেদের যথা সময়ে সেই টিকা নেওয়া উচিত। আর টিকা নেওয়া না থাকলেই মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং এর পরিণতি হয় ভয়াবহ। যেমন, হাম ও অন্য কিছু রোগ এখনো মানুষের জন্য ঝুকিপূর্ণ। কিন্তু আমরা খুবই ভাগ্যবান যে, এসব রোগের টিকা রয়েছে।
টিকা আমাদের শরীরে একটি জীবাণুকে (ব্যাকটেরিয়া অথবা ভাইরাস) নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যমে তার সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় করতে সহায়তা করে। যতক্ষণ ওই জীবাণু নিষ্ক্রিয় থাকে ততক্ষণ সেটি আমাদের অসুস্থ করতে পারে না। মোট কথা, টিকা আমাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করে। এরপর কোন জীবাণু যদি আবার আপনাকে সংক্রমণ করে, তবে তাতে ভয়ের কিছু নেই, কেননা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জানে কীভাবে তার সাথে যুদ্ধ করতে হবে।
লেখক : চিকিৎসক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।