ই-পেপার

এ কে এম আসিফ উদ দৌলা

কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ধারণাটি খুব নতুন। কিন্তু তার পরও দ্রুত গবেষণা আর পরীক্ষার কারণে দ্রুতই হচ্ছে এর অগ্রযাত্রা। এটি এখনো খুব শৈশব অবস্থায় রয়েছে। আমাদের বর্তমান কম্পিউটার প্রযুক্তি আশির দশকে যেমন বড় বড় মেশিন আর দৈত্যাকার রুমের মধ্যে আটকা থাকত, বর্তমানে কোয়ান্টাম কম্পিউটার এখন সেই অবস্থায় রয়েছে। প্রচলিত ধারণার কম্পিউটার এর চেয়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটার এর মেকানিজম সম্পূর্ণ আলাদা। এটি অত্যন্ত জটিল আর নিয়ন্ত্রিত হয় কোয়ান্টাম মেকানিক্স দ্বারা। কিন্তু আশির দশকের বিশাল বিশাল কম্পিউটার আজ আমাদের হাতের মুঠোয়। ১৯৬৯ সালে যে কম্পিউটার ব্যবহার করে মানুষ চাঁদে গিয়েছিল তার চেয়ে আরও অনেক বেশি ক্ষমতার মোবাইল আমরা ফেইসবুক চালানোর জন্যে ব্যবহার করি। বিজ্ঞান এরকম সবসময়ই উন্নত হয়ে আসছে আর আগামীতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলেই ধরে নেয়া যায়। আর তাই বলা যায় কোয়ান্টাম কম্পিউটিংও দিনদিন আরও উন্নত হবে। আর এটাই একটি আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র, চায়না ও আরও অনেক উন্নত দেশ এবং গুগোল, মাইক্রোসফট-এর মতো বড় বড় কোম্পানি বিশাল ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে কাজ-গবেষণা করে চলছে। আর ১০ বছরের মধ্যেই কোয়ান্টাম কম্পিউটার খুব শক্তিশালী আর ক্ষমতাধর হয়ে উঠবে বলে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন। আর এর সঙ্গেই আরেকটি নাম চলে আসছে কোয়ান্টাম হ্যাকিং।

কোয়ান্টাম হ্যাকিং : প্রচলিত কম্পিউটার কাজ করে বিট নিয়ে। আর কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করে কিউবিট নামের প্রযুক্তি। এটি প্রচলিত কম্পিউটিং-এর ধারণার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। আমাদের বর্তমান বিশ্বের ইলেক্ট্রনিক সিস্টেম-এর সিকিউরিটি মূলত নির্ভর করে এক্সিপশন আর ডিক্রিপশন এর উপর। এটি দুটি পদ্বতিতে করা হয়ে থাকে। সিমেট্রিক এবং এসিমেট্রিক কি এনক্রিপশন-এর মাধ্যমে। এই প্রযুক্তির ভিত্তি হচ্ছে বিশাল অঙ্কের মৌলিক সংখ্যার ভিত্তিতে দিয়ে তৈরি করা এলগরিদম, যা বর্তমান যুগের সুপার কম্পিউটার এরও হ্যাক করতে হাজার হাজার বছর লেগে যাবে। তাই খুব নিরাপদভাবেই আমরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছি সব জায়গায়। মেইল, সোশ্যাল মিডিয়া, ডাটাবেস ইত্যাদি সব জায়গায় পাসওয়ার্ড সংরক্ষণের জন্যে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই সুরক্ষিত পাসওয়ার্ডই মাত্র কয়েক মিনিট বা সেকেন্ডেই ভেঙে ফেলা সম্ভব কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার-এর বিশেষত্বই হচ্ছে এটি অনেক বড় ডাটা নিয়ে খুব দ্রুত কাজ করতে পারে। বর্তমানে মেইল, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি যোগাযোগ মাধ্যম P2P এনক্রিপশন ব্যবহার করে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার এই এনক্রিপশন ও ভেঙে ফেলতে পারবে। অর্থাৎ বর্তমানে যে গতিতে কোয়ান্টাম কম্পিউটার-এর গবেষণা আগাচ্ছে আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যেই এই প্রযুক্তি এমন জায়গায় পৌঁছাবে যে এখনকার সময়ের যে কোনো সিকিউরিটি মেথড অল্প সময়ের মধ্যে কোয়ান্টাম কম্পিউটার ভেঙে ফেলবে। বর্তমানে পাসওয়ার্ড সংরক্ষণের জন্যে ১২৮ বিট বা ২৫৬ বিট-এর কি ব্যবহার করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে এই প্রযুক্তি দিয়ে যদি ২০৪৮ বিটের কি ও ব্যবহার করা হয় ১০ বছর পরের কোয়ান্টাম কম্পিউটার মাত্র আট ঘণ্টার মধ্যে এই পাসওয়ার্ড ভেঙে ফেলতে পারবে। শুধু তাই না, বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আলোচিত প্রযুক্তি ক্রিপ্টোকারেন্সিও চলে এই এনক্রিপশন আর ডিক্রিপশন-এর উপর ভিত্তি করে। এই ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রযুক্তিও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যেতে পারে অদূর ভবিষ্যতে।

তাহলে কি ভেঙে পড়বে ভবিষ্যৎ বিশ্বের সাইবার নিরাপত্তা। না, বিজ্ঞানে শেষ বলতে কিছু নেই। যত নতুন সমস্যা আসবে তত সমাধানও আসবে। ইতিমধ্যেই বিজ্ঞানী আর গবেষকরা নতুন ধরনের সিকিউরিটি নিয়ে গবেষণা করছেন। কোয়ান্টাম কম্পিউটার-এর ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে বর্তমানের সাইবার নিরাপত্তা যে নাজেহাল হবে এটা বিজ্ঞানীরা আরও আগেই বুঝতে পেরেছেন। তাই তারা কাজ করে যাচ্ছেন নতুন প্রযুক্তির এনক্রিপশন নিয়ে। বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান ইনভেস্ট করছে এই সব গবেষণায়। দেখা যাক ভবিষ্যৎ কি বলে। সময়ই বলে দেবে সব।

লেখক : সহকারী পরিচালক, র‌্যাব-১৩।

ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন :)

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x