শামস্ নূর
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সমর্থন করেন অধিকাংশ মার্কিনী: জরিপ
যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ নাগরিকেরই স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন রয়েছে বলে এক সাম্প্রতিক অনলাইন জরিপে দেখা গেছে। আরব আমেরিকান ইন্সটিটিউট (এএআই) পরিচালিত এই জরিপে এক হাজারের অধিক মার্কিন নাগরিক অংশগ্রহণ করেন। সাম্প্রতিক প্রকাশিত এ জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষা ও সমর্থনে রিপাবলিকানদের তুলনায় মার্কিন ডেমোক্র্যোটদের সংখ্যা বেশি। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মার্কিনী মনে করেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয়ই সমান অধিকার পাওয়ার দাবি রাখে। যাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ ডেমোক্র্যোট এবং ৬৭ শতাংশ রিপাবলিকান।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সহিংসতায় দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের ক্ষেত্রে প্রায় অর্ধেক অংশগ্রহণকারী স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠণের পক্ষে মত দিয়েছেন। মাত্র ১২ শতাংশ এতে রাজি হয়নি। এ বিষয়ে এএআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট জেমস জোগবি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াগুলোকে ফিলিস্তিনিদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ফিলিস্তিন পন্থী বক্তাদের কথা বলার জন্য যথেষ্ট সুযোগ দিচ্ছে কংগ্রেস। এমনকি অধিকাংশ ইসরায়েলিপন্থী ডেমোক্র্যাটরা হতাশ হচ্ছেন। কারণ, তাদের একটি নতুন প্রজন্ম এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে বর্তমানে ডেমোক্র্যাটরা ইসরায়েলের থেকেও ফিলিস্তিনিদের বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে, যোগ করেন তিনি।
পরমাণু অস্ত্রের গোপন তথ্য ফাঁস করে দিল মার্কিন সেনারা
পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন নিয়ে গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন মার্কিন সেনারা। অসাবধানতাবশত ইউরোপের ঠিক কোথায় আমেরিকার পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে তা জানিয়ে দিয়েছেন তারা। ডয়চে ভেলে’র এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, মার্কিন কৌশলগত পরমাণু অস্ত্রের গোপনীয়তা রক্ষা এবং প্রহরার দায়িত্বে ছিলেন এসব সেনারা। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে মার্কিন বিমান বাহিনী।
একটি অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট বেলিংক্যাট দুজন সেনার বরাতে এ খবর দিয়ে আরো বলা হয়েছে, ইউরোপে মোতায়েন মার্কিন পরমাণু অস্ত্রের গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন সেনা এর জটিল বিষয়গুলো জানা ও বোঝার চেষ্টা করেছেন। পরবর্তীতে তা তারা ইন্টারনেটে আপলোড করেন। এ কাজে কয়েকটি অ্যাপ ব্যবহার করেছেন মার্কিন সেনারা।
অনুসন্ধানী ওয়েবসাইটটি এ ঘটনা তদন্ত করে বের করতে সক্ষম হয়েছে যে, ইউরোপের ছয়টি ঘাঁটিতে যে সমস্ত মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ ইউরোপ-আমেরিকার পরমাণু অস্ত্রের গোপন তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সাল থেকে ইউরোপে মোতায়েন মার্কিন পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত বিভিন্ন রকমের গোপন তথ্য আপলোড করা শুরু হয়। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে তা জনসাধারণের জন্য সহজলভ্য হয়ে ওঠে।
শিরচ্ছেদের আগ মুহূর্তে
সৌদিতে ছেলের খুনিকে ক্ষমা বাবার
সাড়ে চার বছর আগে সৌদি আরবের তাবুক শহরে খুন হন সেনাসদস্য আব্দুল্লাহ আল রশিদি। খুনের পরপরই গ্রেপ্তার করা হয় খুনি বন্দর আল-আতয়াবিকে। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে শরিয়াহ বিধান মোতাবেক মৃত্যুদ- হয় আল-আতয়াবির। সম্প্রতি শিরচ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদ- কার্যকরের দিন। সকাল সকালই শিরচ্ছেদের সব প্রস্তুতি শেষ। কয়েক মিনিটের মধ্যেই জল্লাদের তরবারি নেমে আসবে আল-আতয়াবির ওপর। কিন্তু ঠিক তখনই সেখানে হাজির হয়ে ছেলের খুনিকে ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন রশিদির বাবা আওয়াদ সুলেইমান আল-আমরানি। শুধু তাই নয়, দেশটির প্রথা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ বাবদ কোনো অর্থও নেননি ওই বাবা।
আরব নিউজের এক খবরে বলা হয়েছে, ঘটনার পরপরই সুলেইমান আল-আমরানির মহৎ এই দৃষ্টান্তের কথা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সবাই প্রশংসা করেন এই বাবার। তারা বলেন, মহানবী মুহাম্মদ (সা:)-এর শিক্ষার প্রতিফলন দেখালেন সুলেইমান আল-আমরানি। জেদ্দার এক আইনজীবী ওয়ালিদ খালেদ দারাজ বলেন, সমাজের শান্তি বজায় রাখতে শরিয়াহ বিধানে শাস্তি হিসেবে যেমন মৃত্যুদ- দেওয়ার কথা বলা হয়েছে তেমনি সুযোগ থাকলে দোষীকে ক্ষমা করে দেওয়ার কথাও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ইসলামে। সুলেইমান আল-আমরানি সেটাই দেখিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি ক্ষতিপূরণ না নিয়ে আরও মহত্বের পরিচয় দিয়েছেন। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরাদীকে ক্ষমা করা হয় অর্থের বিনিময়ে।
আরব নিউজ জানিয়েছে, সুলেইমান আল-আমরানি ক্ষতিপূরণ না নিলেও আল-আতয়াবি ও তার পরিবারকে কয়েকটি শর্ত দিয়েছেন। বলেছেন, ক্ষমা করা হয়েছে বলে আল-আতয়াবি ও তার পরিবার কোনো উদযাপন যেন না করে। এছাড়া ক্ষতিপূরণের অর্থ সংগ্রহণের নামেও যেন কারও কাছে কোনো সহায়তা না চায়। দেশটির আইন অনুযায়ী এই শর্ত ভাঙলে ক্ষমাকারী অপরাধীকে ফের বিচারের মুখে দাঁড় করাতে পারেন এবং আবার সেই একই সাজাই হতে পারে। তবে দ-িত বন্দর আল-আতয়াবি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তিনি অবশ্যই এই শর্ত মেনে চলবেন।
সৌদি আরবে শরিয়াহ আইনে যেসব সাজা হয় সেসব ক্ষেত্রে এমন ক্ষমা দৃষ্টান্ত খুবই বিরল। সাম্প্রতিক সময়ের ইতিহাসে ২০১৭ সালে শিরচ্ছেদের মাত্র কয়েক মিনিট আগে ছেলের হত্যাকারীকে ক্ষমা করেছিলেন আরেক বাবা। সেবারের ঘটনাটি ছিল খামিশ মুসহাইত প্রদেশে। মানবিক ও উদার ওই ঘটনার জন্য তখন সবাই সেই বাবার প্রশংসা করেছিলেন।
লেখক : অনুবাদক
0 Comments