ওয়াহিদুল ইসলাম
নাগরিক সেবা কেন্দ্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
ট্রাফিক পুলিশের সেবা অতি দ্রুত মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেয়া। ট্রাফিক পুলিশের Behavior/Attitude জনগণের কাক্সিক্ষত মাত্রায় আনয়ন। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের Sense of Priority এবং Sense of Humanity জাগ্রত করা। নাগরিক সেবা কেন্দ্র ট্রাফিক পুলিশের একটি বিট পুলিশিং উদ্যোগ/কার্যক্রম। বর্তমানে ডিএমপির চার সহ্রাধিক (৪১৪০ জন) ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে অধিকতর পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বিট পুলিশিংয়ের মূল স্রোতে সম্পৃক্ত করা। বক্সগুলোকে একটি স্থায়ী রূপে আনয়ন। জরুরি পরিস্থিতিতে প্রতিটি ট্রাফিক বক্স Command Centre হিসেবে ব্যবহার।
নাগরিক সেবা কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা
ডিএমপির প্রতিটি ইন্টারসেকশনে একটি করে ট্রাফিক বক্স রয়েছে। ইন্টারসেকশন কেন্দ্রিক যেকোনো দুর্ঘটনায় ট্রাফিক পুলিশ-ই First Responder। তার দৃষ্টি সীমার মধ্যে কোনো ঘটনা- দুর্ঘটনা ঘটলে প্রচলিত ধরন হচ্ছে থানা-পুলিশকে জানানোর পর থানা পুলিশ এসে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যার ফলে জনগণকে দ্রুত সেবা প্রদান করা সম্ভব হয়না। উক্ত ইন্টারসেকশন এলাকার মধ্যে অন্তত একজন First Aid/ Fire Fighting প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা/সদস্য কর্তব্যরত থাকলে এবং বক্সে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকলে দ্রুত সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।
নাগরিক সেবা কেন্দ্রের সমন্বয় সংস্থাসমূহ
Dhaka Metropolitan Police, Bangladesh Red Crescent Society, International Committee of Red Cross (ICRC), Fire Service and Civil Defence, Dhaka City Corporation (North/South), Hospital/Clinic Authority.
নাগরিক সেবা কেন্দ্রের সেবাসমূহ
First Aid সেবাসমূহ, Rescue and Recovery, Choking, Cardio Pulmonary Resuscitation (CPR), Shock & prevention of shock, Bleeding & its management, Wounds & dressing of wounds, Fit, Fainting & Unconsciousness, Transportation of Casualty.
নাগরিক সেবা কেন্দ্রের সেবাসমূহ
Fire Extinguisher ব্যবস্থা। কোনো গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডারে অথবা দুস্কৃতিকারী কর্তৃক রাস্তায় অনাকাক্সিক্ষত কোনো অগ্নিদুর্ঘটনা হলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মুমূর্ষু রোগীকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে প্রেরণ। অজ্ঞান বা মলম পার্টি কর্তৃক শিকার হয়ে অথবা যেকোনো দুর্ঘটনায় আহত হলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত হাসপাতালে প্রেরণ করা। নিরাপদ গমনাগমনে পথ নির্দেশনা (Digital Display)। জনগণের মধ্যে ট্রাফিক সচেতনতা বৃদ্ধি। সুপেয় পানীয় জলের ব্যবস্থা
নাগরিক সেবা কেন্দ্র কার্যকর করার উপায়
প্রতিটি ট্রাফিক বক্সকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। অফিসারদের স্বল্পমেয়াদি ফাস্ট এইড/ফায়ার ফাইটিং মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা। প্রতিটি বক্সে একটি করে ফাস্ট এইড বক্স। প্রতিটি বক্সে একটি করে ফায়ার এক্সটিংগুইসার। প্রতিটি বক্সে একটি স্টেচার। বক্সে সুপেয় পানীয় জলের ব্যবস্থা। বক্সে সেবা রেজিস্টার সংরক্ষণ। মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবস্থা। ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন।
উপসংহার
- ট্রাফিক শৃঙ্খলা একটি জাতির সভ্যতার প্রতীক।
- ট্রাফিক বিভাগের প্রতিটি সদস্য সকল প্রতিকূলতার মধ্যে অহর্নিশ পরিশ্রম করেও জনগণের পুরোপুরি সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেনি।
- সুনির্দিষ্ট কোনো গাইড লাইন না থাকার কারণে ট্রাফিক পুলিশ প্রতিনিয়ত উপরোক্ত সেবাসমূহ দেয়া সত্ত্বেও তার সাফল্যের খাতায় এই বিষয়গুলো সন্নিবেশিত হচ্ছে না।
- ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক ট্রাফিক পুলিশের সকল সদস্যকে (মোট জনবলের প্রায় ১২.২০%) পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাদারিত্বের সাথে উক্ত সেবা প্রদান করে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করা সম্ভব।
- “মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার” এ মর্মবাণীকে ধারণ করে জনগণের সেবা প্রদানই হবে ট্রাফিক পুলিশের মূল দায়িত্ব।
Man for Mankind
ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও নাগরিক সেবা কেন্দ্রের ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশনাবলীঃ
ট্রাফিক পুলিশ বক্সটির প্রয়োজনীয় মালামাল সমূহ সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা। সেবা রেজিস্টারটি প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করা।
সেবা রেজিস্টারের প্রতিটি কলাম সঠিকভাবে পূরণ করা। ভিকটিম বা দুর্ঘটনা কবলিত ব্যক্তিকে কোনোভাবেই বক্সের ভিতরে আনা যাবে না। দুর্ঘটনা হলে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সেবা প্রদান করা। ভিকটিমকে উদ্ধার করার জন্য ডেল্টা-৩ কন্ট্রোলরুমের মাধ্যমে থানার পুলিশকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার জন্য মেসেজ দেয়া। ভিকটিমকে প্রাথমিক সেবা দিয়ে নিকটস্থ হাসপাতাল/ক্লিনিকে প্রেরণ করা। ভিকটিমের ছবি, নাম, ঠিকানা সংরক্ষণ, ঘটনার বিবরণসহ পরবর্তীতে সেবা রেজিস্টারে এন্ট্রি দেয়া এবং ভিকটিমের খোঁজ খবর নেয়া। ভিকটিমকে হাসপাতালে প্রেরণকারী পুলিশ সদস্যের নাম, বিপি নম্বর, মোবাইল নম্বর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিতকরণ। প্রতিটি ঘটনার একটি সফলতার চিত্র তুলে ধরা। বদলিজনিত কারণে দায়িত্বরত অফিসারগণ অন্যত্র চলে গেলে পরবর্তী সেবাদানকৃত অফিসারকে মালামালসহ রেজিস্টারটি সঠিকভাবে বুঝিয়ে দেয়া।
সম্পূর্ণ সেবার মানসিকতা নিয়ে এ সেবা কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত।
লেখক : উপ-পুলিশ কমিশনার(ট্রাফিক-মতিঝিল বিভাগ)
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ঢাকা