মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মহামারিজনিত কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলে সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনাভাইরাসজনিত কারণে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ সময় অর্থনৈতিক অভিঘাত থেকে উত্তরণে ১৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে সরকার। করোনায় বিভিন্ন বন্ধুপ্রতিম দেশ ও সংস্থাকে বাংলাদেশের পাশেও পেয়েছে সরকার। করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগীদের পাশে পেয়েছে। মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ ও প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট সহায়তা ঋণ পেয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা পাবে। বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সহায়তা পাওয়া সহজ হয়েছে। বাংলাদেশকে বিপুল বৈদেশিক সহায়তা দেওয়ার জন্য সব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোকে সরকার ধন্যবাদও দিয়েছে।
মহামারির সময়ও সরকার অর্থনীতি গতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছে। যদিও এর নেতিবাচক প্রভাব আমাদের অর্থনীতির ওপর পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার মানুষের স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও জীবিকার সুযোগ অব্যাহত রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সময়োচিত নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কোভিড-১৯ এ সৃষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলা করতে সরকার আগেই বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনা থেকে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা দেওয়া, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বৃদ্ধি ও বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিয়েছে। সরকার আশুকরণীয়, স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের অন্যতম লক্ষ্য পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণকে সুরক্ষা দেয়া। সব শ্রেণির মানুষ যাতে সুবিধা পায় সেই ব্যবস্থা করা। সব পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়নের কাজ সরকার গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে।
সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজগুলো অত্যন্ত সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলেছে। ২৩ প্যাকেজের এক লাখ ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকার বিপরীতে মে ২১ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হার ৭১ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ পর্যন্ত ছয় কোটি পাঁচ লাখ ব্যক্তি এবং এক লাখ ছয় হাজার প্রতিষ্ঠান সরকারের এসব উদ্যোগের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে। প্যাকেজ কার্যক্রম থাকায় এ সংখ্যা সামনে আরও বাড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবাখাতের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ৪১ হাজার কোটি টাকা স্বল্পসুদে ঋণসুবিধা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গত মে পর্যন্ত তিন হাজার ২৮৮ হাজার প্রতিষ্ঠানকে ৩২ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। কুটির ও মাঝারি শিল্পের মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিলের মধ্যে মে মাস পর্যন্ত ৯৬ হাজার ৬৭৫টি এসএমই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৪ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা স্বল্পসুদে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। প্রাপ্তদের মধ্যে নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন পাঁচ হাজার ২৫৩ জন। করোনা আক্রান্তদের সেবায় সরাসরি নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের দুই মাসের সমান বেতনের সমপরিমাণ বিশেষ সম্মানী দেয়া হয়েছে। এতে ২০ হাজার ৫০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে ১০৪ কোটি টাকা সম্মানী দেওয়া হয়েছে। করোনা সেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত বিভিন্ন সেক্টরের কর্মচারীদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী ১৭৩ জনের পরিবারকে ৬৯ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঋণের বিপরীতে এক হাজার ২৯০ কোটি টাকা সুদ ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। অতীতে দেশে কখনো সুদ ভর্তুকি দেয়া হয়নি। এতে ৭২ লাখ ৮০ হাজার ঋণ গ্রহিতা সুবিধা পেয়েছেন।
বাস্তবতার নিরিখে সরকার বিধিনিষেধ, কঠোর বিধি-নিষেধ দিয়েছে এবং সময়ের প্রয়োজনে শিথিল করেছে মানুষের চলাচল, বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যক্রম। যদিও সরকারের ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলো মানুষের ব্যক্তিগত ও অথনৈতিক কার্যক্রম সচল রেখেছে অনেকটাই। অনলাইন করিডোরে সাধারণ মানুষ অনেকটা অভ্যস্থ হয়ে গেছে। বাণিজ্য ও ভূমি করের মতো এক সময়ে দুবোর্ধ্য বিষয় এখন অনেকটা সহজবোধ্য হিসেবে বিবেচিত।
ই-কমার্স নীতিমালা বাস্তবায়ন
ই-কমার্সে শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি আনতে ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১’ জারি করেছে সরকার। নির্দেশিকায় একই শহরের ভেতরে পাঁচ দিন এবং ভিন্ন শহরে ১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি নিশ্চিত করতে হবে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো সময় মতো পণ্য ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হলে সাত দিনের মধ্যে মূল্য ফেরত দেওয়ার বিধানও রেখেছে মন্ত্রণালয়। ৫ জুলাই এ নির্দেশিকা জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দেশে খুব দ্রুতই ই-কমাসের প্রসার হচ্ছে। এই ব্যবসাকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনার কোনো বিকল্প নেই। সরকার ক্ষেত্রটাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়ার ফলে নির্দেশিকা প্রণয়ন হয়েছে। এটা ভোক্তাদের যেমন নিরাপত্তা দেবে, ঠিক একইভাবে যারা স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবে বাণিজ্য পরিচালনা করতে চায়, তাদেরও এটা সাহায্য করবে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শিত পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য বা পণ্যসামগ্রী ডেলিভারিম্যান বা ডেলিভারি সংস্থার কাছে হস্তান্তর করতে হবে এবং ক্রেতাকে তা টেলিফোন, ই-মেইল বা এসএমএস এর মাধ্যমে জানাতে হবে। এ ক্ষেত্রে ডেলিভারি সংস্থা বা মার্কেটপ্লেসে ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারে। পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করা হয়ে থাকলে এবং ক্রেতা ও বিক্রেতা একই শহরে অবস্থান করলে ক্রয়াদেশ গ্রহণের পরবর্তী সর্বোচ্চ পাঁচ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি করতে হবে। অন্যদিকে ক্রেতা ও বিক্রেতা ভিন্ন শহরে বা গ্রাামে অবস্থিত হলে সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দিতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্ষেত্রে ডেলিভারির সময় আরও সংক্ষিপ্ত হবে এবং ক্রেতাকে তা ক্রয়াদেশ গ্রহণের সময় সুস্পষ্টভাবে অবহিত করতে হবে।
কোনো একটি ক্রয়াদেশে একাধিক পণ্য থাকলে আলাদা আলাদা পণ্যের জন্য সাধারণত আলাদা আলাদা ডেলিভারি চার্জ আরোপ করা যাবে না। তবে মার্কেটপ্লেসে পণ্যে আলাদা আলাদা ডেলিভারি করা হলে আলাদা আলাদা চার্জ গ্রহণ করা যাবে। এ ক্ষেত্রে ক্রেতাকে ক্রয়াদেশ নিশ্চিত করার সময় বা ইনভয়েসে আগেই অবহিত করতে হবে। পণ্য বিক্রয় ও সরবরাহের ক্ষেত্রে মার্কেটপ্লেসে প্রদর্শিত পণ্যের মান ও সত্যতা মার্কেটপ্লেসের স্বত্বাধিকারীকে নিশ্চিত করতে হবে। তবে বিক্রেতা বা মার্চেন্টের সঙ্গে ভিন্নতর চুক্তি থাকলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। সময়মতো ডেলিভারি দেওয়া এবং মালামালের সুরক্ষার জন্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান বা ডেলিভারি পারসনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় চুক্তি সম্পাদন করবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ইন্স্যুরেন্স ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যেতে পারে। পণ্য সরবরাহের সময় মুদ্রিত বিল প্রদান দিতে হবে, যাতে প্রদেয় বা প্রদত্ত ভ্যাট ও আয়কর (যদি থাকে) উল্লেখ থাকতে হবে। যেসব পণ্যের ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি আছে, তার জন্য ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি পিরিয়ড ও সেবা প্রাপ্তির স্থান ও যোগাযোগের বিস্তারিত ঠিকানাসহ অন্যান্য শর্ত সংবলিত কার্ড বা ডিজিটাল কার্ড পণ্যের সঙ্গে সরবরাহ করতে হবে। পচনশীল দ্রব্য দ্রুততম সময়ে ডেলিভারি দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ডেলিভারির সময় যাতে পণ্যের কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য মার্কেটপ্লেস কর্তৃপক্ষ যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ই-পেমেন্ট চালু
১ জুলাই থেকে রাজস্ব আদায়ে দেশের সব কাস্টমস হাউস ও স্টেশনে একযোগে চালু হচ্ছে ই-পেমেন্ট (ইলেকট্রনিক পেমেন্ট) সিস্টেম। প্রাথমিকভাবে এ পদ্ধতি দেশের সব কাস্টমস হাউস ও স্টেশনে একযোগে চালু হয়েছে। দ্রুত আমদানি-রপ্তানি, পণ্য খালাস ও বোঝাইয়ের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে সরকার এ পদ্ধতি চালু করছে। এটি চালু হলে সিঅ্যান্ডএফ আমদানিকারক নিজ অফিস বা বাসা থেকে যে কোনো তফসিলি ব্যাংক থেকে রাজস্ব পরিশোধ করতে পারবেন। এ পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাজস্ব পরিশোধ করা যাবে এবং এসএমএসের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাবে। ই-পেমেন্ট চালুর লক্ষ্যে বন্দর, শিপিং এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ সব স্টেক হোল্ডারকে আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস থেকে এ বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ই-পেমেন্ট পদ্ধতি চালু হলে রাজস্ব আদায় দ্রুত ও সহজ হবে। আমদানিকারকগণ বন্দর থেকে দ্রুত পণ্য খালাস করতে পারবেন।
জানা গেছে, আমদানি ও রপ্তানিকারকদের পণ্য খালাস ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে এসআইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের মাধ্যমে এ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। আরটিজিএস (রিয়েল টাইম গ্রোস সেটেলমেন্ট) সিস্টেমের মাধ্যমে যে কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ই-পেমেন্ট মাধ্যমে (ইলেকট্রনিক পেমেন্ট) রাজস্ব পদ্ধতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে দু’লাখ টাকার অধিক পণ্যের রাজস্ব আবশ্যিকভাবে ই-পেমেন্টের মাধ্যমে পরিশোধের বিধান করা হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি ২০২২ থেকে সব পণ্য চালান ই-পেমেন্ট (ইলেকট্রনিক পেমেন্ট) মাধ্যমে চালুর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়মে রাজস্ব পরিশোধের ক্ষেত্রে অবশ্যই কাস্টমস অফিস কোড, বিল অব অ্যান্ট্রি (বি/ই) বছর, বি/ই নম্বর, এআইঅ্যান্ড নম্বর, এসেসম্টে ডিউটি, (দশমিকের পরের সংখ্যাসহ) সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট-এর মোবাইল নম্বর আরটিজিএস ফরমে পূরণ করে রাজস্ব পরিশোধ করতে হবে। রাজস্ব পরিশোধের পর কনফার্মেশন আসার পর বন্দরে গিয়ে পণ্য চালান ডেলিভারি দেওয়া যাবে।
মোবাইল ব্যাংকিং প্রসার
দেশে গত মে মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন লেনদেন হয়েছে প্রায় দুই হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। করোনা পরিস্থিতিতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মানুষের প্রয়োজনীয়তা ও আগ্রহ বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন। মূলত করোনা সংক্রমণ এড়াতে শহর ও গ্রামাঞ্চলে মানুষ আর্থিক লেনদেনে বেশি হারে বিকাশ, রকেট, নগদের মতো প্রযুক্তিভিত্তিক এ সেবা নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব মতে, চলতি বছরের মে মাসে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (এমএফএস) মাধ্যমে ৭১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ২৯৮ কোটি টাকার বেশি। একক মাস হিসাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এটি সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগের মাস এপ্রিলে এমএফএস মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ৬৩ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১৫টি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। আর এ জন্য ১০ লাখ ৮৬ হাজার এজেন্ট রয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় নিবন্ধিত গ্রাহক ৯ কোটি ৮৬ হাজারেরও বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত মে মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা জমার পরিমাণ (ক্যাশ ইন) ১৯ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা এবং টাকা উত্তোলনের (ক্যাশ আউট) পরিমাণ ১৯ হাজার ১৭৩ কোটি। ব্যক্তির হিসাব থেকে আরেক ব্যক্তির হিসাবে পাঠানো টাকার পরিমাণ ২১ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। এছাড়া কেনাকাটায় বিল পরিশোধ হয়েছে তিন হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। এছাড়া মে মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তার ভাতা দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার পরিমাণ ২ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা, মোবাইল ফোনে ব্যালান্স রিচার্জ ৬৯৮ কোটি টাকা, ইউটিলিটি (গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি) বিল পরিশোধ হয়েছে এক হাজার ১০৭ কোটি টাকা।
অনলাইনে ভূমি উন্নয়নকর
এখন থেকে ভূমি উন্নয়ন কর অনলাইনে দেওয়া যাবে। জুলাই থেকেই পুরোদমে অনলাইনে ভূমি কর আদায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জনগণের হয়রানি লাঘব, অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ ও সরকারি রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নাগরিকরা ঘরে বসেই অনলাইনে ভূমি কর দিতে পারবেন। অনলাইনে ভূমি কর দিতে হলে ভূমির মালিককে প্রথমে নিবন্ধন করতে হবে।
সারা দেশে অনলাইন ভিত্তিক ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ সংক্রান্ত ডাটা এন্ট্রি কার্যক্রম চলমান। ভূমি মালিকগণকে তাদের- ১. মোবাইল ফোন নম্বর। ২. জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি। ৩. পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি। ৪. নামজারি খতিয়ানের ফটোকপি/সর্বশেষ খতিয়ানের কপি এবং ৫. সর্বশেষ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলার কপি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে যোগাযোগ করে ভূমির মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য অনলাইনে অ্যান্ট্রি দিতে হবে। অথবা নিজ নিজ ইউনিয়ন/পৌর ভূমি অফিসে জমা দিতে হবে। ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) দাবি একবার নির্ধারণ হলে সংশোধন করা সহজে সম্ভব হবে না। তাই নির্ভুল দাবি নির্ধারণের স্বার্থে ভূমির মালিকগণের সতর্কতা আবশ্যক।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কোরবানি পশু
ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু কেনা বেচা হয়েছে দেশের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো। কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়, পশু ডেলিভারি ছাড়াও কোরবানি করে মাংস পৌঁছে দেওয়ার মতো সেবাও দিয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি অনলাইনে কোরবানির পশু বেচাকেনার সরকারি উদ্যোগও অব্যাহত ছিল। গত বছর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাব যৌথভাবে চালু করেছিল ‘ডিজিটাল হাট’। সেই উদ্যোগ এবার ঈদ-উল-আযহায়ও অব্যাহত ছিল। সরকারের সময়োচিত ও সাহসী পদক্ষেপের ফলে এ দুর্যোগের সময় জীবন ও জীবিকা যেমন রক্ষা করা গেছে তেমনি অর্থনৈতিক কর্মকান্ডও সচল রাখা সম্ভব হয়েছে। ফলে দেশের অর্থনীতি সার্বিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব সত্ত্বেও সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের ফলে দেশের অর্থনীতি পূর্ণাঙ্গ পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে।
চলতি অর্থবছরের এ বাজেট দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা ও জীবন-জীবিকা সুরক্ষা এবং মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাব দৃঢ়তার সঙ্গে কাটিয়ে ওঠার ওপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনসহ আমাদের উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে। আমরা উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন চাই। আমরা প্রবৃদ্ধি চাই। আবার সমাজের দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ঘটাতে চাই। প্রবৃদ্ধির সুফলটা যেন তৃণমূলের মানুষ পায় সেটাই চাই- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার সেই লক্ষেই এগিয়ে যাচ্ছে।
লেখক : এআইজি (প্ল্যানিং অ্যান্ড রিসার্চ-১),
বাংলাদেশ পুলিশ
0 Comments