মোছাঃ ফরিদা ইয়াসমিন
॥শেষ পর্ব॥
শৈশব ও কৈশোরের আতঙ্ক ও সংকট নিরসণে প্রস্তাবনা
আমরা প্রায়শই হতাশ হই কৈশোরকালীন সংকটের দানব রূপ দেখে- সন্ত্রাসে, বিবেকহীন লেজুড়বৃত্তিতে, নিয়ন্ত্রণহীন চাঁদাবাজি-ছিনতাই, মাদক, মেধাহীন প্রকাশে আর দিশাহীন অনিশ্চিত ভবিষ্যতে। কিন্তু আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় কৈশোরের সৃষ্টিরূপে-যখন তা মানসিক সৃষ্টিশীল আভা ছড়ায় সাধারণের কল্যাণে, সমাজের কল্যাণে বা দেশ বিনির্মাণে। যেমন: গণিত অলিম্পিয়াড, সাইবার বুলিং অ্যাপ, পরিবেশ আন্দোলন, বৃক্ষরোপন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা, মানবসৃষ্ট দুর্যোগে দুহাত বাড়িয়ে দেয় এই শিশু-কিশোররা। বর্তমানে শিশু-কিশোর সৃষ্ট বিভিন্ন মানবিক সেবামূলক ক্ষুদ্র প্রয়াস যেখানে তাদের মনন মেধা, সৃষ্টিশীলতা ও আধুনিক কলাকৌশল নিয়ে এগিয়ে এসেছে। যেমন: তথ্য সেবা, স্বর্ণ কিশোরী-সূর্য কিশোর, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সেবা ইত্যাদি, মানবিক মাতৃরূপের বর্ণচ্ছটায় আলোকিত করছে চারদিক; দূর করছে অন্ধকার।
কাজেই দেখা যাচ্ছে, শিশু-কিশোর সমাজ শুধু কৈশোরকালীন সংকটে বিরূপ আচরণ-আবেগে কম্পমান নয়-এরাই বর্তমানে দেশ ও জাতির কল্যাণে-উদ্ভাবনে, মানবিক স্পন্দনে ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে এক বিরাট বিকল্প শক্তি। এরাই আমাদের ঘনবসতিপূর্ণ সমাজ ও দেশের জনসম্পদ। বিশেষ করে সমাজ যখন জরাগ্রস্থ, অনেকটা স্থবির, শিশু-কিশোর সেখানে আশা-ভরসার স্থল। সুস্থ, সবল, নির্ভীক, আদর্শিক, স্বপ্নচারী, সৃষ্টিশীল কৈশোরের জয় হোক।
ছোট অবস্থা থেকেই শিশুদের নৈতিকতা শিক্ষা দিতে হবে। যারা একটি আদর্শ দেশ গঠন করবে, তাদের অবশ্যই নৈতিকতা সম্পন্ন হতে হবে। তাদের হৃদয়ে আত্মসম্মানবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। যাদের হাত ধরে আগামীর পৃথিবী গড়ে উঠবে আমাদের উচিত তাদের সঙ্গে দায়িত্বশীল আচরণ করা। সুন্দর ব্যবহার করা। আমরা যদি তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করি তাহলে তারা আগামীতে উপহার দেবে সুন্দর সুশীল সমাজ।
শিশুদের যদি স্নেহ করা হয় তাহলে অতি সহজে তাদের কাছ থেকে সম্মান পাওয়া যায়। তাদের প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠা যায়। তাছাড়া তাদেরকে নেতৃত্বের যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতেও আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। এজন্য তাদেরকে পারিবারিক কিংবা সামাজিক সব ক্ষেত্রেই মূল্যায়ন করতে হবে। কখনোই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবে না। তাদের বক্তব্য শুনতে হবে। তাহলেই তারা পরমত সহিষ্ণু হবে। স্বেচ্ছাচারিতা থেকে বিরত থাকবে। তাদেরকে ফুলের মতো করে গড়তে হলে অবশ্যই তাদের প্রতি সদয় হতে হবে।
আমাদের বর্তমান সমাজে পাঠাগার, বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল কার্যক্রম কমে গেছে এবং তাকে দখল করে নিয়েছে মোবাইল ফোন ও আধুনিক প্রযুক্তি। ফলে বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমাদের সমাজব্যবস্থায় বিভিন্ন সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিক আয়োজন বাড়াতে হবে। কিশোর-কিশোরীদের সামাজিকীকরণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকার কারণে কিশোর অপরাধ রোধ করার দায়বদ্ধতার একটি বড় অংশ স্কুলব্যবস্থার ওপর পড়ে বলে ধারণা করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমনসব কর্মসূচি গ্রহণ করা দরকার যা বিদ্যালয়গুলোকে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনে সহায়ক হয়। প্রথমত এবং সর্বাগ্রে, বিদ্যালয়গুলো অবশ্যই শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্ব ও তাদের সেলফ-ইমেজ উন্নত করার জন্য একটি সক্রিয় পন্থা অবলম্বন করতে হবে, যা তাদের অসামাজিক আচরণ প্রতিরোধের জন্য উৎসাহ প্রদান করবে। সহিংস আচরণ, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার এবং কিশোর অপরাধমূলক আচরণের ঝুঁকি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করে তাত্ত্বিক ও জ্ঞানভিত্তিক বিকাশের দিকেও মনোনিবেশ করতে হবে। এ ছাড়া ইতিমধ্যে আচরণগত সমস্যা প্রকাশ পেয়েছে এমন শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার জন্য কাউন্সেলিং পরিসেবা অবশ্যই থাকতে হবে। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন সাধন ও সেখানে শিশুর চারিত্রিক উন্নয়নমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা এবং শিশুর জন্য উপযোগী বিনোদনমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারলে কিশোর অপরাধ কমে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তার ওপর নীতিনির্ধারকদের মূল কারণগুলো শনাক্ত ও উত্তরণের উপায়ের জন্য বিশদ (comprehensive) গবেষণা এবং পরিকল্পনা (master plan) গ্রহণ সময়ের দাবি। কেননা ভুল পথে যাওয়া শিশু-কিশোরদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্বও অভিভাবক, সমাজ ও রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।
শিশু-কিশোরদের নৈতিকতা শেখাতে হবে, ভালো-মন্দের পার্থক্য বোঝাতে হবে। নিয়মানুবর্তিতা, বড়দের সম্মান করা, মাদককে না বলার তালিম দিতে হবে। ছেলেমেয়েরা যাতে একে অপরকে সম্মান করতে শেখে, ভিন্ন ধর্ম-বর্ণ-মত-পথের প্রতি শিশু বয়সেই শ্রদ্ধাশীল হতে পারে, তা নিশ্চিত করা পড়াশোনার একটা অংশ হতে হবে। বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস, প্রেক্ষাপট, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, দেশপ্রেম, দেশের ক্রান্তিকালীন সমস্যা ও সমাধানের সম্ভাবনাগুলোও শিক্ষা দিতে হবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। এমনকি বিদেশী ভাষার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেশ-জাতি-মানবতার শিক্ষা-সংষ্কৃতিগুলো বাধ্যতামূলক পাঠ্য হিসেবে শেখাতে হবে যাতে বড় হয়ে পৃথিবীর যে প্রান্তেই বসবাস করুক দেশের স্বাধীনতা ও সম্মান যেন তুলে ধরতে পারে। শিক্ষকেরা পেশাগত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ক্লাব, সাংস্কৃতিক সংগঠন ইত্যাদি বিষয়েও প্রশিক্ষণ নেবেন। ক্লাব কার্যক্রম আনন্দজনক করার জন্য তরুণ ক্রীড়াবিদ, গায়ক, অভিনেতা, আবৃত্তিকার, কবি-সাহিত্যিকদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এই চিত্র বাস্তব করতে হলে ব্যক্তি-পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র সবার সদিচ্ছার প্রয়োজন। জিডিপির একটা বড় অংশ শিশু-কিশোরদের উন্নয়নে লাগাতে হবে, কেননা শিশুরাই দেশ ও জাতির বিনিয়োগ। এ প্রজন্মের সঠিক ও সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে আমরা এটা নীরব বিপ্লব ঘটাতে পারি। শিশু-কিশোর অপরাধীদের দোষ দেওয়ার আগে অভিযোগের আঙুলটা আমরা নিজেদের দিকেই তুলি এবং আগে নিজেদের আত্মা শুদ্ধ করে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের আস্থার ভিত্তি ও মঞ্চ শক্তিশালী করি।
শিশু অপরাধ প্রতিরোধ ও দমনে করণীয়:
ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকান্ড ও অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশুদেরকে চিহ্নিত করা এবং ঝুঁকি নিরসনে কার্যক্রম গ্রহণ করা সাম্প্রতিক কিশোর গ্যাং কালচার বা অপরাধীদের নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে মান সম্মত সাধারণ ও কারিগরী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি এবং প্রতিটি কেন্দ্রকে শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা।
বর্তমানের অতিরিক্ত মহানগর এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতকে শিশু আদালতের দায়িত্ব দেয়া। শিশুদের জন্য আলাদা আদালত প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
প্রবেশন অফিসারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা দরকার।
আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নতুন শিশু আইন এর সাথে অন্যান্য আইনের যোগসূত্র নির্ধারণ করা।
শিশুদের অভিভাবকদের সচেতনতা সৃষ্টি করা ও আন্তঃদেশীয় সংরক্ষিত অভিবাসন বন্ধ করা।
শিশু একাডেমির কার্যক্রমকে তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত করা।
শিশু সুরক্ষা ও উন্নয়নে স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমকে আরো বিস্তৃত করা ও ত্বরান্বিত করা।
কমিউনিটি পর্যায়ে শিশু সুরক্ষা ও উন্নয়নে কার্যকরী ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া টেকসই করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং সার্বিক সম্মেলনে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।
বিদ্যমান শিশু আইনে ১১টি অধ্যায় আছে; এসব অধ্যায়ের বেশির ভাগই হচ্ছে শিশুদের অপরাধসংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ শিশু অপরাধীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। শুধু নবম অধ্যায় অপরাধের শিকার হওয়া ও বিচারপ্রক্রিয়ায় সাক্ষী হিসেবে থাকা শিশুদের জন্য প্রযোজ্য। শিশুদের সুরক্ষার জন্য যা পর্যাপ্ত নয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অমিত সম্ভাবনার সুফল উপভোগ করে দেশ যখন সার্বিকভাবে উন্নয়নের অনলাইনে উঠে যাচ্ছে, আবার এই অনলাইনভিত্তিক সাইবার ক্রাইমকে ব্যবহার করে শিশু-কিশোররা ধ্বংসের মুখোমুখি। শিশুদের সুরক্ষার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ও ইতিবাচক ব্যবহারের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা সময়ের দাবি।
শিশু-কিশোর উপযোগী মিডিয়া ও পাবলিসিটি তৈরি করতে হবে দেশের মধ্যে।
ছেলে-মেয়েদের কৈশোরকালীন সংকটময় অবস্থায় যদি অভিভাবকদের ছেলেমেয়ে পরিচালনা করতে সমস্যা হয় সেই ক্ষেত্রে তারা কাউসিলিং ও মনোবিজ্ঞানীদের সাহায্য নিতে পারেন। তারা বাবা-মা এবং ছেলে-মেয়ে উভয়-এর সাথেই কাজ করে থাকেন। উভয় পক্ষকেই তারা কৈশোরকালীন অবস্থাটা সম্পর্কে মনোবিজ্ঞানের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা দেন। বাবা-মায়েদেরকে তারা ‘কার্যকরী সন্তান পালন পদ্ধতি’ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেন। সাথে সাথে ছেলে-মেয়েদেরকে তাদের প্রত্যাশা, চাহিদার সাথে বাবা-মায়ের তাদের প্রত্যাশা পূরণের ক্ষমতার সমন্বয় সাধন সর্বোপরি বাবা-মা এবং ছেলে-মেয়েদের উভয়পক্ষের কমিউনিকেশন গ্যাপ কমানোর মাধ্যমে একটি সুখী পরিবারে পরিবর্তন করতে সাহায্য করেন।
নির্যাতনের শিকার শিশু-কিশোররা কিভাবে দুঃসহ স্মৃতিকে অতিক্রম করতে পারে যদি তাদের মনো-সামাজিক যত্ন করা হয়, এজন্য প্রথম প্রয়োজন হলো তাকে আরও নির্যাতিত হবার অবস্থা থেকে রক্ষা করা। নির্যাতনের দ্বারা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কিনা চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া উচিৎ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা বিশেষ প্রয়োজন। পাশাপাশি শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যে কি প্রভাব পড়েছে তা চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, কাউন্সেলের এদের সহায়তা নিয়ে বুঝে নিতে হবে। তাঁরা শিশুর মানসিক অবস্থার পর্যালোচনা করে তার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ, মানসিক সাহায্য প্রদান করবে। তবে শিশুদের এইসব মানসিক চিকিৎসা শিশুকে যতœদানকারী ব্যক্তির (শিশুর বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, শিক্ষক ইত্যাদি) সহযোগিতা ছাড়া করা খুবই কঠিন। কারণ শিশুরা অন্যদের সহযোগিতায় আত্মনির্ভরশীল হতে শেখে। কাজেই তাদের মধ্যকার নির্যাতনে সৃষ্ট দুঃসহ স্মৃতিগুলোকে অতিক্রম করার শক্তি ও সাহস যোগাতে শিশুর পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তথা পুরা সমাজ সহযোগিতা করতে হবে। আমাদের দেশে নির্যাতিত শিশু-কিশোরদের আইন, আশ্রম, শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সহযোগিতা প্রদান করতে সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান আছে। শিশুদের জন্য বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে শারীরিক সেবা প্রদানের সুযোগ রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যের সেবার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সাইকিয়াট্রিষ্টরা রয়েছে। সরকারী-বেসরকারীভাবে বিনাখরচে শিশু-কিশোরদের সার্বিক চিকিৎসার সুব্যবস্থা আছে। এমনকি বেফারেল পদ্ধতিও বিদ্যমান।
শিশু প্রজন্ম সুন্দরের স্বপ্ন বুনে এবং নিঃস্বার্থ দেশপ্রেম লালন করে। শিশুদের ইচ্ছা আর স্বপ্নছাড়া সভ্যতার চাকা ঘুরিয়ে দেয়া যায় না। এ জন্য বলতে হচ্ছে, দায়িত্বশীলতার বোধ থেকে এবং সংকীর্ণ স্বার্থবাদী চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের বুকে যদি কিছুটা শিশু-কিশোর, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, সমাজ, দেশ বা জাতির প্রতি আত্মপ্রেম বা দেশপ্রেম অবশিষ্ট থাকে, তবে তার সন্ধান করতে হবে। এর দ্বারা শিশু-কিশোরদের অন্ধকার থেকে বের করে আনতে হলে দেশের সর্বত্র সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করে শিশু-কিশোরের নেতৃত্ব ও তাদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে হবে; ইতিহাস ও ঐতিহ্য চর্চার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সততা ও বিবেক যেন শিশু-কিশোর-তারুণ্যের চালিকাশক্তি হয়। পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। আমাদের সন্তানকে সুশিক্ষা দেওয়া আমাদেরই দায়িত্ব; তার দেখভাল আমাদেরকেই করতে হবে। পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সুশিক্ষাই উঠতি বয়সি ছেলেমেয়েদের সুপথে পরিচালিত করতে পারে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এখন প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষার বহুল পাঠ; শুধু পাসের সনদ-ই যথেষ্ট নয়। তাদের সৃজনশীল ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত রাখতে হবে। আমরা চাই, গ্যাং কালচারের এই ভয়ংকর অপরাধ থেকে সমাজকে বাঁচাতে, একই সঙ্গে নতুন প্রজন্মও বাঁচুক।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু দিবস-২০১৯ এ বলেছেন, ‘শিশুরা জাতিকে নেতৃত্ব দিবে। তাই ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সুশিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের (তাদের) গড়ে তোলাটা জরুরি যাতে করে শিশুরা ভবিষ্যত বিশ্বে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের পাশাপাশি বিশ্বকে বাসযোগ্য করতে শিশুদের মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটানো অত্যন্ত জরুরি’।
পরিশেষে বলতে চাই আমাদের শিশুরা ভবিষ্যতের কারিগর ও দেশ-জাতির চালিকাশক্তি। আমাদের গড়ে তোলা বর্তমানকে শিশু-কিশোররা আরো সমুজ্জ্বল করবে। তাই তাদেরকে সুস্থ ও সুন্দরভাবে বিকশিত করে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সকলের। সার্বিকভাবে শিশু-কিশোরদের জন্য নিরাপদ-সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে পরিবেশ তৈরি করে তাদেরকে শারিরীক-মানসিক-সামাজিক-আধ্যাত্মিকভাবে পূর্ণাঙ্গ ও বিকশিত করে তোলা একান্ত কর্তব্য।
লেখক : উপ-পুলিশ কমিশনার
(প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড এন্ড ইন্টারনাল ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন)
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ঢাকা।
0 Comments