খালেক বিন জয়েনউদ্দীন
তুমি দ্বিতীয় গঙ্গার আদুরে দুহিতা রূপকুমারী সেই পদ্মাবতী
আমাদের ঘরে ঢুকলে রাজশাহীর জলোডোবা মাঠপ্রান্তর দিয়ে
তুমি তখন প্রমত্তা পদ্মা, যৌবনের রঙ ছড়িয়ে একদা মেঘনায়
আমাদের যৌবনও মিশে ছিলো ঢেউ ছলছল কাত্তিকের ভরা জোছনায়।
কত শত বছর তোমার স্বপ্ন দেখেছি, স্বপ্ন দেখেছি মৎস কন্যার
রুপোলি ইলিশের ঝাঁকে, লৌকিক জলযানের কঠিন যাত্রাপথে
অথচ তুমি নববধূর মতো ঘোমটা খোলোনি প্রথম প্রথম-
রাজা সাগর, ইন্দ্র, কপিলমুনি, ভগীরথ ও মহাদেব তোমার উৎস।
তোমার যৌবনের রূপ-লাবণ্যে বইছিলে জনপদের জলজ স্রোতে
তোমার কলতানে বেহুলা ভাসিয়েছিলো জিয়াতে মরা স্বামীর লাশ
আমির সাধু ময়ূরপক্সক্ষী ডিঙগায় চড়েছিলো বাণিজ্যের আশায়
আর একষট্টিতে তোমার স্রোতের ফল্গুধারায় মনুষ্য বসালো প্রবাহরোধক।
তবুও তোমার পথ রূদ্ধ হয়নি, কতবার ভূমিকম্প হলো, নামলো ধস
ভারত-বাংলার ঘর-গেরস্থিতে তোমার সজীবতা আজো অমর-অম্লান
স্বর্গ-মর্ত্য ও পাতালে তোমার জননীর অবাধে সার্বভৌম বিচরণ
অথচ তোমার কুলজি জানা হলো না প্রকৃতির পাঠে ও নিয়মে।
তোমার নাতনি মধুমতী নদীর পাড়ের এক লোকলক্ষী আরেক কন্যা
দাঁড়িয়েছিলো অথই জলের বাষ্পীয় যানের ইস্পাতে গড়া গলুইয়ে
ষাটের সেই যাত্রায় তোমার বুকে জেগেছিলো উদ্বেলিত ফেনিল ঢেউ
তুমি কী সেদিন তাকে দেখেছিলো, দেখেছিলে কাজলকালো চোখে?
আজ দ্যাখো তোমার বুকে তাঁরই আঁচলের ময়াবী ছায়ায় এক পারাপার
লাখো লাখো কণ্ঠ ও স্পর্শে জেগেছে ইতিহাসের নবজাগরণ
বাষট্টি বছর পরে তোমার সঙ্গে আবার মৈত্রী ও সখ্যের সন্দর্শন
ভালোবাসার স্রোতে নির্মল হলো তাঁর ও তার প্রিয়জনের স্বপ্নগুলো।
0 Comments