ডিটেকটিভ ডেস্ক
শিশুরা পেল খেলার জায়গা
বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জা ১৬ মার্চ ২০২২ সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্ স্টাফ কোয়ার্টারে শিশুদের খেলার জায়গা ‘বঙ্গবন্ধু শিশু কর্নার’ উদ্বোধন করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত বছর পুলিশ ভবনে এক শিশু-কিশোর চিত্রাকংন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। তখন শিশুরা তাদের কোয়ার্টারে একটি খেলার জায়গা চেয়েছে। আমরা শিশুদের জন্য রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্ স্টাফ কোয়ার্টারে একটি পরিত্যক্ত স্থানকে ‘বঙ্গবন্ধু শিশু কর্ণার’ হিসেবে শিশুদের খেলার উপযোগী করে তৈরি করতে পেরেছি।
এসময় জীশান মীর্জা বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর মতোই শিশুদের ভালবাসেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন কিভাবে মানুষকে ভালবাসতে হয়, দেশকে ভালবাসতে হয়।
পুনাক সভানেত্রী শিশুদের সাথে নিয়ে একটি কেক কাটেন। তিনি শিশুদেরকে কেক খাইয়ে দেন। এর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে পুনাক শিশু -কিশোরদের নিয়ে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়াম, রাজারবাগ, ঢাকায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে পুনাক নেতৃবৃন্দ এবং শিশু-কিশোররা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে পুনাকের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। পুনাকের বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুনাক সভানেত্রী বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
চাকরি পেলেন এক হাত ও দুই পা না থাকা সেই শাহিদা
পুলিশ নারী কল্যাণ (পুনাক) সমিতির সভানেত্রী জীশান মীর্জার উদ্যোগে অবশেষে চাকরি পেলেন যশোরের ঝিকরগাছার শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহিদা খাতুন। যশোরের নওয়াপাড়ায় অবস্থিত আকিজ জুট মিলে এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে চাকরি হয়েছে তার। প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে অনন্য নজির স্থাপন করা শাহিদার কর্মসংস্থান উপলক্ষে ২৩ মার্চ তার বাড়ি ঝিকরগাছার শিমুলিয়া গ্রামে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে শাহিদার হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা।
এর আগে শাহিদা পরিচালিত সৃষ্টিশীল নারী প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন পুনাক সভানেত্রী। এ সময় প্রতিবন্ধী শিশুদের বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করেন তিনি। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের খোঁজখবর নেওয়ার সঙ্গে তাদের চকলেট, নতুন পোশাক ও বিভিন্ন উপহার তুলে দেন পুনাক সভানেত্রী। এক হাত ও দুই পা না থাকা শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহিদা খাতুনের বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামে। মুদি দোকানি রফিউদ্দিনের ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি চতুর্থ। দুই পা আর এক হাত না থাকলেও সচল আরেক হাত দিয়েই বাঁচার স্বপ্ন দেখেন শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহিদা খাতুন। তিনি প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন এলাকায়। জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী শাহিদা ইচ্ছাশক্তির ওপর ভর করে ২০১৫ সালে যশোর সরকারি এম এম কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাস করেছেন। পাশাপাশি তিনি হস্তশিল্প, সেলাইসহ বিভিন্ন হাতের কাজও করতে পারেন।
অন্য প্রতিবন্ধীদের জন্যও এগিয়ে আসেন শাহিদা। বাড়ির পাশে গড়ে তোলেন সৃষ্টিশীল নারী প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থা। সেখানেই প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা আর নারীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এক সময় প্রতিবেশীরা শাহিদার জন্মকে ‘পাপের ফল’ বলে কটাক্ষ করতেন। আজ তারা শাহিদাকে পেয়েছেন বিপদের বন্ধু হিসেবে। যে কোনো দরকারে ছুটে আসেন তারা শাহিদার কাছে। তারপরও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে চাকরি না পাওয়ায় হতাশ ছিলেন প্রতিবন্ধিতা জয় করা শাহিদা। তাকে নিয়ে গত ৬ মার্চ ‘শাহিদার কাছে এখন সবাই ছুটছেন’ শিরোনামে ভিডিওসহ সংবাদ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে। বিষয়টি পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জার নজরে আসলে তার উদ্যোগে জেলা পুলিশ শাহিদার খোঁজখবর নেয়। ২২ মার্চ ও ২৩ মার্চ যশোর জেলা পুলিশ সমাবেশ ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উপলক্ষে যশোর আসেন পুনাক সভানেত্রী।
২৩ মার্চ বুধবার জেলা পুনাক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে শাহিদার সঙ্গে দেখা করে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন তিনি। নিয়োগপত্র পেয়ে খুশিতে আত্মহারা শাহিদা খাতুন। তিনি ঢাকা বলেন, অবশেষে আমার একটা কর্মসংস্থান হলো। পড়াশোনা শেষ করেও চাকরি না হওয়ায় আমি খুব দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম। প্রতিবন্ধী হিসেবে পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে ছিলাম। তারপর লেখাপড়া শেষ করে আরও বোঝাটা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। পুনাক সভানেত্রীর কল্যাণে আমার একটা চাকরি হলো। এখন আমার মা-বাবার পাশে দাঁড়াতে পারব। তিনি বলেন, আমি চাকরিতে যোগদান করলেও আমার হাতে গড়া সৃষ্টিশীল নারী প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থা চলবে তার নিজস্ব গতিতে। কেননা আমি প্রতিবন্ধী এই বোনদের মধ্যে সামনে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো অনেককেই গড়ে তুলেছি।
পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জা বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে শাহিদাকে নিয়ে সংবাদ পড়েছি। তার প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে অনন্য নজির স্থাপন করা আমাদের কাছে খুব ভালো লেগেছে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি অসহায় ও দুস্থদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। সেই ধারাবাহিকতায় শাহিদার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে পুনাক। শাহিদার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হওয়ায় পরিবারটি এখন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
শাহিদার বাবা মুদিদোকানি রফিউদ্দিন বলেন, শাহিদার জন্মের পর অনেকে অনেক কটু কথা বলেছে। অনেকে মেরে ফেলতেও বলেছে। তারপরও অনেক কষ্ট করে মেয়েকে বড় করেছি। কত রোদ, বৃষ্টি, ঝড় পার করে আজ সে উচ্চশিক্ষিত। দীর্ঘদিন পরেও হলেও শাহেদা চাকরি পেয়েছে এটা সমাজের অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। সমাজের আর দশটা প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েও তাকে অনুসরণ করতে পারবে। তারাও লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে, সমাজের বোঝা হবে না।
ঘর পেল মকবুল
নিজের সন্তানরা নিতেন না খোঁজ। ভিক্ষা করে জীবিকা চালালেও ঘর না থাকায় ঠাঁই হয়েছিল অন্যের গোয়াল ঘরে। সম্প্রতি সহায় সম্বলহীন এই মকবুল হাওলাদার (৭৫) এর খবর প্রকাশিত হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে। বিষয়টি নজরে আসে বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জার।
অবশেষে জীশান মীর্জা ও বরগুনার বেতাগী পৌরসভার মেয়র এ বি এম গোলাম কবিরের উদ্যোগে পাকা ঘর পেয়েছেন মকবুল। মকবুল এখন আর গৃহহীন নন, তাকে অন্যের গলগ্রহ হয়ে আর কারো কুড়ে ঘরে থাকতে হবে না। ১৮ মার্চ ২০২২ ঘরটি মকবুলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাকে ঘরটি দেওয়া হয়েছে মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে।
জানা গেছে, সহায় সম্বলহীন মকবুল হাওলাদার (৭৫)। বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঝিলবুনিয়া গ্রামে। তার চার ছেলে, তারা ঢাকায় কাজ করেন। তারা কেউ বাবার খোঁজ-খবর করেন না। বিপত্নীক মকুবলের একমাত্র সহায় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোরী মেয়ে। জীবিকার অন্বেষণে অসুস্থ শরীর নিয়ে লাঠির সাহায্যে মেয়ের কাঁধে ভর করে গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করেন মকবুল। গত বর্ষায় তার কুঁড়ে ঘরটি ভেঙে যায়। সেই থেকে মেয়ে নিয়ে তিনি ঠাঁই নেন প্রতিবেশী খালেক হাওলাদারের গোয়াল ঘরে। মকবুলের দুর্দশার এ খবর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নজরে আসে বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জার।
এ প্রসঙ্গে পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে আমরা সব সময়ই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। গণমাধ্যমে খবর দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে পুনাকের উদ্যোগে আমরা ওই বৃদ্ধ ও তার মেয়ের পাশে দাঁড়াবো। আজ আমরা তাকে একটি ঘর করে দিতে সক্ষম হয়েছি।
0 Comments