ডিটেকটিভ ডেস্ক
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এখন থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশে কাবাডি টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ও কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান। রাজধানীর পল্টনে কাবাডি স্টেডিয়ামে ১৯ মার্চ ২০২২ বিকাল ৫টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায় বঙ্গবন্ধু কাপ-২০২২ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ডিআইজি হাবিবুর রহমান একথা জানান।
বঙ্গবন্ধু কাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার আসর। স্বাগতিক দল বাংলাদেশ ছাড়া এবার সাতটি দল এতে অংশ নেয়। আফ্রিকা থেকে কেনিয়া, ইংল্যান্ড এসেছে ইউরোপ মহাদেশ থেকে। এছাড়া এশিয়া থেকে খেলছে শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, মালয়েশিয়া। কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘করোনার কঠিন পরিস্থিতিতেও বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষ সামনে রেখে গতবছর প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছি। গতবার ৫টি দল অংশ নিলেও এবার অংশ নিয়েছে ৮টি দল।’ অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক উন ইয়ং হ্যাক বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে আমরা কঠিন একটা সময় পার করছি। এরপরও বিভিন্ন দেশের কাবাডির খোঁজখবর নিয়মিত রাখছি। ভবিষ্যতে কাবাডিকে অলিম্পিকে অন্তর্ভূক্তির জন্য চেষ্টা করব। এজন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’ উন ইয়ং হ্যাক বলেন, ‘বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো বঙ্গবন্ধু কাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনকে বিশেষ করে ফেডারেশনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ফেডারেশনের অন্যান্য কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানাই।’ গত বছর ২ এপ্রিল ঢাকায় প্রথম বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কাবাডিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ।
ফাইনালে কেনিয়ার বিপক্ষে জয় আসে ৩৮-২৮ পয়েন্টে। বছর না ঘুরতেই টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসরের ফাইনালে আবার বাংলাদেশের সামনে পড়েছিল সেই কেনিয়াই। তবে এবার জয় এসেছে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা ছড়িয়ে। শেষক্ষণে কেনিয়ার দুর্দান্ত লড়াই আশা-নিরাশার দোলাচলে ফেলে দেয় বাংলাদেশকে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ফাইনাল জিতেছে ৩৪-৩১ পয়েন্টে। স্বাধীনতা দিবসের ঠিক আগে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এল আরেকটি সাফল্য। কাবাডির দেশ থেকে কাবাডির শিরোপা প্রায় নিয়েই যাচ্ছিল কেনিয়া। বাংলাদেশ দল টেকনিকে এগিয়ে থাকলেও উচ্চতা আর শক্তি কাজে লাগিয়েছে কেনিয়া। তাদের খেলোয়াড়দের আটকাতে বারবার খেই হারিয়ে ফেলছিলেন তুহিন তরফদার, আরদুজ্জামান মুন্সিরা। অন্যদিকে পয়েন্ট ছিনিয়ে আনতে রবিউল, জাকির, ফেরদৌসরা নিজেদের কোর্টে আসতে পারেননি প্রতিপক্ষের দুরন্ত রক্ষণে ধরা পড়ে। ৪০ মিনিটের ম্যাচের শুরুতে কেনিয়া এগিয়ে যায় ৮-৩ পয়েন্টে। তবে আস্তে আস্তে কৌশলে বদল আনেন বাংলাদেশের ভারতীয় কোচ সাজু রাম গয়াত। তাঁর শিষ্যরাও ঘুরে দাঁড়াতে থাকেন।
প্রতিপক্ষকে আটকানোর ঝুঁকিতে না গিয়ে পয়েন্ট আনায় মনোযোগ দেন স্বাগতিক খেলোয়াড়েরা। একপর্যায়ে স্কোর দাঁড়ায় কেনিয়া ১১, বাংলাদেশ ৯। পয়েন্ট ছিনিয়ে এনে কেনিয়ার খেলোয়াড়দের আউট করতে থাকেন রাজীব-জাকিররা। প্রথমার্ধে কেনিয়াকে অলআউট করে বাংলাদেশ পায় প্রথম লোনা। এই অর্ধের শেষে ১৭-১৪ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ।
বিরতির পর শুরুতেই প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে আটকাতে গিয়ে পয়েন্ট দেন ফেরদৌস। একপর্যায়ে বাংলাদেশ তিনজনের দলে পরিণত হওয়ায় অলআউটের শঙ্কা জাগে। পরক্ষণেই অবশ্য কেনিয়ার ভিক্টরকে আউট করে সমতা আনে বাংলাদেশ। ম্যাচের শেষ মিনিটে কেনিয়ার সেরা খেলোয়াড় ভিক্টর ভুল করলে দুই পয়েন্ট পেয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে ঘাড়ের ওপর তখন গরম নিশ্বাস ফেলছিল কেনিয়া। শেষ মিনিটের স্কোরলাইন বাংলাদেশ ৩২ কেনিয়া ২৯। সবার চোখ তখন ঘড়ির দিকে। ম্যাচটা শেষ হয় ৩৪-৩১ পয়েন্টে। শেষ বাঁশি বাজতেই পল্টন ভলিবল স্টেডিয়ামের গ্যালারি ঠাসা দর্শক মেতে ওঠেন আনন্দে। মাঠে বিজয়ী খেলোয়াড়দের আনন্দের বাঁধ যেন মানছিল না।
0 Comments