ই-পেপার

নিউজ স্ক্রল

আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অপরিসীম লড়াই-সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত করেছেন। বাঙালির অধিকার আদায় ও স্বাধীনতা অর্জনে তাঁর জীবনের ১৩টি বছর কাটিয়েছেন কারাগারে। শাসকগোষ্ঠির কোনো দমন-পীড়ন তাঁকে দমাতে পারেনি এতটুকু। মহান এ মানুষটিকে ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি দেয়া হয় ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি। ১৯৬৮ সাল; প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা পাকিস্তানি সামরিক শাসক আইয়ুব খানের গলায় কাঁটার মতো বিঁধে। আর ঠিক সেসময় শেখ মুজিব জনমত গড়তে নিরন্তর ছুটে চলেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এদিকে মুজিবকে দমাতে না পেরে পাকিস্তানি শাসকরা দেশদ্রোহীর অপবাদ দিয়ে আগরতলা ‘ষড়যন্ত্র’ মামলা দায়ের করে। ১৯৬৬ সালের ৮ মে গভীর রাতে ছয় দফা কর্মসূচি দেওয়ার অভিযোগে দেশরক্ষা আইনে শেখ মুজিব গ্রেপ্তার হন। কিন্তু তাতেও এতটুকু বিচলিত হননি মহান এই নেতা। নেতাকে মুক্ত করতে উত্তাল সারাদেশ। জনতার সেই আন্দোলনে নতি স্বীকার করে পাকিস্তানি সামরিক সরকার।

৩৩ মাস পর ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মুক্তিলাভ করেন তিনি। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয় শেখ মুজিবুর রহমানকে সংবর্ধনা দেওয়ার। দিন ঠিক করা হয় ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। স্থান তখনকার রেসকোর্স ময়দান। লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে তৎকালীন ডাকসুর ভিপি তোফায়েল আহমেদ সেদিনই শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। লাখো জনতা দুই হাত তুলে তোফায়েল আহমেদের সেই প্রস্তাব সমর্থন করেন। সেই থেকে জাতির পিতা শেখ মুজিবের নামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি।

১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার অভিযোগ আনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন রাজনীতিক সমারিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং গুটিকয় সাধারণ সৈনিক সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্ববাংলাকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন, যা ইতিহাসে আগরতলা ‘ষড়যন্ত্র’ মামলা নামে পরিচিত। ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ নামে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক মিথ্যা মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানসহ মোট ৩৫ জনকে আসামি করা হয়; যেখানে শেখ মুজিবকে এক নম্বর আসামি করে পাকিস্তান বিভক্তিকরণের ষড়যন্ত্রের মূল হোঁতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ৩৫ জন আসামির সবাইকে পাকিস্তানি সরকার গ্রেফতার করে ঢাকা সেনানিবাসে অন্তরীণ করে রাখা হয়। মূলত পূর্বপাকিস্তানকে রাজনৈতিকভাবে নেতৃত্বশূন্য করে এ অঞ্চলে আইয়ুব খানের ক্ষমতা ও প্রভাব সুদৃঢ় করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফল হলো আগরতলা মামলা।

মামলায় উল্লেখ করা হয় শেখ মুজিবসহ এই কর্মকর্তারা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তর্গত আগরতলা শহরে ভারত সরকারের সঙ্গে এক বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করেছে। মিথ্যা মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানকে সাজা দেওয়ার পরিকল্পনা টের পেয়ে বাঙালি জাতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ১৯৬৮ সালের ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে অভিযুক্ত আসামিদের বিচারকার্য শুরু হয়। বিচারকার্য চলাকালীন ১৯৬৯ সালের ৫ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাদের ১১ দফা দাবি পেশ করে, যার মধ্যে শেখ মুজিবের ছয় দফার সবগুলোই দফাই অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই পরিষদের সিদ্ধান্তক্রমে আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের প্রস্তুতি গৃহীত হয়।

আগরতলা মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে ১৫ ফেব্রুয়ারি ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করে সান্ধ্য আইন জারি করা হলে সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে রাজপথে প্রতিবাদ মিছিল করে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহাকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি সেনারা বেয়নেট চার্জে নির্মমভাবে হত্যা করে পুনরায় সান্ধ্য আইন জারি করলে যথারীতি তা ভঙ্গ করে প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ২০ ফেব্রুয়ারি পুরো ঢাকা নগরীকে মশাল আর মিছিলের নগরীতে পরিণত করলে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবসে পল্টনের জনসমুদ্রে প্রিয় নেতা শেখ মুজিবসহ আগরতলা মামলায় আটক সব বন্দির নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়। সমগ্র দেশ গণবিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয়।

পরিস্থিতি দ্রুতই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। তাই প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান গোল টেবিল বৈঠকের আহ্বান জানালেন। বৈঠকে যাওয়ার আগে নেতারা নিজেরা এক বৈঠকে মিলিত হন। আওয়ামী লীগ পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিল, আলোচনায় বসার আগে অবশ্যই সরকারকে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার এবং শেখ মুজিবসহ সব বন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। শেখ মুজিবকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ক্যান্টনমেন্টে বসে শেখ মুজিব তখন কি ভাবছিলেন, তা কেউ জানে না। অনেকেই তাঁকে পরামর্শ দিচ্ছিলেন, প্যারোলে হলেও আইয়ুবের দরবারে যাওয়ার জন্য। এই সংবাদ পেয়ে কোনোরকম শর্ত দিয়ে যেন তার স্বামী জেল থেকে বের না  হন, তা স্পষ্ট করে বলে পাঠালেন বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। তিনি এ প্রশ্নে আপোষহীন ছিলেন। আইয়ুব খান বুঝতে পেরেছিলেন যে, গণজাগরণ দানা বেঁধেছে। তিনি আর তা দমন করতে পারবেন না। ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়াই তার জন্য উত্তম হবে। ২২ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান হঠাৎ ঘোষণা করলেন, আগরতলা মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে। সব বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হলো। ২২ ফেব্রুয়ারি মধ্যাহ্নেই আগরতলা মামলার সব অভিযুক্তকে ছেড়ে দেওয়া হয়। লাখো মানুষ ছুটলো সেনানিবাসের দিকে। সেদিনই জনতা শেখ মুজিবকে পল্টন ময়দানে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিপুল জনতার তুলনায় পল্টন ময়দান নেহাত ছোট হয়ে যায়। সিদ্ধান্ত হলো পরদিন রেসকোর্স ময়দানে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।

শেখ মুজিবুর রহমান ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ক্যান্টনমেন্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ধানমন্ডির স্বীয় বাসভবনে যখন পৌঁছান তখন দুপুর একটা, ফাল্গুনের দুপুর, বাইরে খাঁ খাঁ রোদ। বাড়ির গিন্নি বেগম মুজিব খাবার রাঁধছিলেন বন্দি মুজিবের জন্য। শেখ জামাল আর শেখ রেহানা তখন বাসাতেই। একটা সামরিক জিপ এসে থামল সেই বাড়ির সামনে। সবাই উদ্বিগ্ন। ‘ওরে, তোরা কোথায়?’ অতি পরিচিত, অতি পুরানো সুরে কে যেন ডাকলো। ‘কে এলো?’ ‘একি!’ বাবা একসঙ্গে তিন কণ্ঠে চিৎকার- আত্মবিহ্বল! দিশাহারা! আনন্দে আপ্লুত! আঁচল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ছুটে এলেন বেগম মুজিব। চোখকেও বিশ্বাস হয় না তাঁর। কয়েকজন সামরিক লোকের সঙ্গে নামলেন শেখ মুজিব। মুখে পাইপ। পরনে প্রিন্স কোট। সেই নিজস্ব ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে। কী হলো? মামলার কী হলো? উদ্বেগাকুল স্ত্রীর প্রশ্ন। ‘মামলা উঠিয়ে নিয়েছে ওরা, আমরা সবাই মুক্ত।’ ছুটে এলো জামাল। ছুটে এলো রেহানা। দু’জনের চোখে পানি। দরদর করে অশ্রু পড়ছে চিবুক গড়িয়ে। তিন বছর পর ফিরে পেল তারা বাবাকে। বড় মেয়ে শেখ হাসিনা বাবাকে দেখে স্তম্ভিত। তার দু’চোখ ফেটে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। বাবার বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে কাঁদে হাসিনা। শেখ কামাল তো বাবাকে দেখেই লাফ দিয়ে বুকে পড়ে। নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে বাবাকে। (বাংলাদেশ : প্রবন্ধ, বক্তৃতা, বিবৃতি, বাণী, নির্দেশ ও সাক্ষাৎকার, শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমি, ২০১৭, পৃ.৩৪০)।

কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে সুদীর্ঘ পৌনে তিন বছর কারাবাসের পর মুক্ত জননায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথমবারের মতো জনসভায় আবির্ভাব উপলক্ষে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান) এক সভার আয়োজন করে। বক্তৃতা মঞ্চের পেছন দিকে ঢাকা ক্লাবের সম্মুখস্থ রমনা রোডে গাড়ি এসে পৌঁছানোর পর জনসমুদ্রের চাপের মধ্যে পথ রচনা করে মাত্র ২০০ গজ অতিক্রম করে শেখ মুজিবকে মঞ্চে আরোহণ করতে প্রায় পনেরো মিনিট লাগে। মঞ্চে আগমনকালে জননেতা শেখ মুজিবকে বিপুলভাবে মাল্যভূষিত করা হয়। তখন রেসকোর্স ময়দানে মানুষ আর মানুষ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রেন, বাস, ট্রাক, লঞ্চ-স্টিমার বোঝাই হয়ে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, কৃষক-শ্রমিক, সাধারণ মানুষ ছুটে এসেছে প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে এক নজর দেখতে। তাদের ব্যাপক করতালি ও দৃপ্তকণ্ঠে মুহুর্মুহু গগনবিদারী স্লোগানে ‘জেলের তালা ভেঙেছি শেখ মুজিবকে এনেছি’, ‘বঙ্গশার্দূল শেখ মুজিব-জিন্দাবাদ’, ‘ ১১ দফা মানতে হবে’, ‘সংগ্রাম চলবে’, ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দিব না’ সারা রাজধানী প্রকম্পিত হয়ে উঠে। শেখ মুজিব বিকেল ৪.২০ থেকে ৫.১০ পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশ মিনিট বক্তৃতা দেন। তিনি তথাকথিত আগরতলা মামলাকে ‘ইসলামাবাদ ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে অভিহিত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

গণমহাসাগরের সামনে দাঁড়িয়ে শেখ মুজিবুর রহমান সাম্প্রতিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে যাঁরা আত্মাহুতি দিয়েছেন তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘জেলের তালা ভাঙিয়া আমাদেরকে যে মুক্ত করিয়া আনা হইয়াছে তা ছাত্র-জনতার সংগ্রামের এক মহাস্মরণীয় বিজয়।’ এ বিজয়ের দিনে তিনি ছাত্রদের ১১ দফার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে ১১ দফার সংগ্রামে তিনি সক্রিয়ভাবে শরিক থাকবেন বলে সবাইকে আশ^স্ত করেন। তিনি আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘দীর্ঘ দুই বৎসর নিরাপত্তা আইনে কারাগারে থাকার পর একদিন শুনিলাম, সরকার আমাকে ছাড়িয়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়াছেন। বিশ্বাস করি নাই। অবিশ্বাসে ভর করিয়া কারাগার ফটকে আসিয়া দেখি, আশঙ্কা অমূলক নয়। সঙ্গীণ উঁচাইয়া ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে সেনাবাহিনীর জওয়ানরা দন্ডয়মান। ওরা আসিল, শেখ সাহেব আপনাকে আবার গ্রেপ্তার করা হইল। আমি জানতে চাহিলাম, কোন আইনে? ওরা কি সব বলিল বুঝি নাই। একটা গাড়ি দেখাইয়া বলিল, উঠুন। মনে মনে চরমক্ষণের জন্য প্রস্তুতি লইলাম। বলিলাম, এক মুহূর্ত সময় চাই। এই মুহূর্তে কারাগারের সামনের রাস্তা হইতে এক মুঠি মাটি লইয়া কপালে লাগাইয়া খোদার কাছে আকুতি জানাইলাম, এই দেশেতে জন্ম আমার, যেন এই দেশেতেই মরি।’

সেদিনের সংবর্ধনা সভার সভাপতি তোফায়েল আহমেদ লিখেছেন, ‘চিরাচরিত প্রথা ভঙ্গ করে আগেই সভাপতির ভাষণ দেওয়ার জন্য মঞ্চে দাঁড়িয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুরোধ জানিয়ে বলেছিলাম সবার শেষে বক্তৃতা করার কথা থাকলেও আপনাদের অনুমতি নিয়ে আমি আগেই বক্তৃতা করতে চাই। দশ লক্ষ লোকের সম্মতি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আগেই বক্তৃতা করি। বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধুকে তুমি বলে সম্বোধন করে বলেছিলাম প্রিয় নেতা তোমার কাছে আমরা ঋণী বাঙালি জাতি, চিরঋণী এই ঋণ কোনো দিনই শোধ করতে পারব না। সারা জীবন এই ঋণের বোঝা আমাদের বয়ে চলতে হবে। আজ এই ঋণের বোঝাটাকে একটু হালকা করতে চাই জাতির পক্ষ থেকে তোমাকে একটা উপাধি দিয়ে। ১০ লক্ষ লোক ২০ লক্ষ হাত তুলে সম্মতি জানিয়েছিল। সেই সময় আমি ঘোষণা করলাম- বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তান হাজার বছরের মহাপুরুষ নিপীড়িত, লাঞ্ছিত, প্রবঞ্চিত বাঙালির নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করলাম। আজ থেকে তিনি আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। লাখ লাখ কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হলো জয় বঙ্গবন্ধু।’ (তোফায়েল আহমেদ, ‘ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু’, আগামী প্রকাশনী, ১৯৯৭, পৃ.৩৩)। আর এভাবেই ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি শেখ মুজিবুর রহমানের নামের অংশ হয়ে গেল। পরবর্তী সময়ে এটিই হলো বাঙালি ইতিহাসের সর্বোচ্চ উচ্চারিত শ্রদ্ধা মেশানো অবিস্মরণীয় এক নেতার অভিধা। যে অভিধা বাংলাদেশ এবং বিশ্বে সততই উচ্চারিত হয় গভীর শ্রদ্ধায় এবং ভালোবাসায়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। এই বাংলাদেশের স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন। তিনি ছিলেন বিশ্ববরেণ্য মহান নেতা। তাঁর কোনো তুলনা হয় না। তিনি জন্মেছিলেন বলেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে জাতির পিতার ঐতিহাসিক অবদান পরম শ্রদ্ধায় সবাই স্মরণ করে। তিনিই উপলব্ধি করেছিলেন এই পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য হয়নি, একদিন বাংলার ভাগ্যনিয়ন্তা বাঙালিদের হতে হবে। তাই তিনি সংগ্রামের সুদীর্ঘ পথে নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলন সংগঠিত করার মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন।

লেখক : উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক)

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ

ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন :)

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x