ইরানী বিশ্বাস
০২
রাকিবের চোখ তখনো ল্যাপট্যাবের স্ক্রিণে ঘুরছে। লোটাস খুব বিরক্ত হয়ে বসে আছে। হয়তো মনে মনে ভাবছে, আমার মতো এত সুন্দরী এক তরুণী বসে আছে। অথচ এই পুরুষ মানুষের কোন চেঞ্জ নেই! তাহলে কি মানুষটি একটু আলাদা, হু হতেও পারে। এই ধরণের সাত-পাঁচ ভাবতে থাকে লোটাস। সামনে থাকা শো-পিসগুলি হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছে আর আড় চোখে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করছে রাকিব সাহেব তার দিকে তাকায় কি না। ঠিক যা ভেবেছিল তা-ই হলো। কিছুক্ষণ পর দেখে আধো দৃষ্টিতে চোখ তুলে তাকাতেই চোখ পড়ে যায় লোটাসের। মুহুর্তেই চোখাচোখি আর রাকিব সাহেব বিষম খেলেন। আর সাথে সাথে লোটাস স্বভাব সুলভ ভাবে চেয়ার ছেড়ে উঠে পাশে থাকা গ্লাসের পানি এগিয়ে দেয়। লোটাসের হাতের গ্লাস নিতে গিয়ে আঙ্গুলে ছোঁয়া লেগে যায়। এবার কিছু বুঝে ওঠার আগেই গ্লাসটি রাকিব সাহেবের হাত থেকে টেবিলের উপর পড়ে যায়। টিসুর বাক্স খুঁজে পেতে দেরি হওয়াতে নিজেই সামনে থাকা দরকারী কাগজ চাপা দেয় তার উপর। লোটাস গ্লাসটি তুলে পাশে থাকা জগ থেকে পানি ঢেলে তুলে ধরে রাকিব সাহেবের মুখের সামনে। এবার আর রাকিব সাহেব লোটাসের মুখের দিকে তাকাতে সাহস পেল না। গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। তারপর লোটাসের দিকে তাকিয়ে বললো,
– জাস্ট ওয়েট আই এ্যাম কামিং।
রুমের মধ্যে লোটাস তখন একা। রাকিব সাহেব ফ্রেস রুমে গেছে। রুমের এক পাশের ওয়ালে একটা টিভি। লোটাস ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকায়। এরই মধ্যে নিজের চেয়ারে এসে আরাম করে বসে রাকিব সাহেব। তারপর লোটাসের দিকে তাকিয়ে কিছুটা লজ্জিত ভঙ্গিতে বলে,
– সরি, আই এ্যাম এক্সট্রেইমলি সরি।
– ইটস ওকে। কথাটা শেষ করে মুখে একটা রোমান্টিক হাসি ছড়িয়ে দেয়। তারপর রাকিব সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে লোটাস। একটু ইতস্তত হয়ে রাকিব সাহেব বলে,
– এ্যানি প্রবলেম?
– হু। আপনার মুখে একটু টিসু লেগে আছে।
লোটাসের কথায় আবার লজ্জা পেয়ে যায় রাকিব সাহেব। তারপর মুখে হাত দিয়ে সেটা মুছে ফেলার চেষ্টা করে।
লোটাস এবার একদম শান্ত হয়ে বসে আছে। রাকিব সাহেব হঠাৎ করে একটা কাগজ খুঁজতে থাকে। তারপর টেবিলের এক পাশে তাকিয়ে দেখে দরকারি কাগজটি পানিতে ভিজে একাকার। তাড়াতাড়ি বেল বাটনে চাপ দিতেই একটা কম বয়সী ছেলে আসে সেখানে। তার হাতে কাগজটি দিয়ে বলে,
– যা এটা তাড়াতাড়ি শুকানোর ব্যবস্থা কর।
– জ্বী স্যার। বলে ছেলেটি দ্রুত বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
রুমের মধ্যে পিনপতন নিরবতা। শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ ভেসে আসছে। এরই মধ্যে একজন বয়স্ক লোক হাতে একটি ট্রে নিয়ে ঢোকে। টেবিলে পরিবেশন করে সে চলে যায়। নিরবতা ভেঙ্গে রাকিব সাহেব লোটাসের দিকে তাকিয়ে বলেন,
– নিন চা খান।
– না মানে..
– আপনি কি কফি পছন্দ করেন? দিতে বলি?
– না থাক।
– তাহলে?
– না মানে, ইটস ওকে, নো প্রবলেম। আপনি তো খাচ্ছেন না। নিন শুরু করুন।
রাকিব সাহেব মুচকি হেসে নিজের চায়ের কাপটা হাতে তুলে নেয়। তারপর একটা চুমুক দিয়ে লোটাসের দিকে তাকায়। কেমন যেন খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছেন। লোটাস একবার সেটা দেখে আবার অন্য দিকে তাকায়। কিন্তু না, রাকিব সাহেব যেন লোটাসের দিকে তাকিয়ে কি ভাবছেন। তা না হলে এতক্ষণ কেউ ওভাবে একটা অপরিচিত মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে? চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়ে ফিরে এসে তিনি লোটাসের উদ্দেশ্যে বলেন,
– আচ্ছা হঠাৎ মডেলিংয়ে কেন আসতে চাচ্ছেন?
একটা মিষ্টি হাসি ঝরিয়ে চঞ্চলা হরিনির মতো সারা শরীর দুলিয়ে মেয়েটি বলে,
– কেন মডেলিং কি খুব খারাপ কিছু?
– না, তা নয়। জাস্ট মাই কিউরিসিটি।
– তাহলে আমিও বলতে পারি, ইটস মাই কিউরিসিটি জাস্ট। তারপর হো হো করে হেসে ওঠে। আর সেই হাসির ছটায় যেন বিদ্যুত খেলে যায় চারিদিকে।
রাকিব এবার নিজেকে স্বাভাবিক করে গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করে,
– আপনি নিশ্চয়ই আমাদের কোম্পানী, প্রডাক্ট এবং কন্ডিশানগুলি সম্পর্কে জানেন। বা শুনেছেন।
– আমাকে সফিক সাহেব যতটা বলেছেন, আমি ততটা সম্পর্কেই জানি। যদি এর বাইরে জানার কিছু থাকে, তাহলে আপনি আমাকে ব্রিফ করতে পারেন।
রাকিব সাহেব মনে মনে বললেন, সি ইজ মোর ট্যালেন্টেড। আই থিংক সি ইজ পারফেক্ট সিলেকশান।
সফিক সাহেব এসে দাঁড়ায় রাকিব সাহেবের মুখোমুখি। রাকিব সাহেব মোবাইলে কিছু একটা দেখতে থাকেন। এরপর সফিক সাহেবের উদ্দেশ্যে বলেন,
– আমাকে জরুরি বের হতে হবে। আপনি রফিককে বলবেন ম্যাডামকে পৌছে দেবে।
– জ্বী স্যার। সফিক সাহেব তখনো দাঁড়িয়েই আছেন। তারপর আবার কি একটা ভেবে বললেন,
– স্যার, তাহলে আমি যাই। দেখি রফিক কোথায় আছে। কথা শেষ করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
রাকিব উঠে দাড়ায়। আর লোটাসের উদ্দেশ্যে বলেন,
– তাহলে ঠিক আছে ম্যাডাম। রফিক খুব ভাল ছেলে। আপনার কোন প্রবলেম হবে না। তাছাড়া কোম্পানী আপনাকে যতদিন গাড়ি না দিচ্ছে, ততদিন আপনি এই গাড়িটাই ইউজ করতে পারেন। টেক কেয়ার। কথা শেষ করে রাকিব চেয়ার ছেড়ে বেরিয়ে আসার জন্য পা বাড়ায় তখন লোটাস আবার বাধা দিয়ে বলে,
– এক্সকিউজ মি, জাস্ট ওয়ান সেকেন্ড। আই হ্যাভ এ্যা রিকয়েষ্ট।
– প্লিজ।
– না মানে, কিছু মনে না করলে, আমি কি আপনার সাথে যেতে পারি?
– আমার সাথে! কেন?
– আজ আপনি আমাকে লিফট দিবেন।
রাকিব অবাক হয়ে তাকায় লোটাসের দিকে। মেয়েটি সত্যি স্মার্ট। কি করে আমাকে সে আমার সাথে যেতে চাইল। ওদিকে নাইমা বসে আছে। তাকে নিয়ে যেতে হবে বাইরে। আবার একটা জরুরি মিটিং। কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। লোটাস হয়তো বিষয়টা বুঝতে পেরে পরিবেশটা হালকা করতেই সে আবার বলে,
– না মানে, একা যাবো তো, বোরিং লাগবে। তাছাড়া আপনার সাথে তো তেমন কথাই হলো না। যেতে যেতে না হয় একটু কথাও বলা যাবে।
মেয়েটির স্মার্টনেস দেখে রাকিব মনে মনে হেসে ওঠে। একেবারে ওভারস্মার্ট। আমার জায়গায় অন্য কোন পুরুষ থাকলে হয়তো তেমনই করতো। নাইমা সবসময় আমাকে আনস্মার্ট বলে। তার ধারণা আমি রোমান্টিক নই। তবুও কেন প্রেম করে বিয়ে করলাম। সত্যি তো, বিয়ে ঠিকই হয়েছে। কিন্তু প্রেম হয়নি। পছন্দ হয়েছে, প্রস্তাব পাঠিয়ে বিয়ের আয়োজন। একে কি প্রেম বলা যায়। এসব ভাবতে ভাবতে মুখ ফুটে বলে ফেলে,
– ওকে । তাহলে যাওয়া যাক।
দুজনে পাশাপাশি সিটে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর লোটাস অনেক কথা বলে। দেশে বিদেশে নানান কথা। অনেক খ্যাতিমান মডেলদের কথা। নিজের পছন্দ-অপছন্দ সব কথা বলে চলে। অনুগত শ্রোতার মতো রাকিব সাহেব সে সব শুনেই চলে। কথা বলতে বলতে লোটাস তার বাম হাতটা রাকিব সাহেবের হাতের উপর রাখে। ঝট করে নিজের হাতটা সরিয়ে নেয়। লোটাস সেটা না বোঝার ভান করে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর আবারও অনেক কথা হয়। রাকিব সাহেব অন্যদিকে তাকিয়ে কি যেন দেখতে থাকে। হঠাৎ বুঝতে পারে কারো হাতের মধ্যে নিজের হাতটি আটকে গেল। এবারও চেষ্টা চলছে সেটা ছাড়িয়ে মুক্ত করতে। কিন্তু না, কিছুতেই হাতটি আলগা করা গেল না। অগত্যা পরাজিত সৈনিকের মতো নিজেকে সমর্পিত করে চুপচাপ বসেই রইল। কথা বলা বন্ধ হয়নি লোটাসের। সে কথার পিঠে কথা জুড়ে আস্ত একটা কথা মালা তৈরি করে চলেছে। মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি হচ্ছে। এসির বাসাতেও কেমন গুমোট মনে হতে লাগলো রাকিব সাহেবের। মোবাইলে রিং বেজে ওঠে। হাতটা টানতে গিয়ে বুঝতে পারে হাতের বাঁধন আলগা হয়েছে। মোবাইলের গুরুত্বপূর্ণ কথা শেষ হতেই লোটাস বলল,
– এইতো এখানে রাখলেই হবে। এটাই আমার বাড়ি।
– নিজেদের ?
– না, এটা রেন্ট হাউস।
গাড়ির ব্রেক থামে। ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে দরজা খুলে দাঁড়ায়। লোটাস হ্যান্ড পার্স নিয়ে তাকায় রাকিবের দিকে। রাকিব মিষ্টি করে বলে,
– ওকে ভাল থাকবেন। সি ইউ এগেইন।
লোটাস বিরহী চোখে তাকায় রাকিবের দিকে। যেন কতো দিনের জন্য রেখে যাচ্ছে প্রিয়জনকে। তারপর একসময় বলে,
– একটা কথা বলবো?
– হু বলেন।
– এই ফার্স্ট টাইম আপনি এলেন আমার বাসার সামনে। একটু ভেতরে যাবেন না, তা কি করে হয়।
– না না, আমার জরুরি একটা মিটিং আছে।
– একটু, মানে অনলি ফাইভ মিনিটস। প্লিজ।
লোটাসের কথা শুনে কিছু একটা ভেবে বা হাতের গেট খুলে বেরিয়ে আসেন রাকিব সাহেব। আর অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে আসে লোটাস। আগে আগে লোটাস যায়। পিছে পিছে রাকিব সাহেব এগিয়ে যেতে থাকে। ড্রাইভার একটু নিরাপদে গাড়িটা দাঁড় করায়।
চাবি দিয়ে গেট খুলতেই ড্রইং রুম। সেখানে রাকিব সাহেব বসে। মনে মনে ভাবছে এখানে আসাটা ঠিক হয়নি। মেয়েটি সম্ভবত একা থাকে। মানুষ মাঝে মাঝে নিজের অজান্তেই ভুল করে। আর সেই ভুলের মাশুল তাকে দিতে হয় আজীবন। রাকিব সাহেব হয়তো তেমনই একটি ভুল করে ফেলেছেন। একটি ট্রে হাতে লোটাস আসে সেখানে। তার পরনে একটি স্লিভলেস থ্রি-কোয়ার্টার ড্রেস। ট্রে থেকে দুইটি গ্লাস সাজিয়ে রাখে সামনের টেবিলে। আর ড্রইং রুমেরই রাখা ছিল একটি হুইস্কি বোতল। বোতলের অর্ধেক খালি। সেখান থেকে একটি গ্লাসে ঢালে। অন্য গ্লাসে ঢালতে গেলে বাধা দিয়ে রাকিব সাহেব বলে,
– সরি, আই ডোন্ট টেক ইট।
– ওহ রিয়েলী! আই ক্যান্ট বিলিভ দিস। ইউ আর এ্যা ফেমাস বিজনেস ম্যান বাট..
– ইটস ট্রু ।
সোফার সাইড টেবিলে রাখা সিগারেট নিয়ে মেলে ধরে রাকিবের সামনে। রাকিব সেদিকে একবার তাকিয়ে বলে,
– নো থ্যাঙ্কস।
রাকিবের কথা শুনে গ্লাসে ঢালা এক প্যাক হুইস্কি এক চুমুকে গিলে ফেলে লোটাস। তারপর হো হো করে হেসে ওঠে। আর মুখ থেকে একটা শব্দই বের করে,
– কাওয়ার্ড।
রাকিব ভিষণ ভাবে রেগে যায় মনে মনে। তারপর হঠাৎ উঠে দাঁড়ায়।
– আমাকে যেতে হবে।
– অফকোর্স যাবেন।
– ওকে, বেস্ট অব লাক। বলে রাকিব দরজার দিকে এগিয়ে যায়। পাশে এসে দাঁড়ায় লোটাস। তারপর মাথা নিচু করে শান্ত লক্ষী মেয়ের মতো নরম নীচু গলায় বলে,
– আই এ্যাম সরি, আমি জানি, যা করেছি, ঠিক হয়নি।
– ইটস ওকে।
লোটাস দরজা খুলে দিয়ে এক পাশে দাঁড়ায়। রাকিব সাহেব লিফটে উঠে যায়।
নাইমার চোখের কোন ভিজে ওঠে। ততক্ষণে বেলা বেড়ে অনেকটা উপরে উঠে গেছে। হয়তো এখুনি জবা এসে বলবে, দুপুরের রান্না কি হবে। তাই তড়িঘড়ি করে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। রুম ছেড়ে কিচেনের দিকে যেতেই কানে ভেসে আসে টেলিভিশনের সংবাদ। শুভ নামের এক যুবকের লাশ পাওয়া গেছে উত্তরা একটি হোটেল কক্ষ থেকে। টেলিভিশনের সামনে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে সেদিকে আনমনে তাকিয়ে থাকে। তারপর নিউজটি শেষ হলে গুটি গুটি পায়ে চলে যায় কিচেনের দিকে।
পুলিশ কেসটি নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়েছে। উত্তরার কেস কেন পল্টন থানায় ফোন করে জানানো হলো। অনেক কাজের মধ্যে সুমনের মন জুড়ে আছে উত্তরার খুনের ঘটনা। যদিও এটা আইনত এখন উত্তরা থানার অধিনে তবুও সুমনের যেন দায় ছাড়ছে না। তাই কয়েকবার মনে করেছে একটু খোঁজ নিয়ে জানা দরকার। কি অবস্থায় আছে। ভাবতে ভাবতেই অফিসের টেলিফোন বেজে ওঠে। রিসিভার তুলে জবাব দেয়,
– ইয়েস ওসি সুমন স্পিকিং।
– স্যার, আমি উত্তরা থানা থেকে বলছি, এসপি মারুফ।
– হ্যা বলেন, কি অবস্থা?
– এই তো স্যার, লাশ পোস্ট মোর্টেম করে কেস ফাইল সাজানো হয়েছে।
– বেশ ভাল। তবে কোন ক্লু পেলেন? মানে লাশের কোন ঠিকানা বা অন্য কিছু?
– না স্যার। হোটেলের রেজিস্টার খাতায় যে ঠিকানা লেখা, ওখানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ভুল ঠিকানা স্যার। ওই নামে ওখানে কোন লোক থাকে না।
– এসপি স্যার কি বললেন, মানে পরবর্তী স্টেপ কি হতে পারে?
– সিসিটিভিতে একটি ছেলেকে দেখা গেছে। তাকে আপাতত খুঁজে বের করার কাজ করছি।
– ঠিক আছে মিস্টার মারুফ। দরকার হলে জানাবেন।
– জ্বী স্যার। ওকে স্যার।
লাইন কেটে দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে ভাবতে থাকে সুমন। আচ্ছা এমনকি হতে পারে, খুনি আমাকে চেনে। সে জন্য আমাকেই তার মনে পড়েছে। তাহলে.. আচ্ছা এসআই মারুফ কি বলল? হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজে একজন ছেলের ছবি দেখেছে। অথচ আমাকে খুনের কথা জানিয়েছে একটি মেয়ে। উহ্ কি একটা বিষয়। কি হতে পারে। আমার মনে হয় একবার উত্তরা থানায় যাওয়া উচিত। আর এসপি স্যারকে সব খুলে বলা উচিত। তাহলে কেসটা সলভ করতে সহজ হবে।
রান্নার জন্য সব আয়োজন করে রেখেছে জবা। নাইমা রান্না করে। আজ কিছুতেই রান্না করতে ইচ্ছে করছে না। মন পড়ে আছে ড্রইং রুমে চলতে থাকা টেলিভশনের স্ক্রিণে। কি হচ্ছে সেখানে? না টিভিটা কিছুতেই সচল রাখা যাবে না। যদি জবা দেখে ফেলে? না না কিছুতেই এই নিউজ জবার চোখে পড়তে দেওয়া যাবে না। তাহলে কি করা যায়.. যা হোক পরে এটার ব্যবস্থা করছি।
রাকিব সাহেবের শরীরটা আজ কিছুটা ভাল। তাই তিনি ডাইনিং টেবিলে বসেই খেতে চেয়েছেন। তাই রাকিব সাহেবের পছন্দের রান্না করেছে নিজে হাতে। পাশে বসিয়ে খাওয়াচ্ছে। প্রায় এক বছর হলো এভাবে দুপুরের লাঞ্চ বা ডিনারে দুজনে পাশাপাশি বসে খাওয়া হয় না। আজ দুজনে খেতে বসেনি। একজন খাচ্ছে আর একজন পাশে বসে দেখছে খাওয়া। রাকিব সাহেব দুর্বল হাতে ধীরে ধীরে খাচ্ছে। পাশে বসে আছে নাইমা। পছন্দের শাড়ি পরেছে। কেন চোখে পড়ছে না, সেটা ভেবে এখন আর উদ্বিগ্ন হয় না। এগুলো এখন অতীতের স্মৃতি। তবুও মনে থাকে কিছু কথা, কিছু স্মৃতি যা কখনো ভোলার নয়। এই তো প্রথম যে দিন, নাইমাকে ছাড়া ডিনার করে বাসায় ফিরল রাকিব। সেদিনওতো মেনে নিতে হয়েছিল।
রাতে ডিনেরর টাইম চলে যাচ্ছে। আর নাইমা মোবাইলে রাকিবের সাথে কথা বলার জন্য চেষ্টা করে যাচেছ। কিছুতেই কল রিসিভ করছে না রাকিব। মন খারাপ করে ড্রইং রুমের সোফায় বসে আছে নাইমা। রাত প্রায় একটা বাজে। কলিং বেলের শব্দে উঠে যায় নাইমা। দরজা খুলে ভেতরে আসতেই নাইমা বুঝতে পরে কিছু একটা প্রবলেম হয়েছে। রুমের বাতাসে অদ্ভুত একটা গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। তাছাড়া রাকিবকে কেমন যেন অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। অন্য দিন হলে রাকিব ঘরে ঢুকেই মোবাইল, মানিব্যাগ নাইমার হাতে দিতো। আজ তার দিকে যেন তাকাতেই পারছে না। নাইমাকে রেখে নিজেই রুমের দিকে যেতে থাকে। নাইমা ডেকে বলে,
– কি ব্যাপার তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
– মানে?
– ফ্রেশ হয়ে নাও, ডাইনিংয়ে খাবে এসো।
নাইমার কথা না শোনার ভান করে ভেতরে পা বাড়ায়। নাইমা একটু চিন্তিত হয়ে আবার বলে,
– শরীর খারাপ করেনি তো?
– খেয়ে এসেছি।
– খেয়ে এসছো মানে? তুমি কি কখনো আমাকে ছাড়া ডিনার করেছো?
নাইমার কথা শুনে অনেকটা রেগে গিয়ে রাকিব বলে,
– কখনো খাইনি বলে, আজও খাবো না তারতো কোন মানে নেই।
(চলবে)
লেখক : সাংবাদিক, সাহিত্যিক,
নাট্যকার ও নাট্যপরিচালক।