মহান স্বাধীনতা দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় দিন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তারও আগে ৭ই মার্চের ভাষণে প্রস্তুত জাতি মুহূর্তমাত্র বিলম্ব না করে ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রু সেনাদের প্রতিরোধে। সেই রাতেই রাজারবাগ, পিলখানায় অবস্থানরত পুলিশ বাহিনীর বীর সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অস্ত্র তুলে নেন বিভিন্ন সেনানিবাসে থাকা সৈনিকরাও। মুক্তিরমন্ত্রে উজ্জীবিত জাতি হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে বিজয় ছিনিয়ে আনে। ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।
দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। ষড়যন্ত্রকারীরা ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। একাত্তরের ঘাতকরা ফিরে আসে রাষ্ট্রক্ষমতায়। দেশকে আবার পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার এবং ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা চলতে থাকে। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর জেষ্ঠ কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আজ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার হচ্ছে। সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে দেশ ক্রমে এগিয়ে চলেছে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে। ২০১৫ সালে আমরা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০১৮ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার প্রসার, নারী উন্নয়ন, শিশুমৃত্যুর হার কমানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে আমাদের। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে যাচ্ছে দেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি নদীর তলদেশে টানেল তৈরিসহ নানা মেঘা প্রকল্প চলমান। করোনার থাবায় সারাবিশ্বের অর্থনীতি লন্ডভন্ড হয়ে গেলেও বাংলাদেশ করোনা মোকাবেলায় বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ টিকাদানকারী দেশের তালিকায় প্রথমসারিতে নাম লিখিয়েছে। নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে অতিমারী করোনায় মৃত্যুর হার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, করোনাযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিলেও এর উত্থান ঠেকিয়ে রাখা গেছে। এর মূলে রয়েছে পুলিশ জনতার ঐক্য। এ দেশের মানুষ ধর্মের নামে সহিংসতা সমর্থন করে না। তা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্ম না হলে জন্ম হতো না এই স্বাধীন বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধুর জন্ম বাঙালি জাতির এক অবিস্মরণীয় পাওয়া। বাংলাদেশকে প্রকৃত সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে বঙ্গবন্ধু দৃঢ়তার সাথে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ^দরবারে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিশ^নেতৃবৃন্দ আজ বাংলাদেশের প্রশংসা করছে। বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলাই হোক ‘‘মুজিব জন্মশতবর্ষের অঙ্গিকার”।
0 Comments