ই-পেপার

আহমদ সেলিম রেজা

মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের লাল সবুজের জাতীয় পতাকায় মিশে আছে শহীদের লাল রক্ত। এই রক্ত পুলিশের। এই রক্ত শিক্ষকের, ইপিআরের, কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-জনতার রক্ত। ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। একজন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল, বেশ কয়েকজন এসপিসহ এই পতাকায় পুলিশের ১ হাজার ২৬২ জন পুলিশ সদস্যর রক্ত। এই পতাকার লাল বৃত্তে মিশে আছে।

যারা দেশের জন্য, দেশের পতাকার জন্য জীবন দিয়েছেন। পূর্বসূরীদের রক্ত রঞ্জিত সেই পতাকা প্রতিদিন সকালে মুক্ত আকাশে উড্ডীন ও অভিবাদন জানানোর মাধ্যমে শুরু হয় পুলিশের প্রতিটি দিন। আবার সূর্য ডোবার আগে সেই পতাকা সম্মানের সঙ্গে গুটিয়ে নতুন ভোরের অপেক্ষায় চলে পুলিশের অঙ্গিকার পালনের ২৪ ঘণ্টার রুটিন ওয়ার্ক। সবাই যখন ঘুমাতে যায় পুলিশ তখন জেগে থাকে। মৃত্যু ভয়ে সবাই যখন পালায়- পুলিশ তখন সদলবলে এগিয়ে যায় মৃত্যুকে জয় করতে। জনমনে সৃষ্ট ভয়কে সাহস ও নিরাপত্তায় বদলে দেয় পুলিশ। সাম্প্রতিক অতীতে এটা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, করোনাকালের ভয়াবহ দুর্যোগের সময়। যখন সন্তান পিতা-মাতাকে ছেড়ে পালাচ্ছে, পিতা-মাতা সন্তান রেখে পালাচ্ছে, যখন মৃতের দাফন ও সৎকার করার জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না, তখন পুলিশ অমিত সাহসে এগিয়ে গেছে। জনগণের সেবায় নিয়োজিত হয়েছে। একইভাবে হলি আর্টিজানের সন্ত্রাসী হামলার সময়ে, রমনা বটমূলে বোমা হামলা বা সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলার সময়ে, বাস-ট্রেন-নৌ দুর্ঘটনায়, কেমিকেল কারখানার আগুন বা সীতাকুন্ডের জাহাজ ভাঙ্গা কারখানার ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর সৃষ্ট প্রতিটি ভয় থেকে জনগণকে সাহস ও নিরাপত্তার অভয় বাণী পুলিশই শুনিয়েছে। আর এই অভয়বাণী শোনানোর কাজটা পুলিশ শুরু করেছে ১৯৭১ সাল থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলার মাধ্যমে।

পুলিশ হিসেবে যখন তাদের পাকিস্তানী শাসকদের হুকুমে বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষকে (পাকিদের ভাষায় বিচ্ছিন্নতাবাদিদের) ধর-পাকড়, হত্যা ও নিপীড়ন করার কথা; তখন তারা জীবন ও চাকরির মায়া না করে, মৃত্যুকে ভয় না করে বরং দেশের জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে জনগণকে অভয় বাণী শুনিয়েছে।

কৃষক-ছাত্র-যুবকদের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে- হানাদার বাহিনীর ত্রাসে পরিণত হয়েছে। এজন্য কেউ তাদের দায়িত্ব দেয়নি। তাঁরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণে উদীপ্ত হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম প্রহর থেকে- স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে এ দায়িত্ব তুলে নিয়েছে। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্কে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধের দুর্গ করে দেশের জনগণের কাছে স্বশস্ত্র প্রতিরোধের বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। এরপর মাঠে ময়দানে কৃষক-ছাত্র-যুবকদের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছে। নিজেরা যুদ্ধ করেছে আবার জনগণকে আত্মরক্ষার কৌশল শিখিয়েছে। এভাবেই বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী স্বাধীনতা অর্জনে, স্বাধীনতার অঙ্গিকার রক্ষায় দেশের জননিরাপত্তা ও সামাজিক শান্তি রক্ষার অঙ্গিকার পূরণ করে চলেছে।

‘স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে রাজারবাগের এবং পুলিশের ইতিহাস স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে’-বঙ্গবন্ধু

তাই স্বাধীনতার পর গর্বভরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘যতদিন বাংলার স্বাধীনতা থাকবে, যতদিন বাংলার মানুষ থাকবে, ততদিন এই রাজারবাগের ইতিহাস লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। ২৫ মার্চ রাত্রে যখন ইয়াহিয়া খানের সৈন্য বাহিনী বাংলাদেশের মানুষকে আক্রমণ করে, তখন তারা চারটি জায়গা বেছে নিয়ে তার ওপর আক্রমণ চালায়। সেই জায়গা চারটি হচ্ছে, রাজারবাগ, পিলখানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর আমার বাড়ি। একই সময়ে তারা এই চার জায়গায় আক্রমণ চালায়। রাজারবাগের পুলিশেরা সেদিন সামান্য অস্ত্র নিয়ে বীর বিক্রমে সেই সামরিক বাহিনীর মোকাবেলা করেন। কয়েক ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধ করেন। তারা এগিয়ে আসেন বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করতে। এর জন্য আজ আমি গর্বিত। আজ বাংলার জনগণ গর্বিত। সেদিন বাংলার জনগণের ডাকে, আমার হুকুমে এবং আমার আহবানে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী এগিয়ে এসেছিল মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে। বাংলাদেশের জনগণকে রক্ষা করতে। স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে রাজারবাগের এবং পুলিশের ইতিহাস স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। পুলিশ বাহিনীর অনেক কর্মী এখানে যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তারা রাস্তায় নেমে যুদ্ধ চালিয়েছিলেন নয় মাস পর্যন্ত। যারা পুলিশ বাহিনীর বড় বড় কর্মচারী ছিলেন, তাদেরও অনেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।’

‘বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণ’, চতুর্থ খন্ড থেকে

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আমরা দেখি, মূলত, ৭১ সালের মার্চ মাস থেকেই প্রাদেশিক পুলিশদের উপর থেকে কর্তৃত্ব হারিয়ে ফেলেছিল তৎকালীন সরকার। এ বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদনও ছিল পাকিস্তানী শাসকদের কাছে। তাই তাদের প্রথম আক্রমণ ‘অপারেশন সার্চ’ লাইটের তালিকায়ও ছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্। অপরদিকে সরকারের প্রতিটি মুভমেন্টের বিষয়ে ছিল পুলিশের নজরদারি। তাই দ্রুতই তারা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পেরেছিলেন। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্-এ এই প্রতিরোধ যুদ্ধ বা প্রকাশ্য বিদ্রোহ ছিল পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর কাছে অকল্পনীয়।

একইভাবে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার বা মুজিব নগর সরকারের শপথ গ্রহণ এবং সরকার প্রধানকে বাংলাদেশ পুলিশের গার্ড অব অনার প্রদানের বিষয়টিও ছিল তাদের জন্য বিস্ময়কর। ঝিনাইদহ মহকুমার (বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলা) তৎকালীন সাব-ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার মাহবুবউদ্দিন আহমেদ সেদিন তার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে এই গার্ড অব অনারের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পরে মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি ‘বীর বিক্রম’ খেতাব লাভ করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকা জেলার এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সেই মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে লিখেছেন ‘…১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের রক্তিম ঐতিহাসিক সংগ্রামমুখর দিনগুলোর মধ্যে নিঃসন্দেহে রাজারবাগে পুলিশের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ ও প্রথম বুলেট ছোড়ার অনবদ্য ইতিহাস রজনীতে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র সজ্জিত পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অগ্রসরমান কলামকে থ্রি নট থ্রির অভেদ্য বুলেট ছুড়ে পিছু হঠতে বাধ্য করেছিল রাজারবাগের অকুতোভয় পুলিশ সদস্যরা। শুধু তাই নয়, পুলিশের ওয়ারলেস সেদিন সারাদেশে অগ্রসরমান অপারেশন সার্চ লাইটের খবর ছড়িয়ে পড়তে উৎসাহিত করেছিল। ১ মার্চ থেকে ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ও যুদ্ধমুখর দিনগুলোর সঙ্গে পুলিশ অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ ও উন্মাতাল করে তোলে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, পাবনা, যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোয়ালান্দ, মাগুড়া, নড়াইল, পিরোজপুর এলাকাসমূহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর-বন্দর, খাল-বিল, নদী-নালা, ময়দান, বাজার সর্বত্র অবস্থানরত পুলিশ বাহিনী পাকিস্তানী বাহিনীর মতো একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে সম্মিলিতভাবে প্রথম ধাক্কায় রুখে দিয়েছিল- জনগণের সম্মিলিত শক্তিকে গুছিয়ে ও কাজে লাগিয়ে’।

‘মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পূর্ব পাকিস্তানের সাকুল্যে ৩২ হাজার পুলিশ সদস্যের মধ্যে ১৩ হাজার সরাসরি নিজ নিজ কর্মস্থল ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। বেশিরভাগই যার যার পূর্ব পুরুষের বসতে ফিরে গিয়ে স্থানীয় কমান্ডারদের সঙ্গে মিলে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিশেষ সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ লড়াই করেছে। স্থানীয় যুবকদের ট্রেনিং দিয়েছে। অন্তত সাতশত পুলিশ সদস্য শহীদ হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডে চাকরিরত পুলিশ বাহিনী ব্যতীত আর কোনো সংবিধিবদ্ধ বাহিনী এত অধিক সংখ্যায় মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেনি কিংবা আহত/নিহত হয়নি।’ (-‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের গৌরব গাঁথা’, মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম, ‘গৌরবময় স্বাধীনতা’ শীর্ষক গ্রন্থ থেকে)

তাই প্রতিটি বিজয় দিবসে প্রতিটি স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর নাম সগৌরবে স্বমহিমায় উচ্চকিত হয়। পাঠ্য বইয়ে মুক্তিযুদ্ধে রাজারবাগের পুলিশের প্রতিরোধ যুদ্ধের কথা পড়ানো হোক বা না হোক, বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বের আর সব পুলিশ বাহিনী থেকে স্বতন্ত্র ও গৌরবময় ঐতিহ্যের স্মারক বহনকারী এক বাহিনী। স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত এক বাহিনী। যারা বাহিনীগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা বহন করে চলেছে।

এ বিষয়ে এ সময়ের একজন পুলিশ সার্জেন্ট শরিফুল হাসান শিশির অসাধারণভাবে নিজের অনুভূতির কথা তুলে ধরেছেন তার লেখা গ্রন্থ ‘মুক্তির আলোয়। তিনি লিখেছেন, ‘..যারা পুলিশের পোশাক পরে, এই পোশাকটা নিজ থেকেই তাদের ওপর কিছু দায়িত্ব অর্পণ করে দেয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধকারী যোদ্ধা আমার পুলিশ- এই গর্ব বুকে নিয়েই এ পোশাক পরিধান করি’।

‘পুলিশ হয়ে ওঠা এক বিরাট সাধনার বিষয়। কিছু আইন-কানুন মুখস্থ, শরীরে ইউনিফর্ম আর কোমরে অস্ত্র ধারণ করলেই পুলিশ হওয়া যায় না। মোমবাতির ন্যায় নিজে জ্বলে পৃথিবীকে আলোকিত করার নাম পুলিশিং।’ -(‘মুক্তির আলো’ প্রকাশক জসিম বুক হাউস সিলেট। ২০২০ সালের ৬ মার্চ দৈনিক জনকন্ঠের সাহিত্য পাতায় প্রকাশিত গ্রন্থ আলোচনা থেকে।)

এ কী শুধুই একজন পুলিশ কর্মকর্তার অনুভূতি? নাকি এরমধ্যে লুকিয়ে আছে প্রতিশ্রুতি পালনের অঙ্গিকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুলিশের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে কী এই প্রতিশ্রুতি রক্ষার আহ্বানই জানাননি? বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘পুলিশ বাহিনীর ভাইয়েরা, এই রাজারবাগে যারা শহীদ হয়েছিলেন, তাদের কথা মনে রাখতে হবে। তারা আপনাদেরই ভাই। তারাও পুলিশে চাকরি করতেন। জনগণের সঙ্গে তারা হাত মিলিয়েছিলেন। ত্রিশ লক্ষ লোকের সঙ্গে পুলিশের অনেক লোকও আত্মত্যাগ করেছিলেন। তাদের রক্ত যেন বৃথা না যায়। তাদের ইজ্জত আপনারা রক্ষা করবেন। তাদের সম্মান আপনারা রক্ষা করবেন। তাদের আত্মা যাতে শান্তি পায়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতা পাওয়া যেমন কষ্টকর, স্বাধীনতা রক্ষা করাও তেমনি কষ্টকর।’

পুলিশের ভূমিকা উপেক্ষিত কেন?

অনেক ইতিহাসবিদ ও গবেষক মনে করেন, নিবিড় গবেষণার অভাবে মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা অনেকটাই উপেক্ষিত। কিন্তু পুলিশকে উপেক্ষিত রেখে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস রচনা সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি গণযুদ্ধ, জনগণকে সম্পৃক্ত করে এই যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে বলে নয় মাসেই এই যুদ্ধের সাফল্য পাওয়া গেছে। আর জনগণকে এই যুদ্ধে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান এবং রাজারবাগ থেকে পুলিশের স্বশস্ত্র প্রতিরোধ গড়া এবং গ্রামে-গঞ্জে সেই প্রতিরোধ যুদ্ধ বিস্তার ও গেরিলা যুদ্ধ সংগঠিত করতে রাজনৈতিক নেতৃত্বে পাশাপাশি পুলিশের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক যুদ্ধের ইতিহাসের মতো মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্লেষণ করলে তা হবে অপূর্ণাঙ্গ। বিশ্বের কোন সামরিক যুদ্ধ নয় মাসে শেষ হয়নি কেন? জনগণকে সংগঠিত করে গণপ্রতিরোধ ও জনযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা এবং মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা মূল্যায়নের মাধ্যমই এই প্রশ্নের মিমাংসা সম্ভব।

জানা যায়, রাজারবাগসহ দেশের বিভিন্নস্থানে প্রায় ১৪ হাজার পুলিশ সদস্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের দলিল অনুযায়ী ১২৬২ জন পুলিশ সদস্য দেশের জন্য, দেশের পতাকার জন্য জীবন দিয়েছেন। কিন্তু আফসোসের বিষয় দেশের ঐতিহাসিকরা পুলিশের অবদানকে অবহেলা করেছেন। এমনকি কোনো পুলিশ সদস্যকে বীরশ্রেষ্ঠ করা হয়নি এবং বাংলাদেশ পুলিশকে প্রথম স্বাধীনতা পদক দেয়া হয় স্বাধীনতার ৪০ বছর পর, ২০১১ সালে।

মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা উপেক্ষিত রেখে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা যাবে না। তবে আশার কথা মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অবদান নিয়ে ইদানিং গবেষণা, লেখালেখি এমনকি চলচিত্র নির্মাণ শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পুলিশের অবদান নিয়ে শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’ নামে সর্বপ্রথম একটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেন ২০১৮ সালে। ইতোমধ্যে বইটির ২য় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। ‘শহীদ পুলিশের রক্তের ঋণ’ নামেও একটি বই লিখেছেন বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি (বর্তমানে অতিঃ ডিআইজি) আবিদা সুলতানা।

পুলিশের আত্মত্যাগ ও কৃতিত্ব নিয়ে ‘অর্জন-৭১ নামে সিনেমা নির্মাণ করছেন মির্জা সাখাওয়াত হোসেন। ওই সিনেমার কাহিনি রচিত হয়েছে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস আই আব্দুল কাদের মিয়াকে নিয়ে। সিনেমার পরিচালক সাখাওয়াত এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর অংশগ্রহণ, রাজারবাগ আক্রমণ ও প্রতিরোধ যুদ্ধ, সারদা পুলিশ একাডেমিতে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকারকে পুলিশের নেতৃত্বে গার্ড অব অনার দেওয়া এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ আব্দুল কাদের মিয়ার আত্মত্যাগ সব নিয়েই সিনেমার চিত্রনাট্য সাজানো হয়েছে।’

ইতিহাসের পাতায় একাত্তর এলো যেভাবে

১৯৪৭ সালে ১৪ আগষ্ট পাকিস্তান ও ১৫ আগষ্ট ভারত ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধানীতা লাভ করেছিল। পূর্ব বাঙলার বাঙালিদের আন্দোলন সংগ্রামের ফসল হিসেবেই জন্ম নিয়েছিল পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রটি। পূর্ব-পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান নামের দু’টি প্রদেশ নিয়ে গঠিত এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই শুরু হয় বাঙালিদের অবহেলা, শোষণ ও নিপীড়ন। পাকিস্তানের তথাকথিত অভিজাত ও ধনিক শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের দারিদ্রতাকে উপহাস করতো। মুসলমান হিসেবেও স্বীকার করতে চাইতো না। বাঙালি মুসলমানদের তারা মনে করতো আধা হিন্দু। বাঙালি হিন্দুরা বাংলা ভাষায় কথা বলে, বাঙালি মুসলমানরাও বাংলায় কথা বলে। তাই তারা প্রথমেই বাংলার সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিতে চায়। পাকিস্তানি অভিজাত শ্রেণীর চোখে বাংলাভাষা হয়ে যায় অন্তজ শ্রেণি বা নিম্নবর্ণের ভাষা। তাই ১৯৪৮ সালেই তারা বাংলাভাষার উপর আঘাত হানে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা মানতে অস্বীকার করে। এরপর শিক্ষা, চাকুরি, ব্যবসা-বাণিজ্যে শুরু বাঙালিকে উপক্ষোর পালা। শুরু হয় অর্থনৈতিকভাবে শোষণ। এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে করতে সংগঠিত হয় বাঙালি। চায় রাজনৈতিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী বিজয় লাভ করলে, বাঙালির এই রাজনৈতিক উত্থানকেও মেনে নিতে অস্বীকার করে তারা। ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সংসদ ডেকে আবার তা স্থগিত করে দেয়। তারপর প্রকাশ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার নামে মুজিব-ভুট্টো আলোচনার শুরু করে। অন্যদিকে রাতের অন্ধকারে ঢাকায় বাড়াতে থাকে পাকিস্তানি সেনাদের সংখ্যা। প্রতিদিন বিমানে, সড়ক পথে বা ট্রেনে সেই সেনাবাহিনী ও অস্ত্র-শস্ত্র যাচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে। এ দেশের মানুষ কিছুই বুঝে উঠতে না পারলেও সবার আগে বিষয়টি ধরা পড়ে পুলিশের চোখে।

পুলিশের প্রথম প্রতিরোধ হঠাৎ নয়

মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর অবদান শুধু ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্-এ হঠাৎ গড়ে ওঠা কোন প্রতিরোধ যুদ্ধ বা ওর মধ্যেই প্রতিরোধটা সীমিত ছিল না। এই প্রতিরোধ বারুদের মতো জ্বলে উঠেছিল দেশময়। কারণ প্রতিদিন বিমানে, সড়ক পথে বা ট্রেনে পাকিস্তানী সেনা ও অস্ত্র-শস্ত্রের মুভমেন্ট সবার আগে ধরা পড়েছিল পুলিশের চোখে। এয়াপোর্টে, বন্দরে, রেলে, ট্রাফিকে, এমনকি প্রটোকল প্রটেকশনে থাকা পুলিশ সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনার পাশাপাশি বিষয়টি বঙ্গবন্ধুর কানেও তোলে। এরমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় বাঙালি বিহারী সংঘাত শুরু হয়। এরমাঝে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দেন। অপরদিকে পাকিস্তানীরা শুরু করে বাঙালি হত্যার নীলনকশা। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই নীনকশায় ছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইনসহ ঢাকার চারটি স্পটে আক্রমণের ষড়যন্ত্র।

‘অপারেশন সার্চলাইট’

পুলিশের নথি থেকে জানা যায়, ২৫ মার্চ দুপুর ২টার পর থেকেই পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা নানা ধরনের গোয়েন্দা তথ্য পেতে থাকেন। এরপরই কন্ট্রোল রুম থেকে শহরের বিভিন্নস্থানে পুলিশের টহল টিম পাঠানো হয়। বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা শহরের আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক থাকার বিষয়ে খবর দিতে শুরু করেন।

রাত ১০টার দিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে পুলিশের একটি টহল টিম বেতার মারফত জানায়, শহরের দিকে বিশাল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এগিয়ে আসছে পাকবাহিনীর একটি বড় ফোর্স। রাত যখন সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে তখন খবর আসে, তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান ও বর্তমানে রমনা পার্কের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে সেনাবাহিনীর বেশ কিছু সাঁজোয়া যান অপেক্ষা করছে। এসব খবর পেয়ে রাজারবাগের বাঙালি পুলিশ সদস্যরা বিহারী ও পাঞ্জাবী পুলিশদের ফাঁকি দিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

রাত ১১.৩৫ মিনিটে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্-এ ঘণ্টা পিটিয়ে সবাইকে সতর্ক বার্তা দেয়া হয়। পূর্ব পরিকল্পনা মতো নির্ধারিত জায়গায় একত্রিত হন রাজারবাগ পুলিশ সদস্যরা। অস্ত্রাগারের তালা ভেঙে নিজেদের মধ্যে অস্ত্র ও গোলাবারুদ বিতরণ করেন। প্রতিরোধ যুদ্ধে প্রস্তুতি হিসেবে কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে পুলিশ লাইনের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েন তারা। ব্যারাকের আড়ালে, দালানের ছাদে, নর্দমায় অবস্থান নেন একাত্তরের প্রতিরোধ যুদ্ধের বিদ্রোহী বাঙালী পুলিশ। এরআগে রাত সাড়ে ১১টায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গাড়ি বহর পুলিশ লাইনস্-এ হামলা চালানোর জন্য শান্তিনগর মোড়ে পৌঁছায়। এরমাত্র ৫ মিনিট পর হানাদার সেনাদের কনভয় রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্ মেইন গেটে এসে পৌঁছে। তার আগেই বাঙালি পুলিশ সদস্যরা কৌশলগত স্থানে পজিশন নিয়েছে। কিন্তু পুলিশের প্রতিরোধের বিষয়ে হানাদার বাহিনীর সদস্যরা ছিল একেবারেই অন্ধকারে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বর্বর পাক হানাদার বাহিনী হামলা শুরু করে রাত পৌনে বারোটার দিকে। তারা কোন প্রতিরোধ আশা করেনি। প্রথম আক্রমণ হয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইনের দক্ষিণ-পূর্ব দিক (পুলিশ হাসপাতাল কোয়ার্টার সংলগ্ন) থেকে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্যারেড গ্রাউন্ডের উত্তর-পূর্ব দিক (শাজাহানপুর ক্রসিং) থেকে আক্রমণ শুরু হয়। কিন্তু সেদিন একজন পুলিশও ভয়ে মাথা নত করেনি। বরং হানাদার বাহিনীর অত্যাধুনিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে অকুতোভয় পুলিশ সদস্যরা নির্ভিকচিত্তে চোখে চোখ রেখে থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। কিন্তু পুলিশের যুদ্ধ কৌশলের কারণে এতেই হতচকিত হয়ে গিয়েছিল তারা। ঘুমন্ত পুলিশকে হত্যা ও বন্দি করতে এসেছিল তারা। কিন্তু পুলিশ এমনভাবে অবস্থান নিয়ে কাউন্টার এ্যাটাকে গিয়েছিল যে, উপরে নিচে,ডানে-বামে চারিদিক থেকে গুলি বর্ষণের ঘটনাকে তাদের থমকে দিয়েছিল ক্ষাণিকক্ষণ।

সেই রাতে রাজারবাগ ওয়ারলেস অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালনকারীদের অন্যতম ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়া। তিনি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাতকারে সে রাতের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্-এ হামলার পর পুলিশ সদস্যরাও পাক হানাদার বাহিনীকে লক্ষ্য করে থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে গুলি করে আক্রমণের পাল্টা জবাব দেন। পাল্টা আক্রমণে হতভম্ব হয়ে পড়ে পাক বাহিনী। পরে আরও শক্তি নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্। এতে অনেকেই সেই রাতে ও পরের দিন শহীদ হন।’

তিনি আরো বলেন, কাল বিলম্ব না করে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের সকল বিভাগ ও জেলা শহরের পুলিশ স্টেশনগুলোতে একটি মেসেজ পাঠিয়ে দেন। বার্তাটি ছিলো নিম্নরূপ-

Base for all station of East Pakistan police, keep listening, watch, we are already attacked by the pak army. Try to save yourself, over.

এদিকে হানাদার বাহিনী নিজেরা আক্রান্ত হয়ে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ট্যাঙ্কবহর চেয়ে পাঠায়। রাত ১২টা ৩০ মিনিটে ট্যাঙ্ক বহর আসে। এসময় কামান ও মেশিনগান দিয়ে হানাদার বাহিনী আবার আক্রমণ শুরু করে। এসময় পিআরএফ-এর চারটি ব্যারাকে আগুন ধরে যায়। ট্যাঙ্ক নিয়ে তারা পুলিশের প্যারেড গ্রাউন্ডে ঢুকে পড়ে। এ আক্রমণে হানাদার বাহিনীর প্রায় আটশ সেনা অংশ নেয়। এসময় পুলিশ একটি গ্রুপের সদস্যরা কৌশল পরিবর্তন করে গেরিলা কায়দায় আক্রমণ হানাদার বাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখার কৌশল নেয়। এসময় হানাদার বাহিনীর অনেকেই হতাহত হয়। রাত সাড়ে তিনটায় কামানের মর্টার সেল নিক্ষেপ বন্ধ হয়। এরআগেই গোলা-বারুদ ও অস্ত্র নিয়ে পুলিশের দুইটি গ্রুপ মালিবাগ ও শান্তিবাগ দিয়ে পুলিশ লাইনস্ ত্যাগ করে। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্-এ সেই অস্ত্র এরপর ছড়িয়ে গেছে দেশ জুড়ে। ব্যবহৃত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ ও সম্মুখ সমরে।

মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যবাহী সেই বাংলাদেশ পুলিশ আজ বিশ্বের আধুনিক পুলিশ বাহিনীর একটি। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে তারা সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছে। দেশ মাতৃকার সেবায় বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য সংখ্যা ২লাখ ১২ হাজার ৭২৪। এরমধ্যে থানা পুলিশের কার্যক্রমের বাইরেও রয়েছে পুলিশের বিশেষায়িত বিভিন্ন চৌকষ টিম। যেমন, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব), বিশেষ নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা ব্যাটালিয়ন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, অপরাধ অনুসন্ধান বিভাগ (সিআইডি), ইমিগ্রেশন পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, রেঞ্জ ও জেলা পুলিশ, এন্টি টেররিজম ইউনিট, নৌ পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ, শিল্পাঞ্চল পুলিশ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ ইত্যাদি।

বিজয়ের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ যোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অভিবাদন। সকল শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলী।

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে/বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা/আমরা তোমাদের ভুলবো না।

লেখক : সাংবাদিক।

ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন :)