ই-পেপার

অমিতাভ চৌধুরী

এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;

জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে

চলে যেতে হবে আমাদের।

চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ

প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,

এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি

নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

-সুকান্ত ভট্টাচার্য

শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত। তারাই আগামী দিনে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবে। জ্ঞান চর্চা ও প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হয়ে গড়ে তুলবে সকলের জন্য কল্যাণকর নতুন বিশ্ব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের জন্য সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। জাতির পিতা ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করেন। জাতিসংঘ ১৯৮৯ সালে শিশু অধিকার সনদ ঘোষণার ১৫ বৎসর পূর্বে ১৯৭৪ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের অধিকার সুরক্ষার জন্য শিশু আইন প্রনয়ণ করেন। সদ্য স্বাধীন দেশে শিশুর শিক্ষা, সুরক্ষা ও উন্নয়নে কল্যাণকর বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের শিক্ষা, পুষ্টি, সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন আইন, নীতি ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। বর্তমান সরকার শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও শিশু বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শিশু অধিকার বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার শিশু অধিকার সনদের সঙ্গে মিল রেখে ২০১৩ সালে শিশু আইন-২০১৩ পাশ করে। এই আইনের আলোকে শিশু অধিকার নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

শিশু অধিকার বিষয়ে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নীতি ও আইন রয়েছে। শিশুশ্রম নিরসন আইন, শিশুনীতি, শিশু আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রভৃতি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এই আইন ও নীতিগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করে। এসব মন্ত্রানালয়ের সাথে সাথে বাংলাদেশ পুলিশও শিশু অধিকার ও শিশুদের নির্যাতন প্রতিরোধে নানাবিধ কাজ করে থাকে,যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । 

শিশু আইন ২০১৩ তে শিশুদের সাথে পুলিশের কিরুপ ব্যবহার করতে হবে তার সুনির্দিষ্ট বিবরণ দেয়া আছে-

শিশুবিষয়ক ডেস্ক গঠনঃ

(১)        স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রত্যেক থানায়, সাব-ইন্সপেক্টর এর নিম্নে নহে এমন একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদানক্রমে, একটি শিশুবিষয়ক ডেস্ক গঠন করিবে :

তবে শর্ত থাকে যে, কোন থানায় মহিলা সাব-ইন্সপেক্টর কর্মরত থাকিলে উক্ত ডেস্ক এর দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে তাহাকে অগ্রাধিকার প্রদান করিতে হইবে।

(২)       উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত শিশুবিষয়ক ডেস্ক এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা হিসাবে অভিহিত হইবেন।

শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কার্যাবলিঃ

* শিশুবিষয়ক মামলার জন্য পৃথক নথি ও রেজিস্টার সংরক্ষণ করা;

* কোন শিশু থানায় আসিলে বা শিশুকে থানায় আনয়ন করা হইলে-

* প্রবেশন কর্মকর্তাকে অবহিত করা;

* শিশুর মাতা-পিতা এবং তাহাদের উভয়ের অবর্তমানে শিশুর তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ অথবা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক বা, ক্ষেত্রমত, বর্ধিত পরিবারের সদস্যকে অবহিত করা এবং বিস্তারিত তথ্যসহ আদালতে হাজির করিবার তারিখ জ্ঞাত করা;

* তাৎক্ষণিক মানসিক পরিসেবা প্রদান করা;

* প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং, প্রয়োজনে, ক্লিনিক বা হাসপাতালে প্রেরণ করা;

* শিশুর মৌলিক চাহিদা পূরণ করিবার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা;

* সঠিকভাবে শিশুর বয়স নির্ধারণ করা হইতেছে কি না বা নির্ধারণ করিবার ক্ষেত্রে শিশুর জন্ম নিবন্ধন সনদ বা এতদ্সংশ্লিষ্ট বিশ্বাসযোগ্য দলিলাদি পর্যালোচনা করা হইতেছে কি না তদ্বিষয়ে লক্ষ্য রাখা;

* প্রবেশন কর্মকর্তার সহিত যৌথভাবে শিশুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মূল্যায়নপূর্বক বিকল্পপন্থা অবলম্বন এবং সম্ভাব্যতা যাচাইপূর্বক জামিনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা;

* বিকল্পপন্থা অবলম্বন বা কোন কারণে জামিনে মুক্তি প্রদান করা সম্ভবপর না হইলে আদালতে প্রথম হাজিরার পূর্বে সংশ্লিষ্ট শিশুকে নিরাপদ স্থানে প্রেরণের ব্যবস্থা করা;

* প্রতি মাসে শিশুদের মামলার সকল তথ্য প্রতিবেদন আকারে থানা হইতে নির্ধারিত ছকে প্রবেশন কর্মকর্তার নিকট এবং পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট এর কার্যালয়ের মাধ্যমে পুলিশ সদর দপ্তর ও, ক্ষেত্রমত, জেলা আইনগত সহায়তা প্রদান কমিটির নিকট প্রেরণ করা;

* বিধি দ্বারা নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করা; এবং

* উপরি-উক্ত কার্যাবলি সম্পাদনের প্রয়োজনে অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

প্রবেশন কর্মকর্তা নিয়োগঃ (শিশু আইন ২০১৩ এর ২৪ নং আইনের ২য় অধ্যায়ে)

(১) এই আইনের অধীন দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার, ক্ষেত্রমত, প্রত্যেক জেলা, উপজেলা এবং মেট্রোপলিটন এলাকায় এক বা একাধিক প্রবেশন কর্মকর্তা নিয়োগ করিবে।

(২) উপ-ধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইন কার্যকর হইবার অব্যবহিত পূর্বে, বিদ্যমান অন্য কোন আইনের অধীন কোন ব্যক্তিকে প্রবেশন কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ করা হইলে, তিনি, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত, এই আইনের অধীন প্রবেশন কর্মকর্তা হিসাবে এমনভাবে দায়িত্ব পালন করিবেন যেন তিনি উপ-ধারা (১) এর অধীন নিয়োগপ্রাপ্ত হইয়াছেন।

(৩) কোন এলাকায় প্রবেশন কর্মকর্তা নিয়োগ না করা পর্যন্ত সরকার, প্রবেশন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের জন্য, অধিদপ্তরে এবং উহার নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় কর্মরত সমাজসেবা কর্মকর্তা বা সমমানের অন্য কোন কর্মকর্তাকে প্রবেশন কর্মকর্তার দায়িত্ব অর্পণ করিতে পারিবে।

প্রবেশন কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ

১। আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু বা আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশুকে থানায় আনয়ন করা হইলে অথবা অন্য কোনভাবে থানায় আগত হইলে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে,-

(ক)      আনয়ন বা আগমনের কারণ অবগত হওয়া;

(খ)       সংশ্লিষ্ট শিশুর সহিত সাক্ষাৎ করা এবং সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদানের বিষয়ে তাহাকে আশ্বস্ত করা;

(গ)       সংশ্লিষ্ট অভিযোগ বা মামলা চিহ্নিত করিতে পুলিশের সহিত যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করা;

(ঘ)       সংশ্লিষ্ট শিশুর মাতা-পিতার সন্ধান করা এবং তাহাদের সহিত যোগাযোগ করিতে পুলিশকে সহায়তা করা;

(ঙ)       শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তার সহিত শিশুর জামিনের সম্ভাব্যতা যাচাই বা, ক্ষেত্রমত, তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট মামলার প্রেক্ষপট মূল্যায়নপূর্বক বিকল্পপন্থা গ্রহণ করা;

(চ)       বিকল্পপন্থা অবলম্বন বা যুক্তিসঙ্গত কোন কারণে জামিনে মুক্তি প্রদান করা সম্ভবপর না হইলে আদালতে প্রথম হাজিরার পূর্বে সংশ্লিষ্ট শিশুকে, শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে, নিরাপদ স্থানে প্রেরণের ব্যবস্থা করা; এবং

(ছ)       বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করা;

২। আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু বা আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশুকে শিশু-আদালতে উপস্থিত করা হইলে-

(ক)      আদালতে অবস্থান বা বিচারকালীন আদালতে উপস্থিত থাকা এবং যখনই প্রয়োজন হইবে, সংশ্লিষ্ট শিশুকে, যতদূর সম্ভব, সঙ্গ প্রদান করা;

(খ)       সরেজমিনে অনুসন্ধানপূর্বক সংশ্লিষ্ট শিশু ও তাহার পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনাক্রমে, সামাজিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রস্তুত এবং আদালতে দাখিল করা;

(গ)       শিশুকে, প্রয়োজনে, জেলা আইনগত সহায়তা প্রদান কমিটির মাধ্যমে আইনগত সহায়তা প্রদানসহ শিশুর পক্ষে আইনগত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা;

(ঘ)       শিশুর জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করিবার নিমিত্ত, উপ-দফা (ই) এর উদ্দেশ্যকে ক্ষুণ্ন না করিয়া, প্রয়োজনে, বেসরকারি পর্যায়ে কর্মরত আইনগত সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার সহিত যোগাযোগ করা এবং শিশুর পক্ষে আইনগত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা; এবং

(ঙ)       বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করা;

৩। আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশুকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র বা কোন প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করা হইলে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে,-

(ক)      প্রত্যেক শিশুর জন্য পৃথক নথি প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করা;

(খ)       ধারা ৮৪ তে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ ও যথাযথ পরিচর্যা নিশ্চিত করা;

(গ)       নিয়মিত বিরতিতে শিশুর সহিত সাক্ষাৎ করা বা শিশুর ইচ্ছা অনুযায়ী তাহার যাচিত সময়ে তাহাকে সাক্ষাৎ প্রদান করা;

(ঘ)       মাতা-পিতা, বর্ধিত পরিবার বা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক সংশ্লিষ্ট শিশুর তত্ত্বাবধানের শর্তাবলী সঠিকভাবে পালন করিতেছেন কি না তাহা, যতদূর সম্ভব, পর্যবেক্ষণ বা মনিটর করা;

(ঙ)       শিশুর আনুষ্ঠানিক ও কারিগরী শিক্ষা সঠিকভাবে প্রদত্ত হইতেছে কি না তাহা সরেজমিনে তদারকি করা;

(চ)       নিয়মিত বিরতিতে, শিশুর আচরণ এবং শিশুর জন্য গৃহীত ব্যবস্থার যথার্থতা সম্পর্কে, আদালতকে অবহিত করা এবং আদালত কর্তৃক তলবকৃত প্রতিবেদন দাখিল করা;

(ছ)       শিশুকে সৎ উপদেশ প্রদান করা, যথাসম্ভব বন্ধুভাবাপন্ন করিয়া তোলা এবং এতদুদ্দেশ্যে তাহাকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা; এবং

(জ)      বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করা;

৪। আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু বা আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশুর ক্ষেত্রে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে,-

(ক)      বিকল্পপন্থা বা বিকল্প পরিচর্যার শর্তাবলী পর্যবেক্ষণ করা; এবং

(খ)       বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করা।

শিশু ও বিচার প্রক্রিয়াঃ

পুলিশ রিপোর্ট (investigation report) বা অনুসন্ধান প্রতিবেদন (inquiry report) বা তদন্ত প্রতিবেদন (enquiry report) পৃথকভাবে প্রস্তুত ও আমলে গ্রহণ

(১) ফৌজদারি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো অপরাধ সংঘটনে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ও শিশু জড়িত থাকিলে, পুলিশ রিপোর্ট (জি.আর মামলার ক্ষেত্রে) বা ক্ষেত্রমত, অনুসন্ধান প্রতিবেদন (সি.আর মামলার ক্ষেত্রে) বা তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুর জন্য পৃথকভাবে প্রস্তুত করিয়া দাখিল করিতে হইবে।

(২) ফৌজদারি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ও শিশু কর্তৃক একত্রে সংঘটিত কোনো অপরাধ আমলে গ্রহণের ক্ষেত্রে তাহাদের অপরাধ পৃথকভাবে আমলে গ্রহণ করিতে হইবে।]

মামলা বিচারের জন্য প্রেরণ বা স্থানান্তর:

কোনো অপরাধ আমলে গ্রহণ করিবার পর, মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত করিয়া-

(ক)      শিশু কর্তৃক সংঘটিত অপরাধ বিচারের জন্য মামলাটি প্রয়োজনীয় কাগজাদিসহ শিশু আদালতে প্রেরণ করিতে হইবে;

(খ)       প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি কর্তৃক সংঘটিত অপরাধ বিচারের জন্য মামলাটি প্রয়োজনীয় কাগজাদিসহ এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতে প্রেরণ করিতে হইবে; এবং

(গ)       দফা (ক) ও (খ) এর অধীন মামলা প্রেরণের বিষয়টি পাবলিক প্রসিকিউটরকে অবহিত করিতে হইবে।]

* ধারা ১৫ শিশু (সংশোধন) আইন, ২০১৮ (২০১৮ সনের ৫৪ নং আইন) এর ৩ ধারাবলে প্রতিস্থাপিত।

* ধারা ১৫ক শিশু (সংশোধন) আইন, ২০১৮ (২০১৮ সনের ৫৪ নং আইন) এর ৪ ধারাবলে সন্নিবেশিত।

(ঘ)       শিশুর মাতা-পিতা এবং তাহাদের উভয়ের অবর্তমানে শিশুর তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ অথবা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক বা, ক্ষেত্রমত, বর্ধিত পরিবারের সদস্যকে অবহিত করা এবং বিস্তারিত তথ্যসহ আদালতে হাজির করিবার তারিখ জ্ঞাত করা;

(ঙ)       তাৎক্ষণিক মানসিক পরিসেবা প্রদান করা;

(চ)       প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং, প্রয়োজনে, ক্লিনিক বা হাসপাতালে প্রেরণ করা;

(ছ)       শিশুর মৌলিক চাহিদা পূরণ করিবার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা;

(জ) সঠিকভাবে শিশুর বয়স নির্ধারণ করা হইতেছে কি না বা নির্ধারণ করিবার ক্ষেত্রে শিশুর জন্ম নিবন্ধন সনদ বা এতদ্সংশ্লিষ্ট বিশ্বাসযোগ্য দলিলাদি পর্যালোচনা করা হইতেছে কি না তদ্বিষয়ে লক্ষ্য রাখা;

(ঝ) প্রবেশন কর্মকর্তার সহিত যৌথভাবে শিশুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মূল্যায়নপূর্বক বিকল্পপন্থা অবলম্বন এবং সম্ভাব্যতা যাচাইপূর্বক জামিনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা;

(ঞ) বিকল্পপন্থা অবলম্বন বা কোন কারণে জামিনে মুক্তি প্রদান করা সম্ভবপর না হইলে আদালতে প্রথম হাজিরার পূর্বে সংশ্লিষ্ট শিশুকে নিরাপদ স্থানে প্রেরণের ব্যবস্থা করা।

নির্যাতিত নারী ও শিশুদের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন উদ্যোগঃ

ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারঃ

নির্যাতিত নারী ও শিশু ভিকটিমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, আবাসন, খাবার, পোষাক ও বিনোদন প্রদান (৫ দিন পর্যন্ত), মানসিক কাউন্সিলিং এবং প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা প্রদানের জন্য কিছু সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সহযোগীতায় ৭টি মেট্রোপলিটন এলাকায় (বিভাগীয় শহর) ৭টি এবং পার্ববত্য অঞ্চলের জন্য রাঙ্গামাটি জেলায় ১টি সহ মোট ৮টি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার

১। ঢাকাঃ তেজগাঁও থানা কম্পাউন্ড

২। সিলেটঃ কোতয়ালী থানা কম্পাউন্ড

৩। চট্রগ্রামঃ ডাবলমুরিং থানা কম্পাউন্ড

৪। রংপুরঃ কোতয়ালী থানা কম্পাউন্ড

৫। খুলনাঃ সোনাডাঙ্গা থানা কম্পাউন্ড

৬। বরিশাল কোতয়ালী থানা কম্পাউন্ড

৭। রাজশাহীঃ শাহ্ মখদুম থানা কম্পাউন্ড

৮। রাঙ্গামাটিঃ কোতয়ালী থানা কম্পাউন্ড

উইমেন সাপোর্ট সেন্টার (নারী সহায়তা কেন্দ্রঃ

দেশের সকল জেলার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এবং মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ উপ-কমিশনার এর কার্যালয়ে সর্বমোট ৭৭টি নারী সহায়তা কেন্দ্র রয়েছে। এ সকল কেন্দ্রের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ইউনিট সমূহের আওতাধীন এলাকার সেবা প্রত্যাশীদের নিকট হতে অভিযোগ গ্রহণ ও কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে সমস্যা নিস্পত্তি করার জন্য সহায়তা প্রদান করা হয়। সেবা পেতে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার কার্যালয় বা মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ উপ-কমিশনার এর কার্যালয়ে যোগাযোগ করুন।

  • উইমেন হেল্প ডেক্সঃ

UNFPA এর STOP Gender Based Violence প্রকল্পের অধীনে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় নিন্মোক্ত ১৫টি থানায় “উইমেন হেল্প ডেক্স” এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ভিকটিমদের কাউন্সিলিংসহ প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

* ডিএমপিঃ মোহাম্মদপুর, পল্লবি, কামরাঙ্গীরচর

* জামালপুরঃ সদর, বকশিগঞ্জ, মাদারগঞ্জ

* কক্সবাজারঃ সদর, রামু, চকরিয়া

* পটুয়াখালিঃ সদর, গলাচিপা, বাউফল

* বগুড়াঃ সদর, সোনাতলা, পত্নীতলা

* BD Police Helplinet

BD Police Helpline বাংলাদেশ পুলিশের একটি Mobile App নির্ভর সেবা প্রদানের ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে নারী-শিশুসহ যে কোন নাগরিক তাদের সমস্যা ও অভিযোগ জানাতে পারেন।

সেবা গ্রহণ পদ্ধতিঃ যে কোন এন্ড্রয়েড বা আইএসও মোবাইল ফোনের App Stor এ গিয়ে App টি ডাউনলোড করে আপনার মোবাইলে ইন্সটল করে নিন। তারপর প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানপূর্বক রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করুন। এখন আপনি আপনার সমস্যা ও অভিযোগ জানাতে পারেন।

এছাড়াও নারী ও শিশুদের প্রতি যে কোন ধরনের সহিংসতার ক্ষেত্রে জরুরী প্রয়োজনে যে কোন সময় (২৪/৭) পুলিশের সহায়তা পেতে ৯৯৯ নম্বরে কল করুন।

মুজিববর্ষে দেশের প্রতি থানায় চালু হচ্ছে হেল্প ডেস্ক। এই ডেস্ক থেকে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীরা সহজে আইনি সহায়তা পাবে। এরই মধ্যে নানা ধরনের প্রস্তুতির কাজও হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ডেস্কে কমপক্ষে একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। ডেস্কটি এমনভাবে সাজানো হবে, যাতে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীরা সহজেই তাদের অভিযোগের বিষয়ে মন খুলে কথা বলতে পারে।

শিশু অধিকার নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারের সামগ্রিক অগ্রগতি হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। প্রতিবন্ধকতা ও সামগ্রিক সমস্যাগুলোকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশ শিশু অধিকারের বাস্তবায়ন নিশ্চিতে এগিয়ে যাবে বলে আমরা আশা রাখি।

লেখক : উপ-পুলিশ পরিদর্শক, ঢাকা রেঞ্জ অফিস ও সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, ডিটেকটিভ।

ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন :)

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x