ই-পেপার

নিউজ স্ক্রল

শামস সাইদ

১৯৮১ সালের ঐতিহাসিক ১৭ মে দখলদার জান্তা সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা নিজ মাতৃভূমিতে ফিরলেন। যেখানে জন্মেছিলেন তিনি ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার দেড় মাসের মাথায়। আর জন্মেই দেখেছেন ‘ক্ষুব্ধ স্বদেশভূমি’। তিনি এলেন সেই ভূমিতে, যেখানে নির্মম নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, যার শিকার হয়েছে তাঁর পরিবার। হত্যাকারী ও তাদের বশংধররা দখল করে রেখেছে রাষ্ট্র ও ক্ষমতা। তিনি ফিরে এলেন দীর্ঘ নির্বাসন শেষে। যেমন এসেছিলেন পিতা।

৩০ জুলাই ১৯৭৫, ছোট বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা জার্মানে গেলেন স্বামীর কর্মস্থলে। এর পনেরো দিনের মাথায় সপরিবারে নিহত হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পিতা মাতা ভাই ভাবির মৃত্যু শুধু শেখ হাসিনা ও রেহানাকে শোকের সাগরে ভাসাল না, তাদের জীবনও হয়ে উঠল অনিরাপদ। হয়ে গেলেন আশ্রয়হীন। তখন ভারত সরকার বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে আশ্রয় দিল। সেখানে দীর্ঘ ছয় বছর নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরলেন শেখ হাসিনা। 

দেশ ও আওয়ামী লীগের জন্যই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিরতে হয়েছিল শেখ হাসিনাকে। ১৯৭৯ ও ১৯৮০ জিল্লুর রহমান, আব্দুস সামাদ আজাদ, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং যুবনেতা আমির হোসেন আমু বিভিন্ন সময়ে দিল্লিতে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের খোঁজ-খবর নিতেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিতে রাজি করানো।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনার স্বামী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়া তাঁর বইতে লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগের উপরোল্লিখিত নেতৃবৃন্দের দিল্লীতে আমাদের কাছে আসার অন্যতম কারণ ছিল ঢাকায় ১৯৮১ সালের ১৩- ১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের ব্যাপারে হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময় করা। এদের সবাই এবং হাসিনার চাচী (বেগম নাসের), ফুফু আম্মারা এবং ফুফাতো ভাইয়েরা চাচ্ছিলেন যেন হাসিনা আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হয়। আমি এ প্রস্তাবে কখনোই সম্মত ছিলাম না।

আমি তাদের সকলকে বলেছিলাম যে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের অকল্পনীয় মর্মান্তিক ঘটনার পর বঙ্গবন্ধুর আত্মীয়-স্বজনদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করা উচিত হবে না। অন্তত বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত।’

১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। কারণ আওয়ামী লীগের মূল নেতারা বঙ্গবন্ধুর পরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন। দলও কিছুদিন নিষিদ্ধ ছিল। দলের নেতাদের মধ্যে দেখা দিল মতপার্থক্য।

শেখ হাসিনাকে আনতে চাওয়ার কারণ, শেখ মুজিবের প্রতি আস্থা ও দলের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা তো ঐক্যের প্রতীক! বঙ্গবন্ধুর প্রতি মানুষের আস্থা ও শ্রদ্ধা তখনো ছিল, এখনো আছে। চিরদিন থাকবে।

কাউন্সিল করে, সবাইকে এক প্লাটফর্মে এনে শেখ হাসিনাকে সভাপতি করা হলো। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে এই ঐক্যটা রক্ষা করবেন তিনি এবং সকলে তাঁকে শ্রদ্ধা ও সমর্থন করবে। ড. ওয়াজেদ মিয়া তাঁর বইতে সেকথা এভাবে তুলে ধরেছেন: ‘১৬ই ফেব্রুয়ারি (১৯৮১) তারিখের সকালে লন্ডন থেকে ফোনে সংবাদ পাওয়া যায় যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৩-১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে হাসিনাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর শেখ সেলিমও হাসিনাকে ফোনে একই সংবাদ দেন। এরপর ঢাকা ও লন্ডন থেকে আরও অনেকে টেলিফোনে হাসিনাকে অভিনন্দন জানান।

পরের দিন দিল্লিস্থ অনেক সাংবাদিক শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নিয়ে পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর মন্তব্য ও মতামত প্রকাশ করেন। এর এক সপ্তাহ পরে আওয়ামী লীগের ওই সময়কার শীর্ষ নেতারা যান দিল্লিতে।

২৪শে ফেব্রুয়ারি (১৯৮১) তারিখে ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের আব্দুল মালেক উকিল, ড. কামাল হোসেন, জিল্লুর রহমান, আব্দুল মান্নান, আব্দুস সামাদ, এম কোরবান আলী, বেগম জোহরা তাজউদ্দীন, স্বামী গোলাম আকবার চৌধুরীসহ বেগম সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, বেগম আইভি রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ দিল্লী পৌঁছান। তাঁরা শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কয়েকটি বৈঠকে মিলিত হন।’

আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর দুই শিশু সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে রেখে গণতন্ত্র ও প্রগতিশীলতার রাজনীতি ফেরাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরলেন শেখ হাসিনা। সেদিন প্রকৃতিও ছিল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। ছিল কালবৈশাখীর হাওয়া, বেগ ছিল ঘণ্টায় ৬৫ মাইল। প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি আর দুর্যোগও সেদিন গতিরোধ করতে পারেনি গণতন্ত্রকামী লাখ লাখ মানুষের মিছিল। গ্রাম-গঞ্জ-শহর-নগর-বন্দর থেকে অধিকারবঞ্চিত মুক্তিপাগল জনতা ছুটে এসেছিল রাজধানী ঢাকায়, অপেক্ষা করছিল কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে। তাদের একমাত্র আশার প্রদীপ বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারী শেখ হাসিনাকে বরণ করতে। তাকিয়ে ছিলেন আকাশের দিকে। কখন নেমে আসবে শেখ হাসিনাকে বহন করা বিমান। বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে বিমান বন্দরে কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। মুষলধারার বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে তারা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন ‘নেত্রীর’ জন্য। অবশেষে বিকাল ৪টায় কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে নেমে এলো ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্সের ৭৩৭ বোয়িং বিমান। জনসমুদ্রের জোয়ারে এসে পৌঁছান শেখ হাসিনা। দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর পর পা রাখলেন দেশের মাটিতে। তাঁকে এক নজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত সড়ক রূপ নিয়েছিল জনসমুদ্রে।

শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে স্বাধীনতার অমর স্লোগান ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত ছিল ঢাকার আকাশ-বাতাস। জনতার কণ্ঠে বজ্র নিনাদে ঘোষিত হয়েছিল ‘হাসিনা তোমায় কথা দিলাম- পিতৃ হত্যার বদলা নেব। পিতৃহত্যার বদলা নিতে/লক্ষ ভাই বেঁচে আছে, শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই।’ সেদিন অবিরাম মুষলধারে বারি-বর্ষণে যেন ধুয়ে-মুছে যাচ্ছিল বাংলার মাটিতে পিতৃ হত্যার জমাট বাঁধা পাপ আর কলঙ্কের চিহ্ন। পুরো ঢাকা রূপ নিয়েছিল মিছিলের শহরে। প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল স্লোগানে স্লোগানে।

সেদিন শেরেবাংলা নগর মানিক মিয়া এভিনিউতে শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিমানববন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর ঢেকে যায় জনসমুদ্রে। কুর্মিটোলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ট্রাফিক বন্ধ ছিল প্রায় ছয় ঘণ্টা। জনগণকে দেখার সুযোগ করে দেয়ার জন্যে তাঁকে একটা ট্রাকে দাঁড় করিয়ে আনা হয়। বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ নেত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী যখন মঞ্চে শেখ হাসিনাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন তখন এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শেখ হাসিনা এসে দাঁড়ালেন বাংলার লাখ লাখ মানুষের সামনে। স্মৃতির বেদনায় বার বার তিনি ভেঙে পড়েন কান্নায়। বললেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জীবন উৎস্বর্গ করে দিতে চাই। আমার আর কিছু চাওয়া পাওয়ার নাই। সব হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আপনাদের পাশে থেকে বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য।’ 

যখন কথাগুলো শেখ হাসিনা বলছিলেন তখন চারদিকে নিস্তব্ধতা, তাঁর চোখ দিয়ে অনর্গল জল গড়িয়ে পড়ছিল এবং বৃষ্টির পানিতে মিশে কোটি মানুষের চোখের জলের সঙ্গে এক হয়ে বাংলার মাটি সিক্ত করেছিল। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা যাঁর বুকে গুলি চালানোর সাহস পায়নি, তাঁকেই হত্যা করল বাঙালি মিলিটারি নামের কতগুলো পাকিস্তানি হায়েনা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই। জীবনের ঝুঁকি নিতেই হয়, মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’

বক্তৃতাকালে শেখ হাসিনা বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। সেদিন আপ্লুত হয়েছিল লাখো জনতা। চোখ মুছে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে ছয় বছরে অনেকদূর এগিয়ে যেত আমাদের দেশ। এখন আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমার জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে। আমার রক্তে আছে রাজনীতি। আমাকে রাজনীতিতে আসতেই হবে। কিন্তু এত দ্রুত আসতে হবে, এমন শোকাবহ ঘটনার ভার বুকে নিয়ে আমাকে রাজনীতি করতে হবে ভাবিনি। রাজনীতিই এখন আমার একমাত্র সঙ্গী।’ 

এম এ ওয়াজেদ মিয়া তাঁর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘ঐদিন বিকেলে ঢাকায় একটু একটু ঝড়বৃষ্টি হয়। যাহোক, ঢাকায় পৌঁছেই রাত এগারোটার দিকে হাসিনা আমাকে টেলিফোনে জানায় যে, সেদিন সভাস্থল মানিক মিয়া এভিনিউ হতে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দর পর্যন্ত ছিল লোকে লোকারণ্য।

ঐদিন তাঁকে সম্বর্ধনা জানানোর জন্য ১০-১২ লাখ লোকের সমাগম হয়েছে বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা সূত্রে বলা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মতে, ওই দিন ঢাকায় অন্যূন ১৫ লাখ লোকের সমাগম হয়েছিল।’

স্বামী ওয়াজেদ মিয়া শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করতে। আরও বলেছিলেন, ‘১০-১৫ লাখ লোকের সমাগম হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখন থেকে তোমাকে মাথা ঠাণ্ডা রেখে দলীয় কাজকর্ম চালাতে হবে। অন্যের তোষামোদীতে তোমার মাথা যেন মোটা না হয়ে যায়, তার জন্য তোমাকে এখন থেকে সতর্ক থাকতে হবে নিরন্তর।’

দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার; বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার ও স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হৃত গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসার সংবাদ পরদিন (১৮ মে, ১৯৮১) ঢাকার বিভিন্ন সংবাদপত্রে গুরুত্ব-সহকারে প্রকাশিত হয়। ১৮ই মে ১৯৮১ সোমবার প্রকাশিত বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকার প্রথম পাতার রিপোর্টের কিছু অংশ, “পুলিশের বেষ্টনী অতিক্রম করে বহু মানুষ বিমানবন্দরের টারমাকে প্রবেশ করে … এরপর আসে কাক্সিক্ষত সে বিমানটি। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং। ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ ও শেখ হাসিনাকে ‘শুভেচ্ছা স্বাগতম’ জানানো গগনবিদারী স্লোগানে প্রকম্পিত গোটা বিমানবন্দর।”

দৈনিক ইত্তেফাকের রিপোর্টে লেখা হয়, ‘দীর্ঘ ছ’ বছর বিদেশে অবস্থানের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠকন্যা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সতেরই মে বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। লাখো জনতা অকৃপণ প্রাণঢালা অভ্যর্থনার মধ্য দিয়ে বরণ করে নেন তাদের  নেত্রীকে। মধ্যাহ্ন থেকে লক্ষাধিক মানুষ কুর্মিটোলা বিমানবন্দর এলাকায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন কখন  শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করবে। বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে বিমানবন্দরে কোনো নিয়মশৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।’

ওই সময়কার সরকারি পত্রিকা ‘দৈনিক বাংলা’ ১৮ মে, ১৯৮১ শেখ হাসিনার বিমানবন্দর সংবর্ধনা সংবাদে উল্লেখ করেছিল, ‘ঐ দিন কালবোশেখী ঝড়ো হাওয়ার বেগ ছিল ৬৫ মাইল। এবং এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে লাখো মানুষ শেখ হাসিনাকে একনজর দেখার জন্য রাস্তায় ছিল।’

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ঢাকার বিভিন্ন আওয়ামী লীগ সমর্থক পত্রিকা বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। ‘সাপ্তাহিক রাজনীতি’ নামক পত্রিকায় ‘স্বাগতম শেখ হাসিনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘শেখ হাসিনা  দেশের বুকে ফিরে আসছেন নির্যাতিত-শোষিত মানুষের মুক্তির মন্ত্র নিয়ে, স্বৈরাচার উৎখাত ও বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত বিপ্বল সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ গণ-আন্দোলনের আহ্বান নিয়ে।’

শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ফিরে আসার সংবাদ পরদিন (১৮ মে ১৯৮১) ঢাকার বিভিন্ন সংবাদপত্রে গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করা হয়। ‘দৈনিক সংবাদ’-এ প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, ‘লাখো জনতা

অকৃপণ প্রাণঢালা অভ্যর্থনার মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয় তাদের নেত্রীকে। রাজধানী ঢাকা গতকাল (১৭ মে) মিছিলের শহরে পরিণত হয়েছিল। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মিছিল। শুধু মিছিল আর মিছিল। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টিও মিছিলের গতিরোধ করতে পারেনি। স্লোগানেও ভাটা পড়েনি। লাখো কণ্ঠের  স্লোগান নগরীকে প্রকম্পিত করেছে।

গতকালের ঢাকা ন’বছর আগের কথাই বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি যেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে এসেছিলেন, সেদিন স্বজন হারানোর ব্যথা ভুলে গিয়েও লাখ লাখ জনতা রাস্তায় নেমে এসেছিল নেতাকে একনজর দেখার জন্য।

গতকালও হয়েছে তাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা হাসিনাকে একনজর দেখার জন্য ঢাকায় মানুষের ঢল নেমেছিল। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। ফার্মগেট থেকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর পর্যন্ত ট্রাফিক বন্ধ ছিল প্রায় ছয় ঘণ্টা।

বিকেল সাড়ে ৩টা থেকেই বিমানবন্দরে কোনো নিয়মশৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। হাজার হাজার মানুষ ভিআইপি লাউঞ্জের গেটে নিয়োজিত পুলিশের বেষ্টনী ভেদ করে প্রথমে দেয়ালের উপর ওঠে। একই সময়ে বিমানবন্দর ভবনের দোতলায় কন্ট্রোল টাওয়ারের যেখানে স্থান করা সম্ভব সেখানেই জনতা উঠে যায়। উদ্দেশ্য  শেখ হাসিনাকে একনজর দেখা। পুলিশ বারবার চেষ্টা করেও তাদের সরাতে পারেনি। বিমান অবতরণের সময় যতই এগিয়ে আসছিল, বাইরে অপেক্ষমাণ জনতার স্রোতে ততই উদ্বেল হয়ে উঠছিল।’

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে তাঁরই শিক্ষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম স্মৃতিচারণ করেছেন এভাবে, ‘১৯৮১ সালের শুরুর দিকে এক অপরাহ্নে শেখ হাসিনা তাঁর নির্বাসন জীবন শেষে দিল্লি থেকে বিমানযোগে ঢাকা প্রত্যাবর্তন করেন। সেদিন অঝোর ধারায় বর্ষা নামল, মনে হচ্ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্য প্রকৃতি অঝোর ধারায় ক্রন্দনরত। বিমানবন্দর ওই অকাল বর্ষার ঘনবর্ষণে লোকে লোকারণ্য হাসিনা পিতা-মাতা, ভাই, নিকটাত্মীয়-পরিজনহীন ঢাকায় নামলেন অশ্রুসিক্ত হয়ে কিন্তু তার পাঁচ বছরের রুদ্ধ আবেগকে তিনি সংবরণ করতে পারলেন না। তিনিও প্রকৃতি ও জনতার অশ্রান্ত ক্রন্দনের শামিল হয়ে একটি ট্রাকে উঠলেন। আমি আর ড. সামসুল হুদা হারুন বিমানবন্দরে দূরে থেকে সেই দৃশ্য দেখে অশ্রু সংবরণ করতে পারছিলাম না। আমাদের গাড়ি এই অঝোর ধারার বৃষ্টির মধ্যে হাসিনার দীর্ঘ শোভাযাত্রার অনুসরণ করতে লাগল। বিমানবন্দর থেকে বনানী গোরস্তান, সেখানে সারি সারি শুয়ে আছে মা ও ভাইয়েরা, আত্মীয়-পরিজন ও তিন জাতীয় নেতার কবরগুলো তখনও বাঁধানো বা ঠিকমতো চিহ্নিত করা হয়নি। পঁচাত্তরের খুনিরা বঙ্গবন্ধুর কবর ঢাকাতে হতে দেয়নি, তাঁর লাশ টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে গেছে এবং তড়িঘড়ি যেনতেন প্রকারে দাফন করেছে। ফলে দেশের মাটিতে নেমে হাসিনা এক সঙ্গে বাবা-মা ও ভাইদের কবর দেখতে পাননি। বনানী গোরস্তানে সেই বর্ষাসিক্ত বিকেলে এক মর্মান্তিক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। মা ও ভাইদের কবরে আছড়ে পড়ে কাঁদতে লাগলেন হাসিনা। তিনি তার এতদিনকার সঞ্চিত বেদনা ও কান্নার স্রোতে ভেসে গেলেন। বনানী থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, সেখানে এই অক্লান্ত বৃষ্টির মধ্যে হাসিনার জনসভা। এক শোকার্ত জনসমুদ্রের অশ্রু ভারাক্রান্ত শেখ হাসিনা যা বললেন তার মর্ম এই যে, তিনি সব হারিয়েছেন তার আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু যে দেশের মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে তাঁর পিতা সপরিবারে জীবন দিয়ে গেছেন, সেই দেশের মানুষের মুক্তির জন্য তিনি নিজেকে উৎসর্গ করলেন। ওই কথাগুলো বলতে বলতে বারবার তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। প্রকৃতির কান্না, জনতার কান্না হাসিনার কান্নার সঙ্গে একাকার হয়ে যাচ্ছিল। ওই বিরল দৃশ্য দেখার সুযোগ আমার হয়েছিল। আমি শুধু আমার ছাত্রীর জন্য মনে মনে প্রার্থনা করছিলাম আর ভাবছিলাম, তিনি যখন মৃত্যুপুরী ৩২ নম্বরে বা টুঙ্গিপাড়ায় বাবার কবরে যাবেন তখন কী অবস্থা হবে। তিনি কি পারবেন নিজেকে সংবরণ করতে। তিনি ঢাকায় ফিরে সঙ্গে সঙ্গে ৩২ নম্বরে যেতে পারেননি, ওই মৃত্যুপুরীর মালিকানা ফেরত পেতেও তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল, তবে টুঙ্গিপাড়ায় তিনি গিয়েছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর অযতেœ পড়ে থাকা কবরে লুটিয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু সে দৃশ্য দেখার সুযোগ আমার হয়নি। হাসিনা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর নয়নমণি। হাসিনাও বাবাকে ভালোবাসতেন সবচেয়ে বেশি। অমন এক বাবার মেয়ে কীভাবে বাবার কবরে গিয়ে নিজেকে সংযত রাখতে পারেন।

হাসিনা যখন নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের শুরুর দিকে দেশে আসেন তখন ঢাকায় তাঁর নিজের বাড়িঘর বলতে কিছু ছিল না। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত বত্রিশ নং ধানমন্ডির যে বাড়িটি ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাড়ি, সেটি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে বঙ্গবন্ধু পরিবারের রক্তে রঞ্জিত এক ভয়াবহ মৃত্যুপুরী ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরে আসেন, তারপরও তিনি বঙ্গবন্ধু ভবনের অধিকার ফিরে পাননি, সে বাড়ি তখনও ক্ষমতাসীন সরকারের দখলে হাসিনা দেশে ফিরে আসার পর, প্রথম তাঁর সঙ্গে আমার দেখা জিগাতলার দিকে এক বাড়িতে আমার ঠিক মনে নেই, সেটা কার বাড়ি সেদিন হাসিনা বিশেষ কথাবার্তা বলতে পারেননি। দেশে ফিরে এসে তখন পর্যন্ত হাসিনা নিজেকে বাবা, মা, ভাই এবং অন্যান্য পরিবার-পরিজন ছাড়া মানিয়ে নিতে পারেননি। ৩২ নম্বরের বাড়িটি ফিরে পেতে তাঁকে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল বলে শুনেছি। শেখ হাসিনা দেশে ফেরার আগেই আওয়ামী লীগ কাউন্সিলে দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। বত্রিশ নম্বরের বাড়িটি ফিরে পাওয়ার পর সে বাড়ির একটা ঘর সংস্কার করে হাসিনা মাঝে মাঝে সেখানে বসতেন। ’

স্বদেশে ফিরে আসা শেখ হাসিনার জন্য খুব সহজ ছিল না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারীরা চায়নি তাঁর কন্যা বাংলায় ফিরে আসুক। স্বদেশে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত তারা চেষ্টা করেছিল তাঁর আগমন বাধাগ্রস্ত করতে। এমনকি শেখ হাসিনা প্রতিরোধ কমিটিও করেছিল। জনশক্তির সামনে কোনো ষড়যন্ত্র দাঁড়াতে পারেনি। তাই শেখ হাসিনার স্বদেশে ফিরে আসা ঠেকাতে পারেনি কেউ। তবে শত্রু তাঁর পিছু ছাড়েনি।  ১৯ বার চেষ্টা করেছে হত্যা করতে। কিন্তু সফল হয়নি। পারেনি তাঁকে স্বপ্নের পথ থেকে দূরে সরাতে।

যে পথে আছে বাঙালির মুক্তি সে পথেই হাঁটছেন শেখ হাসিনা। মানবতাবোঁধ, দেশপ্রেম ও সাহসী নেতৃত্বের জন্য বাংলার দুঃখী মানুষের হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন তিনি। মৃত্যু তাঁকে উত্তীর্ণ করে দিয়েছে চেতনার এক স্তরে। দুঃসাধ্য চেষ্টার ভেতর দিয়েই তিনি অন্ধকার থেকে আলোকে উত্তীর্ণ হন। মৃত্যুর দুয়ার দিয়ে তিনি যেন প্রবেশ করেছেন নবজন্মে। পৃথিবীকে যখন প্রথমবার আলোর মতো লাভ করে মানবশিশু। সেটা শিশুর আলোক প্রাপ্তির মতো। শেখ হাসিনা সেই আলোকময় বিশ্বের জন্য নিরলস প্রয়াসে ব্যাপ্ত। দেশের মানুষের প্রতি অসীম ভালোবাসার গভীরতায় সর্বস্ব ত্যাগ করে দিয়েছেন। জীবনকে উৎসর্গ করেছেন দেশ, মাটি ও মানুষের উন্নয়ন অগ্রগতির জন্য।        

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি জনগণকে ভালবাসি। জনগণ আমাকে ভালোবাসে। এরা কি কখনো আমার অনিষ্ট করতে পারবে?’ না, জনগণ তা করেনি। বাংলার মানুষ একাত্তর সালের নয়মাস পাকিস্তানের কারাগারে আটক বঙ্গবন্ধুর জন্য প্রার্থনা করেছে। স্বাধীন বাংলায় বেঁচে থাকা জাতির জনকের দুই কন্যার জন্য বাংলার মানুষ এখনো দু’হাত তুলে প্রার্থনা করে তাঁদের মঙ্গল, কল্যাণ ও দীর্ঘায়ুর জন্য। পিতার মতোই জেল জুলুম, মেনে নিয়েছেন শেখ হাসিনা। পিতার আরাধ্য কাজ শেষ করার দায় তো ইতিহাস তাঁর কাঁধেই চাপিয়েছে। একবার বঙ্গবন্ধুর জাদুকরি নেতৃত্বে বাঙালি তাঁর অভ্যাসের গণ্ডি ভেঙে জাতি হিসেবে বড় হয়ে উঠেছিল এবং সেই জোরে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। এবার অচলায়তন ভেঙে সামনে এগোতে হলে, সম্মান নিয়ে বাঁচতে হলে আবারও বাঙালিকে সব ক্ষুদ্রতা, সংকীর্ণতা ও স্বাথের্র গণ্ডি ভেঙে বড় হয়ে উঠতে হবে। সেই কাজে কে আর নেতৃত্ব দেবে? বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ছাড়া? দেশ ও জাতির উন্নতি ও অগ্রগতি ছাড়া কোনো কিছুতেই তাঁর মোহ নেই। বাঙালি জনগোষ্ঠীর মনোজগতে শেখ হাসিনা এক নতুন চিন্তার উন্মেষ ঘটিয়েছেন। জনগণের ভালোবাসা এবং সমর্থন নিয়ে গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কাজে নিজেকে ব্রত করেছেন তিনি। 

বাংলাদেশের আজকের উন্নয়ন ও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনের দীর্ঘ চলার পথ ফুল বিছানো ছিল না। পদে পদে বিপদ এবং মৃত্যু ঝুঁকি তাঁকে তাড়া করেছে। জীবন-মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে তিনি এগিয়ে চলেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মাত্র ৩৪ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এখন তিনি কেবল দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগেরই সভানেত্রী নন, তিনি সরকার প্রধান হিসেবেও বেশি সময়ের রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। টানা তিনবারসহ মোট চারবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শেখ হাসিনাই বিশ্বে উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি যেমন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, একই সঙ্গে তিনি বিশ্বনেতাও বটে।

শেখ হাসিনার বড় অর্জন মানুষের ভালোবাসা। মানুষ তাঁকে ভালোবাসে, বিশ্বাস করে। এ বিশ্বাসই জনগণের সঙ্গে ব্যবধানের সব পর্দা ছেদ করে সবাইকে অভিন্ন দেশের নাগরিকে পরিণত করেছে। জনগণ তাঁর জীবন রক্ষায় মানববর্ম তৈরি করে গায়ে-বুকে আগলে রেখেছে, বাঁচিয়ে রেখেছে তাদের জন্যই। শেখ হাসিনাও চেষ্টা করে যাচ্ছেন ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে পৌঁছে দিতে।

লেখক : কথাসাহিত্যিক।

ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন :)