বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামী একটি দিন ৭ জুন। ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়। ছয় দফার মধ্য দিয়েই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ছয় দফা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১১ দফার আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সর্বশেষ বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সাবজেক্ট কমিটিতে ছয় দফা উত্থাপন করেন এবং সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে যাতে এটি স্থান পায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে। ৬ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানের কয়েকটি পত্রিকা এই দাবি সম্পর্কে বলে যে পাকিস্তানের দুটি অংশ বিচ্ছিন্ন করার জন্যই ছয় দফা দাবি আনা হয়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে এর জবাব দেন। ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। বিমানবন্দরেই তিনি সাংবাদিকদের সামনে ছয় দফা সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরেন।
সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার প্রস্তাবনা হচ্ছে- ১. লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তানকে ফেডারেশন বা যুক্তরাষ্ট্র হিসেবে গঠন করতে হবে। ২. প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বাদে সব বিষয় প্রদেশের হাতে ন্যস্ত থাকবে। ৩. পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থরক্ষা করে মুদ্রাব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। ৪. কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে প্রদেশের কাছে। ৫. প্রদেশগুলো নিজ নিজ বৈদেশিক মুদ্রা ও বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করবে। ৬. প্রদেশগুলো আধাসামরিক বাহিনী গঠন করতে পারবে।
বঙ্গবন্ধু ছয় দফা সম্পর্কে বলেন, ‘ছয় দফা বাংলার কৃষক-শ্রমিক-মজুর-মধ্যবিত্ত তথা আপামর জনগণের মুক্তির সনদ এবং বাংলার স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি। এটা শোষকের হাত থেকে শোষিতের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ছিনিয়ে আনার হাতিয়ার। এটা মুসলিম-হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধদের নিয়ে গঠিত বাঙালি জাতির স্বকীয় মহিমায় আত্মপ্রকাশ ও আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের চাবিকাঠি। ’
১২১৫ সালে ইংল্যান্ডে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক ম্যাগনা কার্টাকে সে দেশের বর্তমান সাংবিধানিক শাসনের সূচনা বলা হয়। ছয় দফাও তেমনি বাঙালির মুক্তির সনদ। ছয় দফার পথনির্দেশনা অনুসরণ করেই বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জন করে। ছয় দফা প্রকৃত অর্থেই বাঙালি জাতির মুক্তি সনদ।
0 Comments