১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা গণহত্যা শুরু করে। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়।
নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ দেশ আখ্যা দেয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে দারিদ্র্য আর দুর্যোগের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পথে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। সাথে যুক্ত হয়েছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা যোগ্যতা নির্ধারণের তিনটি সূচকের ২০১৮ ও ২০২১ সালের মূল্যায়নে মান অর্জন করায় এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ পায় বাংলাদেশ। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) সম্প্রতি এ সুপারিশ করেছে।
বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের সুপারিশ করার এই ঘটনাকে বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে প্রভাবশালী মার্কিন পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভিয়েতনামের উন্নয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের মিল আছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে কোরিয়া, চীন ও ভিয়েতনামের উন্নয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে বলা হয়েছে, এই দেশগুলোও রপ্তানিভিত্তিক উন্নয়নের পথে হেঁটে আজ এত দূর গিয়েছে। আধুনিক ইতিহাসে দেখা গেছে, রপ্তানিমুখী উন্নয়নের বদৌলতে অতি নিম্ন আয়ের দেশও মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারে। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সফল অর্থনীতি হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
সুখী ও সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন। জাতি এ বছর এমন এক সময় ৫০তম স্বাধীনতা দিবস ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি উচ্চপ্রবৃদ্ধির দেশগুলোর একটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। উচ্চপ্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ভারত ও চীনের মতো বিশ্ব অর্থনীতির নেতৃস্থানীয় দেশকেও ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।
এছাড়া মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে পাকিস্তানি হানাদারদের এ-দেশীয় সহযোগীদের বিচার চলছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের বিচারও সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে ১২ জনের দন্ড কার্যকর হয়েছে। পলাতক দন্ডপ্রাপ্তদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। জঙ্গীবাদ দমন করা হয়েছে। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
0 Comments