প্রায় তিন দশক ধরে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে যাওয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫ তম জন্মদিন ২৮ সেপ্টেম্বর। ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তিনি জন্মেছিলেন। মধুমতি নদী, বাঘিয়ার বিল আর বর্নির বাঁওড়ের জলকল্লোলস্নাত পরিবেশে শৈশব কেটেছে তাঁর। মাটি আর মৃত্তিকাসংলগ্ন মানুষের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন তিনি। কোমল মাটির মতো মানুষটিকে জাতির বৃহত্তর প্রয়োজনে কখনো কখনো কঠোর হতে হয়েছে। কোমলে-কঠোরে মিলে এক অনন্য চরিত্রে আজ তিনি দাঁড়িয়ে আছেন বাংলাদেশের মানচিত্র জুড়ে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নের আলোকবর্তিকা হাতে শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করে ১৯৯৬ সালে প্রথম, ২০০৮ সালে দ্বিতীয় এবং ২০১৪ সালে তৃতীয় এবং ২০১৮ সালে চতুর্থবারের মত নির্বাচনে জয়লাভ করে দলকে দেশের ও সরকারের নেতৃত্বের আসনে বসাতে সক্ষম হন।
শেখ হাসিনার ইতিহাস জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ইতিহাস। একবিংশ শতকের অভিযাত্রায় বাঙালি জাতিকে দিক নির্দেশনা দেয়ার ইতিহাস। তাঁর নেতৃত্বে অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনেও তিনি বিশ্বনেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে হয়েছেন প্রশংসিত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্থায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্যে স্বনির্ভরতা, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ অবকাঠামো, যোগাযোগ, জ্বালানী ও বিদ্যুৎ, বাণিজ্য, আইসিটি এবং এসএমই খাতে এসেছে ব্যাপক সাফল্য। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন, গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতিসহ জাতীয় জীবনের বহুক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে করোনাকালেও দেশের প্রবৃদ্ধি এশিয়ায় প্রায় সবদেশের ওপরে। করোনা মোকাবেলায় তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এই মহামারির মধ্যেও অর্থনীতির চাকা সচল রাখা গেছে।
এ পর্যন্ত শেখ হাসিনা ৩৯টি আন্তর্জাতিক পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন। টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দেয় গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এবং ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে দায়িত্বশীল নীতি ও তার মানবিকতার জন্য প্রধানমন্ত্রী আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১৮ স্পেশাল ডিসটিংশন এওয়ার্ড ফর লিডারশিপ গ্রহণ করেন। শিল্প সংস্কৃতি ও সাহিত্যঅন্তপ্রাণ শেখ হাসিনা লেখালেখিও করেন। তাঁর লেখা এবং সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। প্রকাশিত অন্যতম বইগুলো হচ্ছে- শেখ মুজিব আমার পিতা, সাদা কালো, ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, দারিদ্র্য দূরীকরণ, আমাদের ছোট রাসেল সোনা, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম, সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র, আর্ন্তজাতিক সর্ম্পক উন্নয়ন, বিপন্ন গণতন্ত্র, সহেনা মানবতার অবমাননা, আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি, সবুজ মাঠ পেরিয়ে ইত্যাদি। করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫ তম জন্মদিন পালিত হয়েছে। দেশে-বিদেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা ও দেশের প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, মন্দির, প্যাগোডাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। ডিটেকটিভ পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ুও সুস্বাস্থ্য কামনা করি।