ই-পেপার

নিউজ স্ক্রল

ইমদাদুল হক মিলন

(… পূর্বে প্রকাশের পর)

জুলেখার কথার ধরনটা যেন আজই প্রথম খেয়াল করলেন রেজা। কাজের বুয়াদের ভাষা মনেই হচ্ছে না। একেবারেই তাদের মতো করে কথা বলছে। সাত-আট বছর ধরে তাদের সংসারে আছে। নিশ্চয় শুনতে শুনতে এই ভাষাটা সে শিখেছে। অথবা রুবাও শেখাতে পারে। সব ব্যাপারেই অসম্ভব এক সৌন্দর্যবোধ আছে রুবার। স্নিগ্ধতা আছে।

রেজা তারপর বললেন, এখন না হয় দুতিনবার রিং হওয়ার পর ধরলে। আগের বার?

জুলেখা অবাক হলো। আগের বার কখন ফোন করলেন?

রেজা থতমত খেলেন। কখন ফোন করলাম মানে? তুমি এখন ফোন ধরার আগে করেছি। অনেক বার রিং হলো, কেউ ফোন ধরেনি।

জুলেখা বিনীত গলায় বলল, জি না ভাই। ফোন আসেনি।

কী?

জি। একবারও রিং হয়নি।

তাই নাকি?

জি।

তুমি বাথরুম টাথরুমে ছিলে না তো! রিং হয়েছে, কিন্তু শুনতে পাওনি এমন হয়নি তো?

জি না।

রেজা একটা হাঁপ ছাড়লেন। তাহলে বোধহয় রং নাম্বারে গেছে। আজকাল এত রং নাম্বারে যায় ফোন!

জুলেখা কথা বলল না।

যেন হঠাৎ মনে পড়েছে এমন সুরে রেজা বললেন, তুমি ফোন ধরলে কেন? রুবা কোথায়?

ভাবী বাসায় নেই।

কোথায় গেছে?

বলতে পারি না।

তোমাকে বলে যায়নি কোথায় যাচ্ছে?

জি না।

কেন?

আমি বাড়ির কাজের লোক, আমাকে তিনি বলে যাবেন কেন?

রেজা একটু লজ্জা পেলেন। তবে মুহূর্তেই ম্যানেজ করলেন ব্যাপারটা। না মানে আমাদের বাড়িতে তেমন আর কেউ নেই, এজন্য কোথাও বেরুলে কাউকে না কাউকে বলে যাওয়া উচিত।

ভাবী সেভাবে আমাকে কখনও বলে যান না। বেরিয়ে যাওয়ার সময় শুধু বলেন, আমি বাইরে যাচ্ছি।

রুবা অবশ্য এরকমই। বেশি কথা বলা পছন্দ করে না। কাউকে কোনও কৈফিয়ত দেয় না।

জুলেখা কথা বলল না।

রেজা বললেন, কখন ফিরবে তা কি বলে যায়?

জি বলেন।

আজ কখন ফিরবে?

দেড়টা দুটার দিকে। কিছুদিন ধরে যখনই বাইরে যান তখনই এই সময়টার কথা বলে যান।

ওই সময়েই কি ফেরে?

জি। কোনও কোনওদিন একটু এদিক ওদিক হয়।

দেড়টা দুটোর আগেই ফিরে আসে?

জি না। দেরি হয়। পরশুদিন পৌনে তিনটার দিকে ফিরেছেন।

রেজা একটু চমকাল। পরশু তিনি ঢাকায় ছিলেন না। মুন্সিগঞ্জে গিয়েছিলেন। মুন্সিগঞ্জে বড় একটা কাজ চলছে। বহুদিন ধরে ঠুকুর ঠুকুর করে চলছে কাজটা, শেষই হচ্ছে না, কেন শেষ হচ্ছে না বোঝার জন্য রেজা নিজেই সেদিন গিয়েছিলেন। সাধারণত পাঁচটার দিকে বাড়ি ফেরেন। সেদিন ঢাকার বাইরে গিয়েছিলেন বলে ফিরেছেন সন্ধের পর। আর এই ফাঁকে রুবা…। ফিরে আসার পর সে যে বেরিয়েছিল এ কথাও বলেনি রেজাকে।

ব্যাপারটা কী! এত লুকিয়ে চুরিয়ে কোথায় যাচ্ছে রুবা!

এসবের কিছুই জুলেখাকে বুঝতে দিলেন না রেজা। সরল গলায় বললেন, রুবা কি পরশুও বেরিয়েছিল?

জি।

কখন?

আজ যে সময় বেরুল।

আজ কখন বেরুল?

আপনি বেরিয়ে যাওয়ার আধা ঘণ্টাখানেক পর।

জুলেখার এ কথার পর একসঙ্গে অনেক প্রশ্ন মনে এলো রেজার। তেইশ বছরের বিবাহিত জীবনে এই ধরনের প্রশ্ন কখনও মনে আসেনি তার। স্ত্রী হিসেবে রুবা অত্যন্ত চমৎকার, মা হিসেবে অত্যন্ত দায়িত্ববান। বিয়ের রাতেই রেজা তাকে বুঝিয়েছিলেন, আমি একটি মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে আমি বড়। বাবা তেমন লেখাপড়া জানেন না। গ্রামে চাষের জমাজমি আছে ভালোই। ওসবের আয়ে সংসার মোটামুটি চলে। খুব কষ্ট করে বিএ পাস করেছি আমি। তারপর থেকেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। নানা রকমের ব্যবসা করি। কিছু টাকা ইনভেস্ট করলে সঙ্গে যদি আমার পরিশ্রমটা থাকে তাহলে আরও কিছু টাকা আসবে শুনলেই সেই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ি। এই করে সংসারের চেহারাটা ঘুরিয়েছি আমি। ফলে মা বাবা ভাই বোন সবাই এখন আমার ওপর ডিপেনডেন্ট। তিনটে বোনকে বিয়ে দিতে হবে আমার, লেখাপড়া শিখিয়ে ছোট তিনটে ভাইকে মানুষ করতে হবে, মা বাবাকে দেখতে হবে। গ্রামে থাকলে বোনগুলোর ভালো বিয়ে হবে না, ভাইগুলোর লেখাপড়া হবে না। এজন্য সবাইকে আমি ঢাকায় নিয়ে এসেছি। এদের প্রতি আমার মতো দায়িত্ব তোমারও। আমি টাকার পেছনে ছুটব আর তুমি এদের সামলাবে।

রেজার কথা মেনে নিয়েছিল রুবা।

সেভাবেই সংসারে চালিয়ে গেছে। তখন দেখতে আরও সুন্দর, আরও আকর্ষণীয় ছিল সে। বেশ লম্বা, একহারা গড়ন রুবার। চোখ দুটো খুব সুন্দর, মুখটা খুব মিষ্টি। অসম্ভব সুন্দর হাসি তার। গলার স্বর খুব সুন্দর, কথা বলে চমৎকার উচ্চারণে, অত্যন্ত গুছিয়ে। রুবাকে দেখে এবং কথা বলে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবে।

রেজার মা বাবা ভাই-বোন সবাই মুগ্ধ ছিল রুবার ব্যাপারে। বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন সবাই মুগ্ধ ছিল। রুবাকে নিয়ে কোনও অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে গেলে চারদিকের লোকজন তাকিয়ে তাকিয়ে রুবাকে দেখত, তার প্রশংসা করত। দুয়েকজন পেছনে লাগারও চেষ্টা করত। তখন এসব নিয়ে ভাবার সময় ছিল না রেজার। এসব ব্যাপারে সে ছিল বেশ উদাস এবং নির্বিকার ধরনের। ঢাকার বাইরে নানা রকমের বিজনেস ছিল তাঁর। দিনের পর দিন ঢাকার বাইরে থাকতেন। দিনের পর দিন রুবার সঙ্গে যোগাযোগ থাকত না। তখন তো আর আজকের মতো টেলিফোন সুবিধে ছিল না। বাসায় টেলিফোনও ছিল না রেজার।

বিয়ের আড়াই বছর পর অপু হলো। রুবা ব্যস্ত হয়ে গেল তার ছেলে নিয়ে। সেই ফাঁকে পর পর দুটো বোনের বিয়ে দিল রেজা। অপুর যখন দুবছর তখন হলো দিপু। দুই ছেলে তিন দেবর, ছোট ননদ আর শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে অতি ব্যস্ততায় দিন কাটে রুবার। বিজনেস এবং অতিরিক্ত পরিশ্রমে রেজার অবস্থাও বেশ বদলেছে। টাকা-পয়সা ভালো রোজগার করে। মোটামুটি বড় ধরনের কনস্ট্রাকসানের কাজ করেন।

কিন্তু রুবার কোনও চেঞ্জ নেই। আগে যেমন ছিল এখনও ঠিক তেমন। দেখে মনেই হয় না তার বিয়ে হয়েছে, দু দুটো বাচ্চা, সংসারে সারাক্ষণ পরিশ্রম করছে। দশদিকে চোখ রাখছে।

কোন মন্ত্রবলে এমন থাকছে রুবা! শরীরে এক চিলতে মেদ জমেনি, চোখের কোলে পড়েনি ক্লান্তির ছাপ, মুখে পড়েনি মলিনতার ছায়া। রুবাকে দেখে তার বয়সী তো বটেই, তারচে’ বয়সে অনেক ছোট মেয়ে মহিলারাও ঈর্ষায় জ্বলে যায়। অপু যখন ক্লাস নাইনে আর দিপু সেভেনে তখন রেজার এক বন্ধুর বোনের বিয়েতে এক ভদ্রমহিলা অপুকে জিজ্ঞেস করেছিল, তোমার বড়বোনের কি বিয়ে হয়েছে?

অপু তো অবাক। আমার বড় বোন কে?

ভদ্রমহিলা রুবাকে দেখিয়ে দিলেন।

অপু গম্ভীর হয়ে গেল। বড়বোন না, উনি আমার মা।

এই সেদিন পর্যন্ত এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। রেজার সঙ্গে শপিংয়ে গেছে রুবা, দোকানদার নির্বিকার গলায় বলেছে, আপনার বাবাকে বলুন না ম্যাডাম, শাড়িটায় আপনাকে খুব মানাবে।

এসব কারণে ছেলেরা দেশে থাকতে খুব কাছের আত্মীয়স্বজনের বাড়ি ছাড়া তাদের সঙ্গে তেমন কোথাও যেত না রুবা। অপু দিপুও পছন্দ করত না তার সঙ্গে যেতে। আর রেজার সঙ্গে বাইরে বেরুনো তো বহুকাল হলো ছেড়েছে রুবা।

সাতচল্লিশ বছর বয়সেও একজন মানুষ কুড়ি একুশ বছরের বয়সটা কেমন করে ধরে রাখে! বিশেষ করে একটি বাঙালি মেয়ে। যার সংসারে এত জটিলতা, এত পরিশ্রম। আজকালকার দিনে দু দুটো ছেলেমানুষ করা। এতকিছুর পর কেমন করে নিজেকে ঠিক রাখে সে! কেমন করে শরীরে চেহারায় কোনও মলিনতার ছাপ, বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। সবচে’ আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে শরীর-চেহারা নিয়ে কোনও মাথা ব্যথা নেই রুবার। কোনও রকমের সৌন্দর্য চর্চাই সে করে না। খাওয়া দাওয়াতেও কোনও কন্ট্রোল নেই। এই বয়সী মহিলারা মিষ্টি জাতীয় খাবার এভয়েড করে আর রুবা প্রচুর মিষ্টি খায়। শরীরে রোগ-বালাই বলেও কিছু নেই তার।

এদিকে রুবার চে’ কয়েক বছরের বড় রেজা একেবারেই বুড়ো হয়ে গেছেন। মাথার পেছন দিকে সামান্য কিছু চুল আছে, বাকিটা ফাঁকা। মুখের চামড়া কুঁচকে ঝুলে পড়েছে। চোখে বহুদিন ধরে মোটা লেন্সের চশমা। ডায়াবেটিস হয়নি কিন্তু প্রেসার আছে। ছাপ্পান্ন বছর বয়সেই বহু রকমের নিয়ম মেনে তাঁকে চলতে হয়। পরিশ্রমও আগের মতো আর করতে পারেন না।

তবে জীবনটা মোটামুটি গুছানো হয়ে গেছে রেজার। ছোট বোনটিরও খুব ভালো বিয়ে হয়েছে। ভাই তিনজনের দুজন বিয়েটিয়ে করে সংসারি হয়ে গেছে। একজন কৃষিব্যাংকে চাকরি করে। মানিকগঞ্জে পোস্টিং। একটি বাচ্চা হয়েছে। বউ-বাচ্চা নিয়ে মানিকগঞ্জেই থাকে। আর পরেরটি কন্ট্রাকটরি করে। একদম ছোটটি দুবছর হলো মালয়েশিয়াতে আছে। সেখানকার একটা রাবার বাগানে কাজ করে। বাবা মারা গেছেন সাত বছর হলো। মা মারা গেলেন চার বছর। সংসার যখন ঝামেলামুক্ত হলো তখন ছেলে দুটোও চলে গেল অস্ট্রেলিয়ায়। এখন রেজা আর রুবা ছাড়া তাদের পাশে কেউ নেই।

প্রথম জীবনে যে ধরনের পরিশ্রম করেছেন রেজা তার কিছুমাত্র এখন আর করতে হয় না। কনস্ট্রাকশানের কাজই করছেন তবে সেসবের দেখাশোনা করে পার্টনার মুস্তাফা। কাজের পরিমাণ কম কিন্তু প্রতিটি কাজই বিশাল। একেকটা দেড় দুবছর ধরে চলতে থাকে। রেজা অফিশিয়াল দিকটা, বিল ইত্যাদি দেখে। অন্যান্য কাজ করে মুস্তাফা। সকালবেলা অফিসে এসে পাঁচটার দিকে ফিরে যায় রেজা। খুব বেশি প্রয়োজন না থাকলে বিকেলের দিকটায় আর বেরুতে হয় না তাঁর। বাড়িটা কিনেছে বছর আটেক হলো। বাইশ শো পঞ্চাশ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট ধানম-িতে। সোয়া নয় কাঠা জায়গা আছে উত্তরায়। চার ইউনিটের এপার্টমেন্ট হাউজ করার প্ল্যান আছে। তার বন্ধু বিখ্যাত আর্কিটেক্ট রবিউল হুসাইনকে দিয়ে ডিজাইন করিয়েছে, রাজউক থেকে প্ল্যান পাস করানো হয়েছে। ব্যাংক থেকে দুই কোটি আশি লাখ টাকার একটা লোন স্যাংশান প্রায় হয়ে এলো কিন্তু কাজটা শুরু করা হচ্ছে না। কী রকম যেন একটা আলস্য কাবু করে রাখছে রেজাকে। আজকাল প্রায়ই মনে হয় কী হবে এসব করে। দুটো মাত্র ছেলে, দুজনেই চলে গেছে অস্ট্রেলিয়ায়। নিশ্চয় সেখানেই সেটেল করবে তারা। তাহলে কার জন্য ওই চার ইউনিটের বাড়ি করবেন রেজা। রেসিডেনশিয়াল এরিয়াতে ছতলার বেশি করা যায় না। নিচের তলাটা পার্কিংয়ের জন্য। বাকি পাঁচটি ফ্লোরের একেকটিতে চারটি করে ফ্ল্যাট। মোট বিশটি ফ্ল্যাট। ছেলেরা অস্ট্রেলিয়ায়, তাঁর আর রুবার থাকার বাড়ি আছে, ফ্ল্যাট আছে, তাহলে কী হবে ওই আলিশান ফ্ল্যাটবাড়ি করে! ভাড়া দিয়ে সেই টাকায় জীবন চালাবে? নাকি ফ্ল্যাটগুলো বিক্রি করে স্বামী স্ত্রী দুজনেই ছেলেদের কাছে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাবে!

এইসব নানা রকমের ভাবনায় বাড়ির কাজটা শুরুই করা হচ্ছে না রেজার। ছেলেরা চলে যাওয়ার পর, নিজের কাজ কমিয়ে আনার পর তেইশ বছরের বিবাহিত জীবনে যা হয়নি, সম্পূর্ণ নতুন একটা উপসর্গও দেখা দিয়েছে তাঁর। সেই উপসর্গের নাম রুবা। দিনরাত্রির অনেকটা সময় ধরে রুবাকে দেখে, তার সঙ্গে সঙ্গে থাকে, তার সঙ্গে কথা বলে এই বয়সে এসে স্ত্রীর ব্যাপারে নিজেকে একজন ঈর্ষান্বিত পুরুষ হিসেবে হঠাৎ করেই যেন আবিষ্কার করেছে রেজা। এই বয়সেও স্ত্রীর সৌন্দর্য, চালচলন ইত্যাদি নিয়ে চিন্তিত হয়ে উঠেছে কিন্তু স্ত্রীকে তা বুঝতে দিচ্ছে না। অফিসে এসে এই দীর্ঘ বিবাহিত জীবনে যা করেনি ইদানীং তাই করতে শুরু করেছে। কারণে-অকারণে যখন তখন রুবাকে ফোন করছে, রুবার সঙ্গে টুকটাক গল্প করছে। এমন কি ঠাট্টা-মশকরাও করছে, যা তাঁর চরিত্রে কখনও ছিলই না। স্বামীর এই আচরণে অবাকও হচ্ছিল রুবা মজাও পাচ্ছিল। কিন্তু বিশেষ কোনও উচ্ছ্বাস দেখাচ্ছিল না।

এই অবস্থাতেই ঘটল ঘটনাটা। গত কয়েকদিন ধরে অফিসে এসে প্রায়ই ফোন করে রুবাকে পাচ্ছেন না রেজা। দশটার পর থেকে দেড়টা দুটো পর্যন্ত বাড়ি থাকে না রুবা। কোথায় যায়!

এতকালের চেনা স্ত্রীকে নিয়ে এই বয়সে এসে রেজার তারপর থেকে কী রকম যেন একটা সন্দেহ দেখা দিয়েছে মনের ভেতর। আজকাল ঢাকা শহরে নানা রকমের নতুন নতুন বিষয় ডেভলাপ করছে। তার একটি পরকীয়া। স্ত্রীকে ফাঁকি দিয়ে স্মার্ট স্বামীগুলো প্রেম করছে অন্যের স্ত্রী কিংবা কন্যার সঙ্গে। ডেটিং করছে। বিবাহিত পুরুষদের সঙ্গে প্রেম করতে পছন্দ করছে কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়া অল্প বয়সী মেয়েরা। সুন্দরী বিবাহিতা মহিলারা প্রেম করছে তাদের চে’ কম বয়সী ছেলেদের সঙ্গে। স্বামীদের ফাঁকি দিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে।

রুবার জীবনে তেমন কিছু ঘটেনি তো! সবদিক থেকে ঝাড়া হাত পা হওয়ার পর সময় কাটানোর জন্য কোনও প্রেমিক জুটিয়ে নেয়নি তো সে! রুবা এখনও দেখতে যে রকম সুন্দর, তার কাউকে জোটাতে হবে না। এমনিতেই জুটে যাবে।

এসব বিষয়ে কি জুলেখার সঙ্গে কথা বলবেন রেজা! জুলেখা কি তাঁকে কোনও রকমের সাহায্য করতে পারবে!

কিন্তু এসব বিষয়ে কাজের বুয়ার সঙ্গে কথা বলা কি ঠিক হবে! বুয়া বুঝে যাবে এই বয়সে এসে স্ত্রীকে বাজে ধরনের সন্দেহ করছেন রেজা। বুয়া তাঁকে ভালো লোক ভাববে না।

না ভাবলে না ভাবুক। বাড়ির কাজের বুয়ার ভাবাভাবিতে কী এসে যায়। তাঁর মনে যে সন্দেহ উঁকিঝুঁকি মারছে এ বিষয়ে কথা তিনি জুলেখার সঙ্গে বলবেনই। মন ছটফট করছে যে কথা বলার জন্য সে কথা তিনি বলবেনই। তাছাড়া রেজার স্বভাব হচ্ছে কোনও কথা মনে এলে সে বিষয়ে কথা না বলে পারেন না। অন্যে কী ভাবল না ভাবল তার তোয়াক্কা করেন না। যদিও হয়তো পরে ওসব নিয়ে তাঁর মনে এক ধরনের অনুশোচনা হয়, ভেতরে ভেতরে জ্বলে পুড়ে মরেন, তবু যখন মনে হয় তখন অন্য কিছুই আর ভাবতে পারেন না।

এখনও তেমন হলো।

মনের ভেতর উঁকিঝুঁকি মারা কথাগুলো জুলেখাকে বলার জন্য তৈরি হয়ে গেলেন রেজা। জুলেখার কাছ থেকে যদি কোনও কথা বের করা যায়! যদি তাঁর সন্দেহের সত্যতা মেলে!

নিজের চেয়ারে নড়েচেড়ে গা এলিয়ে বসলেন রেজা। তোমাকে দুয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করব বুয়া?

জি, করেন।

ঠিকঠাক জবাব দিও। আমার সঙ্গে মিথ্যে বলো না।

রেজার কথা বোধহয় ভালো লাগল না জুলেখার। গলাটা থমথমে হলো তার। বলল, মিথ্যা কথা আমি বলি না ভাই। কাজের মানুষ হতে পারি, গরিব মানুষ হতে পারি কিন্তু মিথ্যা কথা বলি না।

জুলেখার কথায় একটু লজ্জা পেলেন রেজা। তবে সঙ্গে সঙ্গেই ম্যানেজ করলেন। বললেন, কথাটা এভাবে বলা আমার ঠিক হয়নি। তুমি কিছু মনে করো না।

জুলেখা চুপ করে রইল।

রেজা বললেন, তুমি আমাদের সঙ্গে আছ সাত-আট বছর ধরে। এতদিন একসঙ্গে থাকলে এমনিতেই মানুষ মানুষের আপন হয়ে যায়, নিজের লোক হয়ে যায়। তোমাকে আমি একেবারেই আমাদের নিজের লোক মনে করি। আপন মনে করি। এজন্যই এভাবে বলে ফেলেছি। আপন মানুষের সঙ্গে কি অত হিসাব করে কথা বলা যায়!

…(চলবে)

লেখক : বিশিষ্ট উপন্যাসিক ও প্রধান সম্পাদক কালের কণ্ঠ।

ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন :)