ই-পেপার

নিউজ স্ক্রল

মোঃ আব্দুর রাজ্জাক

পুলিশের কাজের সিংহভাগই হল জনগণ তথা কমিউনিটির সাথে মিথস্ক্রিয়া করা। সাধারণ মানের ব্যক্তিগত বিরোধ থেকে শুরু করে হত্যা মামলার তদন্ত পরিচালনা পর্যন্ত পুলিশ অফিসারদের মানুষের সাথে কথোপকথন করতে হয়। কারো কারো সাথে নিয়মিত সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে হয়। কাউকে আবার নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়। এসব ক্ষেত্রে সাধারণ জ্ঞানের প্রয়োগ থেকে শুরু করে পুলিশ অফিসারদের উচ্চতর প্রশিক্ষণও গ্রহণ করতে হয়। সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে পুলিশ অফিসারগণ নানাবিধ কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। আলোচ্য প্রবন্ধে আমরা সাক্ষাৎকারের একটি অত্যাধুনিক কৌশল নিয়ে আলোচনা করব।

অপরাধ তদন্ত ও সাক্ষাৎকার সংক্রান্ত সাহিত্যের পরিভাষায় এ কৌশলকে Cognitive Interview Technicque সংক্ষেপে CI বলা হয়। ‘Cognitive’ শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ জ্ঞানগত, জ্ঞানীয়, জ্ঞাননির্ভর, জ্ঞানভিত্তিক ইত্যাদি। কিন্তু এ কৌশলের প্রধান লক্ষই হল সংঘটিত অপরাধ ঘটার অনেক দিন পর কোন সাক্ষী বা ভিকটিমের কাছ থেকে সেই ঘটনার হুবহু বর্ণনা সংগ্রহ করা যেখানে সাক্ষীকে তার অতীত স্মৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে হয়। তাই এ কৌশলে তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ সাক্ষীর পূর্বের স্মৃতিকেই পুনরুদ্রেক করে তদন্তের স্বার্থে ব্যবহার করে। এমতাবস্থায়, ‘Cognitive’ শব্দটির প্রচলিত বাংলা প্রতিশব্দ যাই হোক, কৌশলের বাস্তবতার খাতিরে আমরা ‘Cognitive’ এর বাংলা পরিভাষা ‘স্মৃতিউদ্রেকী’ ও  সংক্ষেপে ইংরেজির মতো ‘সিআই’ লিখব।

সাধারণভাবে গৃহীত সাক্ষাৎকার কৌশলের সীমাবদ্ধতা ও কোন কোন ক্ষেত্রে অকার্যকারিতার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ  ১৯৮৪ সালে পুলিশ গবেষক গেইজেলম্যান, ফিসার ও তার সহকর্মীগণ স্মৃতিউদ্রেকী সাক্ষাৎকার কৌশল উদ্ভাবন করেন। সনাতনী সাক্ষাৎকার কৌশলে সাক্ষী বা ভিকটিমকে প্রথমে ঘটনার বিবরণ দিতে বলা হয়। এর পর কিছু প্রশ্নের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী তার দ্বন্দ্ব বা অস্পষ্ট বিষয়গুলোকে পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন। এ সাক্ষাৎকার হয় খুবই স্বল্পকালীন। এখানে সাক্ষী ভুলে যাওয়া বিষয়গুলো স্মরণ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় ও সহযোগিতা পান না। অন্যদিকে কোন কোন তথ্য তদন্তকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিংবা কোনটা অগুরুত্বপূর্ণ, সে নিয়ে তারা দ্বিধাদ্বন্ধে থাকে। ফলে সব তথ্য তদন্তকারীদের দিতে সংকোচবোধ করেন। অন্যদিকে যে তথ্য তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রশ্ন করে জানতে চান না সেগুলো তারা উপযাচক হয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন। স্বাভাবিকভাবেই সনাতনী সাক্ষাৎকারে ভিকটিম বা সাক্ষীর কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত কম তথ্য সংগৃহীত হয়। কিন্তু স্মৃতিউদ্রেকী সাক্ষাৎকারে তদন্তকারীগণ বিভিন্ন মনোবৈজ্ঞানিক ও সামাজিক কৌশলের মাধ্যমে সাক্ষীর স্মৃতিকে পুর্নজাগরিত করার চেষ্টা চালায় বলে তদন্তকারীগণ অপেক্ষাকৃত বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে সমর্থ হন। স্মৃতিউদ্রেকী সাক্ষাৎকার কৌশলটি চারটি স্মৃতি পুনরুদ্রেককারী নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।

মানব স্মৃতি সংক্রান্ত একাধিক গবেষণার ওপর ভিত্তি করে স্মৃতি উদ্রেকী সাক্ষাৎকার কৌশল বিকশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যে সময়ের সাথে সাথে মানুষের স্মৃতি লোপ পেয়ে থাকে। এর অর্থ হল, কোন ঘটনাবলী মানুষের স্মৃতিতে গৃহীত হওয়ার পর থেকে তা পুনরুদ্রেক করা পর্যন্ত যত বেশি সময় অতিবাহিত হবে মানুষ সেই স্মৃতি ততো কম সঠিকতায় স্মরণ করতে পারবে। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার অনেক পরে তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ যখন সাক্ষী বা ভিকটিমের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ প্রত্যাশা করেন তখনই স্মৃতি উদ্রেকী কৌশলের প্রয়োজন পড়ে।

মানুষের স্মৃতিতে তথ্য ধারণ, সংরক্ষণ ও তা পুনরুদ্রেককরণের ক্ষমতা সীমিত। অন্যদিকে মানব স্মৃতিতে কোন ঘটনার সংরক্ষণ পূর্বনির্ধারিত কিছু বিশেষ প্যাটার্নের মাধ্যমে ঘটে থাকে। এ প্যাটার্নগুলোকে স্কিমা (schemas) বা ক্রিপ্ট বলে। এ স্কিমা অনুসারে মানব স্মৃতিতে কোন ঘটনা যখন সংরক্ষিত (এনকোডিং) হয় তখন ঘটনার সকল তথ্য ভিডিও রেকডিং এর মতো তার স্মৃতিতে হুবহু গ্রন্থিত হয়না। আমরা যেমন কোন ঘটনার পকেট নোটবুকে বিশেষ কিছু বিষয় নোট নিয়ে পরে তার পূর্ণ বিবরণ তৈরি করি, আমাদের স্মৃতিও তেমনি মূল তথ্যগুলোই কেবল ধারণ করে। পরবর্তীতে সেগুলো আমাদের প্রত্যাশা, পূর্ব অভিজ্ঞতা, বিশ্বাস ইত্যাদির ফলে পূর্বে প্রস্তুতকৃত একটি ফর্মেটের মধ্যে ঢুকে শূন্যস্থান পূরণের আদলে সংরক্ষিত থাকে।

১৯৭৯ সালের একটি মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণায় একদল প্রশিক্ষণার্থীকে একটি ছোট গল্প পড়তে দেয়া হয়। গল্পের ঘটনা ছিল কোন খাবার হোটেলে গিয়ে খাবার খাওয়া সংক্রান্ত। এর পর গল্পের বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রশিক্ষণার্থীদের একটি শূন্যস্থান পূরণের পরীক্ষা নেয়া হয়। পরীক্ষায় দেখা যায় প্রশিক্ষণার্থীগণ খাবার হোটেলে যাওয়া, খাওয়া ও বিল পরিশোধ করা পর্যন্ত সব কিছুই পূরণ করেছেন। অথচ তাদের পঠিত গল্পে বিল পরিশোধ করার কোন প্রসঙ্গই ছিল না। এর কারণ হল, হোটেলে যাওয়া, খাওয়া ও বিল পরিশোধ করা একই ঘটনার অংশ বলে তাদের স্মৃতিতে যে পূর্ববর্তী ফর্মেট গ্রন্থিত ছিল, পরীক্ষায় তারা সেই পূর্ববর্তী ফর্মেটই পূরণ করেছিল মাত্র।

অর্থাৎ ঘটনার অনেক দিন পর মানুষ যখন সেই ঘটনার স্মৃতিচারণ করে তখন তারা ঘটনার বস্তুনিষ্ঠতার চেয়ে তাদের স্কিমাজনিত প্রত্যাশার বিষয়গুলোই বর্ণনা করতে উৎসাহিত হয়। এটা অনেক ক্ষেত্রে ঘটনার সাথে অসংগতিপূর্ণও হতে পারে। গবেষণায় এও প্রমাণিত হয়েছে যে মানুষের স্মৃতি থেকে পুরাতন ঘটনার বিবরণ পুনরুদ্রেক নির্ভর করে বিবরণ সংগ্রহকারী তার স্মৃতিতে কোন কৌশলে প্রবেশের চেষ্টা করছেন তার উপর।

স্মৃতিউদ্রেকী সাক্ষাৎকারের তাত্ত্বিক ভিত্তি

স্মৃতিউদ্রেকী সাক্ষাৎকার মূলত দুটি জ্ঞানতাত্বিক নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত, যথা- ১. এনকোডিং সুনির্দিষ্টতা নীতি (Encoding specificity principle) ও ২. স্মৃতির বহুমুখী প্রকাশ নীতি (Multi-component view of memory)। মানব স্মৃতিতে কোন ঘটনা যখন গৃহীত হয় তখন সেগুলো বিশেষ সংকেত বা এনকোডিং এর মাধ্যমে গ্রন্থিত হয়। এখানে ঐ সময়ের অনেক যোগসূত্র বা Cues বিশেষভাবে উপস্থিত থাকে। ইনডেল টুলভিং (Endel Tulving) এর এনকোডিং সুনির্দিষ্টতা নীতি অনুসারে, মানুষ কোন ঘটনা মনে রাখার ক্ষেত্রে যে যোগসূত্রগুলোকে আশ্রয় করে স্মৃতির সংকেতায়ন বা এনকোডিং করে, স্মৃতির পুনরুদ্রেক বা ঘটনা স্মরণ করার সময় সেই সব যোগসূত্রগুলোর অনুরূপ যোগসূত্র প্রস্তুত করা সম্ভব হলে স্মৃতির পুর্নজাগরণ সহজতর হয়।

অর্থাৎ স্মৃতি থেকে মানুষ যখন কোন ঘটনার বর্ণনা করার চেষ্টা করে, ঐ সময় যদি ঘটনাটি বাস্তবে যে পরিবেশ বা আবহে ঘটেছে সেই আবহ বা পরিবেশের অনুরূপ পরিবেশ প্রস্তুত করা সম্ভব হয়, মানুষের স্মৃতির পুনরুদ্রেক অপেক্ষকৃত বেশি কার্যকরী হবে। এর অর্থই হল, কোন প্রত্যক্ষদর্শীর পরবর্তী বর্ণনাকালের সাথে যদি অপরাধ সংগঠনের  কালিক প্রেক্ষিতের কোন মানসিক সংযোগ ঘটানো সম্ভব হয়, তবে, তিনি ঘটনাকে অধিকতর সঠিক ও বিস্তারিত বিবরণসহ স্মরণ করতে পারবেন। স্মৃতিউদ্রেকী সাক্ষাৎকার কৌশলের প্রথম দুটি কৌশল মূলত এ নীতির উপরই প্রতিষ্ঠিত। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীগণ সাক্ষাৎকারকালে সাক্ষীকে মূলত ঘটনার সময় যে পরিবেশ ছিল, তাদের মানসিকভাবে সে রকম পরিবেশের মধ্যে নিয়ে যাওয়ারই প্রচেষ্টা চালান।

স্মৃতির বহুমুখী প্রকাশ নীতি অনুসারে, মানব স্মৃতির পুনরুদ্ধার কোন নির্দিষ্ট ও রৈখিক পথে সংঘটিত হয় না। বরং এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। তাই অতীত কোন ঘটনার পুনরুদ্ধারের জন্য নানাবিধ পথ অবলম্বন করা দরকার। তবে যে পথেই ঘটনার স্মৃতি পুনরুদ্রেকের চেষ্টা করা হোক না কেন, সেগুলো মূল ঘটনার বিভিন্ন আঙ্গিক ও প্রেক্ষিত থেকে কিছু না কিছু তথ্য তুলে আনতে সহায়তা করবে। স্মৃতিউদ্রেকী সাক্ষাৎকারের পরবর্তী দুইটি কৌশল এ নীতির উপরই প্রতিষ্ঠিত।

স্মৃতিউদ্রেকী সাক্ষাৎকার কৌশলের মূল ধাপ চারটি, যথা- প্রেক্ষিত তথা পরিস্থিতির পুনর্গঠন, ঘটনার পরিপূর্ণ বর্ণনা সংগ্রহ, ঘটনা বিপরীত ক্রমে বা ভিন্ন স্থান থেকে আরম্ভপূর্বক বর্ণনা ও ঘটনার প্রেক্ষিত পরিবর্তন। এর বাইরেও কয়েকটি আনুসঙ্গিক কৌশলের আশ্রয় নিয়ে ঘটনার সামাজিক আবহ পুনর্বিবেচনার চেষ্টা করা হয়। বলাবাহুল্য,  সাক্ষাৎকার চলাকালে নিচে বর্ণিত ধাপগুলোর ক্রম রক্ষা করা জরুরি নয়। বাস্তব ক্ষেত্রে এগুলোর স্থান বদল হতে পারে। আবার অনেক তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রথম দুটো ধাপ ব্যবহার করেই তাদের প্রত্যাশিত তথ্যগুলো পেয়ে যান বলে পরবর্তী ধাপগুলো ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না। তবে একটি আদর্শ স্মৃতিউদ্রেকী সাক্ষাৎকার কৌশলে সবগুলো ধাপই ব্যবহার করা উচিৎ। এবার আসুন আমরা ধাপগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা ও প্রয়োগ কৌশল সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।

১. প্রেক্ষিত তথা পরিস্থিতির পুনর্গঠন 

এ পর্বে অপরাধ ঘটনা চলাকালীন যে পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিরাজ করত তার বাহ্যিক দিকগুলো বিবেচনায় নিয়ে একটি মানসিক অবস্থার পুনর্গঠনের জন্য সাক্ষী বা ভিকটিমকে অনুরোধ করা হয়। সাক্ষীকে মনে করতে বলা হয় ঘটনার সময় আবহাওয়া কেমন ছিল, আলোর উপস্থিতি কেমন ছিল, রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, মানুষ-জনের উপস্থিতি, এমনকি আশেপাশের প্রকৃতি বা বস্তুর গন্ধ, বর্ণ, শোভা ইত্যাদি কেমন ছিল। সাক্ষীকে আরো মনে করতে বলা হয়, ঐ সময় তার মানসিক অবস্থা কেমন ছিল, তিনি কিরূপ বোধ করছিলেন, ঘটনার প্রতি তিনি কিরূপ প্রতিক্রিয়া করেছিলেন। অন্যান্য ব্যক্তি, বস্তু বা অবস্থার প্রতি তার ব্যক্তিগত সাড়া কেমন ছিল ইত্যাদি বিষয়ও পুনর্বার স্মরণ করা জন্য অনুরোধ করা হয়। তুলভিং ও থমসনের (Tulving & Thomson, 1973) এনকোডিং সুনির্দিষ্টতা (encoding specificity) নীতি অনুসারে স্মরণযোগ্য কোন ঘটনার যোগসূত্র যদি পূর্বের এনকোডিংকৃত সুত্রের সাথে সুনির্দিষ্টভাবে মিলে যায় তবে তার কার্যকরিতা বৃদ্ধি পাবে। ঘটনা প্রত্যক্ষ করার সময়ের পারিপার্শ্বিকতা যদি ঘটনা স্মরণ করার সময় একই হয় তবে স্মরণ বা স্মৃতিউদ্রেকের পরিমাণ ও সঠিকতা উভয়ই বৃদ্ধি পায়।

বিষয়টি মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৭৫ সালে গোডেন ও বাডেললি কর্তৃক ১৮ জন ডুবুরীর উপর গবেষণা চালানো হয়। ডুবুরীদের অপ্রাসঙ্গিক একটি শব্দের তালিকা পড়ে শোনান তথা মনে রাখা ও স্মরণ করার পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। গবেষণায় চারটি অবস্থায় ডুবুরীদের মনে রাখা ও স্মরণ করার পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। অবস্থা চারটি ছিল, ১. সমুদ্র পৃষ্ঠে শব্দ শুনে মনে রাখা ও সমুদ্র পৃষ্ঠেই স্মরণের পরীক্ষা দেয়া, ২. সমুদ্র পৃষ্ঠে শব্দ শেখা ও পানির তলদেখে গিয়ে স্মরণের পরীক্ষা দেয়া, ৩. পানির নিচে গিয়ে শব্দ শুনে মনে রাখা ও পানির নিচেই স্মরণের পরীক্ষা দেয়া, ৩। পানির নিচে শব্দ শুনে মনে রাখা ও পানির উপরে এসে তা স্মরণের পরীক্ষা দেয়া। সমুদ্রের নিচের অবস্থাটি বিশেষ ব্যবস্থায় ২০ ফুট পানির নিচে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থার মধ্যে ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে প্রায় ৪ দিন ধরে সম্পন্ন করা হয়েছিল। পরীক্ষায় দেখা যায়, যেসব শব্দ তারা যে অবস্থায় (পানির উপরে কিংবা নিচে) মুখস্ত করেছিল, একই পরিবেশে পরীক্ষায় তাদের সেই শব্দগুলো স্মরণ করার হার ৫০% বেড়ে গিয়েছিল। আবার শব্দ শেখা ও স্মরণের প্রেক্ষিতের ভিন্নতায় (পানির উপরে মুখস্ত করা শব্দগুলো পানির নিচে গিয়ে স্মরণ করা ও তার বিপরীত অবস্থা) তাদের স্মরণ শক্তি ৪০% কমে গিয়েছিল।

প্রেক্ষিতের বাহ্যিক দিকের সাথে সাথে একটি মানসিক দিকও রয়েছে। যেমন, সুখের সময় মানুষ সুখস্মৃতি ও দুঃখের সময় মানুষ দুঃখের স্মৃতিগুলো বেশি সঠিকতায় স্মরণ করতে পারে। তাই সাক্ষাৎকার গ্রহণকালীন সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী কর্মকর্তা সাক্ষী বা ভিকটিমের প্রকৃত ঘটনার সময় ভিকটিম যে কষ্ট পেয়েছেন, যা মানসিক অবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন তার মত আবহ তৈরি করতে পারলে ভিকটিমের স্মরণের কার্যকরিতা বৃদ্ধি পাবে।

ঘটনার প্রেক্ষিত পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে আরো কিছু ব্যবহারিক উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। উপন্যাস, নাটক বা চলচ্চিত্রের অনেক কাহিনীতে দেখা যায় যে নায়ক শারিরীক বা মানসিকভাবে আঘাত পেয়ে তার স্মরণ শক্তি হারিয়ে ফেলে। এ সময় চিকিৎসকগণ তার স্মরণ শক্তি ফিরে আনার জন্য ঘটনাস্থলে নিয়ে যেতে বলেন। অনেক সময় নায়ক হয়তো কোন আঘাতের ফলে স্মরণ শক্তি হারিয়ে ফেলল। কিন্তু পরবর্তীতে আবার একই রকম আঘাত পেয়ে স্মরণ শক্তি ফেরত পেল। নাটক বা চলচ্চিত্রে ঘটনার আতিসয্য থাকলেও বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।

২. ঘটনার পূর্ণ বিবরণ সংগ্রহ

এ পর্বে তদন্তকারী কর্মকর্তা সাক্ষী বা ভিকটিমকে তার জানা মতে পুরো ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিতে বলবেন। বিবরণের মধ্যে তার মানসিক অবস্থা থেকে শুরু করে পারিপার্শ্বিক অবস্থার বিবরণ থাকবে। অনেক সময় সাক্ষী মনে করতে পারে, কোন ঘটনা বা ঘটনার দিকটি হয়তো খুবই মামুলি কিংবা এটা তদন্তের সাথে প্রাসঙ্গিক নয়। হতে পারে বিষয়টি তার বিবেচনায় অনেক বেশি ব্যক্তিগত। কিন্তু সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সাক্ষীকে খোলাখুলি বলে দিবেন, তার কোন বর্ণনাই গুরুত্বহীন নয়, কোন ঘটনাই অপ্রাসঙ্গিক নয়। তাই তার সম্পূর্ণ বিবরণ দেয়া উচিৎ। এমনকি কোন বিষয় যদি তার পূর্ববর্তী বা পরবর্তী বর্ণনার সাথে বিপরীত হয়, সেক্ষেত্রেও কোন সমস্যা নেই। কারণ, এখন যা অপ্রাসঙ্গিক বা পরষ্পর বিরোধী মনে হচ্ছে, অচিরেই তা হয়তো প্রাসঙ্গিক হবে বা অতিরিক্ত তথ্যপ্রাপ্তিতে বৈপরীত্যের ব্যাখ্যা মিলবে কিংবা অন্যান্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য মিলবে।

ঘটনার খুঁটিনাটিসহ পূর্ণাঙ্গ বিবরণ কিভাবে তদন্তের জট খুলে দিতে পারে তার একটি বর্ণনা আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ড্রাগ এজেন্সির একটি তদন্ত থেকে অনুমান করা যাবে। এজেন্সির একজন গুপ্তচর মধ্য আমেরিকার একটি মাদক চোরাচালানকারী চক্রের সাথে একটি বিমান অবতরণস্থলে অল্প সময়ের জন্য অবস্থান করেছিলেন। কিন্তু সেই বিমান অবতরণস্থলটি আসলে কোথায় ছিল গুপ্তচর তা সঠিকভাবে বলতে পারছিল না। তদন্তকারীদের কাছে ঘটনাস্থলের খুঁটিনাটি বর্ণনার সময় গুপ্তচর স্মরণ করতে পারল যে ঐ অবতরণস্থলে একটি আম বাগান ছিল। বাগান থেকে তিনি একটি আমও খেয়েছিলেন। এরপর তদন্তকারীগণ তাকে আম সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার প্রশ্ন করতে লাগলেন। তখন তিনি আমের রং, স্বাদ, গন্ধ ইত্যাদি বর্ণনা করতে লাগলেন। এভাবে তার শরীরের অন্যান্য সংবেদী অংগগুলো সক্রিয় হওয়ায় তিনি সেই বিমান অবতরণস্থলের নিখুঁত বর্ণনা দিলেন, যার প্রেক্ষিতে তদনন্তকারী কর্মকর্তাগণ বিমান অবতরণস্থণ সঠিকভাবে শনাক্ত করে মাদক গড ফাদারদের গ্রেফতারে সমর্থ হয়েছিলেন।

৩. ঘটনাকে ভিন্ন ক্রমে বর্ণনা করা

মানুষ কোন অতীত ঘটনা স্মরণ করতে গেলে তা সাধারণত প্রথম থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত বলার চেষ্টা করে। ঘটনার সময়ের ক্রম ঘড়ির কাঁটার সাথে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সূর্য ওঠার পূর্বে কোন ঘটনা শুরু হলে বর্ণনা সূর্য ওঠার দিকে গড়ায়। এর পর সকাল হয়, সকাল ক্রমে গড়িয়ে দুপুর হয়, দুপুর গড়িয়ে বিকাল, সন্ধ্যা ও পরে রাত হয়। কিন্তু স্মৃতিউদ্রেকী সাক্ষাৎকারের এ পর্যায়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা ঘটনাকে বিভিন্ন ক্রমে বর্ণনার জন্য উৎসাহিত করে। সাক্ষীকে হয়তো বলা হবে, এবার ঘটনাটি আপনি শেষ থেকে শুরু করে আরম্ভ বা সূচনা পর্যন্ত বলুন। আবার এমনও হতে পারে যে ঘটনার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বা ভীতিকর অংশটুকু দিয়ে আপনার বর্ণনা শুরু করুন। ঘটনাকে এভাবে ভিন্ন ভিন্ন ক্রমে শুরু করে শেষ করা হলে তা সাক্ষীকে একটি নতুন প্রেক্ষিত উপহার দিবে যার ফলে সাক্ষী ভুলে যাওয়া অনেক তথ্য স্মৃতিতে পুনর্জীবীত করতে পারবেন।

৪. একাধিক প্রেক্ষিতে ঘটনার বর্ণনা

এ পর্বে ভিকটিম বা সাক্ষীকে ঘটনাটিকে তার অবস্থান থেকে সরে গিয়ে ভিন্ন অবস্থান বা প্রেক্ষিত থেকে বিবেচনার জন্য অনুরোধ করা হয়। যদি সাক্ষী ভিকটিম না হন তাকে নিজেকে ভিকটিমের অবস্থানে বসিয়ে ঘটনা অনুধাবনের চেষ্টা করতে বলা হয়। এমনও হতে পারে কোন সাক্ষীকে বলা হবে, আপনি জনাব রহিম। ধরুন আপনি রহিম নন, আপনি করিম। এখন বলুন আপনি সাক্ষী না হয়ে ভিকটিম হলে কিংবা রহিম না হয়ে করিম হলে ঘটনাটি কিভাবে দেখতেন। প্রেক্ষিত পরিবর্তনের তাত্ত্বিক অনুমান হল,  প্রেক্ষিত পরিবর্তিত হলে সাক্ষীর স্মৃতির বর্ণনাতেও পরিবর্তন আসবে এবং নুতন প্রেক্ষিত থেকে ঘটনা অনুধাবন করে সাক্ষী অতিরিক্ত তথ্য স্মৃতি থেকে পুনরুদ্রেক করতে পারবেন। অধিকন্তু প্রেক্ষিত পরিবর্তন সাক্ষীকে ঘটনা পুনরুদ্রেকের ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক পথের সন্ধান দিবে যার ফলে অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ হবে।

আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে লজএন্জেলেস পুলিশ বিভাগের তদন্তকারীগণ একটি ধর্ষণের ঘটনায় সনাতনী কাঠামোবদ্ধ সাক্ষাৎকারে ভিকটিমের কাছ থেকে পর্যাপ্ত তথ্য উদঘাটন করতে না পারায় তার উপর স্মৃতিউদ্রেকী সাক্ষাৎকার কৌশল প্রয়োগ করেন। ঘটনার ক্রম পরিবর্তণ ও ভিন্নতর প্রেক্ষিত ব্যবহার করে তারা সফল হন।

আনুসঙ্গিক অতিরিক্ত কৌশল

উপরিউক্ত চারটি প্রধান কৌশলের বাইরেও সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীগণ আরো কিছু বিশেষ কৌশল প্রয়োগ করে অতিরিক্ত তথ্য উদঘাটন করতে পারেন। ওগুলো হতে পারে নিম্নরূপ-

১. বাহ্যিক অবয়ব:  অভিযুক্ত কি আপনার কাছে অন্য কোন ব্যক্তির নাম বা প্রসঙ্গ বলেছিল? যদি কোন ব্যক্তির কথা বলা হয়ে থাকে, স্মরণ করুন কেন বলেছিল। অভিযুক্তের চেহারায় কি বিশেষ কোন চিহ্ন ছিল কিংবা তার কাপড় চোপড় কি মনে রাখার মতো কিছু ছিল?

২. নাম নেয়াঃ আপনার যদি মনে হয় ঘটনার সময় কেউ কোন ব্যক্তির নাম উচ্চারণ করেছিল বা আপনি কোন নাম শুনেছিলেন, তাহলে, সেই নামটি স্মরণ করার চেষ্টা করুন। পুরো নাম মনে না থাকলে প্রথম অক্ষরটি মনে করুন, প্রথম অক্ষর না হলে যে কোন অংশ মনে করুন। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী বলতে পারেন, এ দিয়ে শুরু ছিল কি?, খ দিয়ে শুরু ছিল কি? এভাবে গোটা বর্ণমালা দিয়ে চেষ্টা করার জন্য সাক্ষীকে উদ্বুদ্ধ করবেন।

৩. সংখ্যা স্মরণ করাঃ ঘটনার সময় কি কোন সংখ্যা বা নম্বর কেউ বলেছিল? তাহলে সংখ্যাটি কি ছিল? কত অংকের ছিল সংখ্যাটি? সেখানে কি কোন বর্ণ ছিল? এটা কি ক্রমিক সংখ্যা ছিল? এটা কি জোড় ছিল, না, বেজোড়?

৪. বক্তব্য বা কথার বৈশিষ্ট্যাবলীঃ ঘটনাস্থলে শোনা কোন কণ্ঠ কি আপনার পরিচিত মনে হয়েছিল? কণ্ঠস্বর কি অন্য কারো কণ্ঠস্বরের মতো শোনা গিয়েছিল? যদি পরিচিত মনে হয়, কেন সেটা হয়েছিল? কণ্ঠস্বরের মধ্যে কি অস্বাভাবিক কিছু ছিল?

৫. কথোপকথনঃ ঘটনাস্থলে অন্য কারো সাথে কি আপনার কথাবার্তা হয়েছিল? আপনার কথায় অন্যরা (অপরাধী বা অন্যরা) কি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল? তাদের কথার মধ্যে কি বিশেষ কোন শব্দ বা বাক্যাংশ ছিল যা আপনার কাছে অস্বাভাবিক বা বিদঘুটে মনে হয়েছিল?

স্মৃতি উদ্রেকী সাক্ষাৎকার কৌশলের ব্যবহারিক প্রয়োগ

স্মৃতিউদ্রেকী সাক্ষাৎকার কৌশল (CI) জ্ঞাননির্ভর মনোবিজ্ঞানের সুনির্দিষ্ট তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। তাই এটি কেবল জনশ্রুতি বা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়, পরীক্ষাগার ও বাস্তব কর্মক্ষেত্রেও এ নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ রয়েছে। অপরাধের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে একটি উত্তম চর্চা হিসেবে এ পদ্ধতি নিয়ে গবেষণাগার ও মাঠ পর্যায়ে আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশগুলোতে এখন পর্যন্ত শতাধিক গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। এসব গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে প্রচলিত কাঠামোবদ্ধ সাক্ষাৎকারের চেয়ে স্মৃতিউদ্রেকী সাক্ষাৎকার কৌশল গড়ে ২৫%-৫০% পর্যন্ত বেশি সঠিক তথ্য সংগৃহ করতে সক্ষম।                 

গবেষণাগারের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের নিরীক্ষার বাইরেও পুলিশ অফিসারদের ব্যবহারিক কর্মক্ষেত্রে এ নিয়ে গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। ১৯৮৯ সালে আমেরিকার ফ্লোরিডা অংগরাজ্যের মেট্রো-ডেইড পুলিশ বিভাগের ১৬ জন অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক পরিচালিত ছিনতাই ও দস্যুতার ঘটনার ভিকটিম ও সাক্ষীদের ভিডিওকৃত সাক্ষাৎকার পর্যালোচনা করে একদল গবেষক এর সত্যতা পেয়েছিলেন। সাক্ষাৎকার পর্যালোচনার ক্ষেত্রে তদন্তকারী তথা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদের নানা দলে বিভক্ত করা হয়। একটি দলে বিবেচনা করা হয় ঐ সব তদন্তকারীদের যারা সাক্ষাৎকার গ্রহণের পূর্বে স্মৃতিউদ্রেকী সাক্ষাৎকার কৌশলের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেননি। অন্য দলে নেয়া হয় এ কৌশলের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী তদন্তকারী কর্মকর্তাদের। পর্যালোচনায় দেখা যায়, যে সকল তদন্তকারী কর্মকর্তা সাক্ষাৎকার গ্রহণের পূর্বে স্মৃতিউদ্রেকী সাক্ষাৎকার কৌশলের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন তারা প্রশিক্ষণহীন তদন্তকারীদের চেয়ে ৬৩% বেশি তথ্য সংগ্রহে সমর্থ হয়েছিলেন। যে সকল তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল, তাদের প্রশিক্ষণের পূর্বে ও প্রশিক্ষণ পরবর্তীকালে পরিচালিত সাক্ষাৎকারগুলোর মধ্যেও তুলনা করা হয়েছিল। এতে দেখা গিয়েছিল ঐসব তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রশিক্ষণের পূর্বের সাক্ষাৎকারগুলোর চেয়ে প্রশিক্ষণপরবর্তী সাক্ষাৎকারগুলোতে ৪৮% বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

১৯৮৪ সালে স্মৃতিউদ্রেকী সাক্ষাৎকার কৌশলের উদ্ভব হয়েছিল মূলত প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ও ভিকটিমদের কাছ থেকে সঠিক ও পর্যাপ্ত তথ্য আদায়ের কার্যকর পন্থা হিসেবে। প্রবর্তনের পর থেকে এ কৌশলে নানা পরিবর্তন এনে একে পুলিশ অফিসারদের জন্য আরো বেশি ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়েছে। এতে সন্নিবেশিত হয়েছে নতুন নতুন উপাদান। সম্প্রতি স্মৃতিউদ্রেকী সাক্ষাৎকার কৌশল অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হচ্ছে। যেসব অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের সাথে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে কিন্তু ঘটনার দীর্ঘ দিনপর জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হয়, তাদের পুরাতন স্মৃতি জাগিয়ে তুলে ঘটনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য উদঘাটনের জন্য স্মৃতিউদ্রেকী সাক্ষাৎকার বা জিজ্ঞাসাবাদ কৌশল বেশ উপযোগী বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।

বাংলাদেশের পুলিশ বিভাগে সাক্ষাৎকার ও জিজ্ঞাসাবাদ পরিচালনার উপর তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জন্য নিবেদিত কোন নিয়মিত কোর্স নেই। অনেক সময় বিচ্ছিন্নভাবে কোন কোন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে এ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হলেও সেগুলোর কার্যকারিতা সম্পর্কে কোন তথ্য উপাত্ত নেই। কিছু সংখ্যক পুলিশ অফিসার, বিশেষ করে ঊর্ধ্বতন কতিপয় পুলিশ অফিসার এ বিষয়ে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলেও তারা সেগুলো কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগের সুযোগ পান না বললেই চলে।

ফৌজদারি মামলার আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয় বাদী ও সাক্ষীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বাদী থেকে শুরু করে পেশাদার অপরাধী পর্যন্ত সবারই ঘটনার উপর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা জরুরি। সাক্ষাৎকার কেবল অপরাধ উদঘাটনই নয়, আদালতে অপরাধ প্রমাণ করার জন্যও জরুরি। বাদী বা সাক্ষীর সাক্ষাৎকার ও রেকর্ড প্রক্রিয়া যথযথ না হলে আদালতে সাক্ষীর জবানবন্দী মূল্যহীন হয়ে পড়ে। স্মৃতিউদ্রেকী সাক্ষাৎকার কৌশল এ ক্ষেত্রে একটি বড় রক্ষা কবজ হতে পারে।

লেখক : এআইজি (পিঅ্যান্ডআর), পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স।

ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন :)

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x